আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং
মুনজের আহমদ চৌধুরী :: আজিজুর রহমানের মতো নেতার কবরের ভেজা মাটি এখনো শুকায়নি। তাঁর মৃত্যুর চারদিন না পেরুতেই মৌলভীবাজার জেলা পরিষদে অমুক ভাইকে মনোনীত দেখতে চাই, তমুক চাচাকে দেখতে চাই...বলে মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী ফেসবুকে ছবি ছাড়াছাড়ির প্রতিযোগীতা শুরু করেছেন।
আজিজুর রহমান মৌলভীবাজার আওয়ামী লীগের এক বটবৃক্ষ। একজীবনে মানুষটা আওয়ামী লীগ ছাড়া সংসার, ব্যবসা বানিজ্য কোন কিছুই করেন নি। পশ্চাশ বছরের বেশি সময় সক্রিয় রাজনীতি করেছেন। দলকে দুহাতে নেতা গড়ে দিয়ে গেছেন। তাঁর ছায়ার নীচে আজকের বহু এমপি মন্ত্রীর রাজনৈতিক জন্ম, বেড়ে উঠা। অথচ লজ্জার মাথা খেয়ে তাঁরই হাতে গড়া নেতারাই মৃত্যুর চারদিন না পেরুতেই তার সর্বশেষ পদ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদটি কাড়াকাড়িতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।
প্রয়াত নেতার জন্য ভালবাসার,স্মৃতির সামিয়ানা ছিঁড়ে সেখানে উন্মুখ হয়েছে প্রয়াত নেতার চেয়ারম্যানের পদটি নিয়ে নানা সমীকরন। অন্তত; চেয়ারটির প্রত্যাশী কিছু নেতার সমর্থকদের আচরণ তাই জানান দিচ্ছে। ফেসবুকের দেয়াল নেতাদের ভাই ভাতিজা, অনুসারীরা ছবি ছাপাছাপিতে সয়লাব।
দুই. জেলা পরিষদের গত নির্বাচনে সরাসরি জেলার জনপ্রতিনিধিদের ভোটে জয়ী হয়ে উঠে আসতে কী লড়াইটাই না করতে হয়েছিল বর্ষীয়ান এই জননেতাকে। দলের প্রার্থী থাকার পরও দলের ভেতরে বাইরে অনেকে একটা ভোটের দাম এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে একটা ভোটের বিনিময়ে একটা ব্রান্ড নিউ মোটর সাইকেলে তুলেছিলেন। অন্য জায়গার মতো মৌলভীবাজারে এখনো ভোটে কালো টাকা ছড়াছড়ি হয় না। মৌলভীবাজারীর সাদা টাকাই প্রচুর। কেউ কেউ বিদেশে বাড়ী ঘর বেঁচে এনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে বসে সন্মান কেনার জুয়ায় ধরেছিলেন। পারেন নি। মৌলভীবাজারের মতো ছোট জেলায় অন্তত সাত কোটি টাকাকে হারিয়ে আজিজুর রহমান নির্বাচিত হয়েছিলেন। জেলার জনপ্রতিনিধিরা যে টাকার কাছে ভোট বিক্রি করেন নি তা প্রমান করেই আজিজুর রহমান নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনের একাধিক প্রতিদ্বন্দীও এখন আজিজুর রহমানের মৃত্যুর পরই তাঁর শুন্য পদটির দাবিদার! ধরনীও বুঝি রাজনীতিজীবিদের ক্ষমতার চেয়ার ঘিরে ইত্যকার প্রতিযোগীতায় দ্বিধাগ্রস্থ হয়,লজ্জিত চোখে তাদের কীর্তি দ্যাখে! এই আজিজুর রহমান ৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে বানানো এমপি। এরপর মৌলভীবাজারের মানুষ ভোট দিয়ে এম সাইফুর রহমানের মতো উন্নয়নের রাজনীতির রূপকারকে হারিয়েও তাকে এমপি বানিয়েছিল ভালবেসে। তিনবারের এমপি। শেখ হাসিনা তাকে হুইপ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। সেসব নাই বা বলি, লেখার দৈর্ঘ্য বাড়বে। প্রয়াত আজিজুর রহমান সৈয়দ মহসীন আলীর মতো সরাসরি রক্তের উত্তরাধীকার রেখে যাননি। মহসীন আলীর মৃত্যুর কয়েক বছর পেরিয়েছে। জেলার কোথাও সৈয়দ মহসীন আলীর নামে নুন্যতম একটা স্থাপনার নামও নেই। আমাদের গুনী সন্তানদের স্মৃতির প্রতি এভাবেই বিস্মৃতির দেয়াল তুলে প্রজন্মকে ভুলে যাওয়া শেখাচ্ছেন আমাদের বর্তমানরা।
তিন. শুন্য হওয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদটিতে সরকার তিন রকমের সিদ্বান্ত দিতে পারে। শুন্য আসনে প্রথমে প্যানেল চেয়ারম্যানদের একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদে আগামী সপ্তাহে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় দায়িত্ব দেবে। পরে এক বছর বাকী মেয়াদের মধ্যে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন বা চট্রগ্রামের মতো বাইরে থেকে কোন রাজনৈতিক নেতাকে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত করা হতে পারে। এর বাইরে সরকার চাইলে প্রশাসনের কাউকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেবার সুযোগ রয়েছে। যদিও দলের অভ্যন্তরে এরই মধ্যে পদটির অন্তত পাঁচ পদপ্রত্যাশী সক্রিয় হওয়ায় প্রশাসন থেকে কাউকে দায়িত্ব দেবার সুযোগ ক্ষীন। চট্রগ্রাম সিটির মতো মৌলভীবাজারেও জেলা পরিষদে চেয়ারম্যানের শুন্যপদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রশাসক পদে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। তাদের মধ্যে দলের নেতাদের মধ্যে তিনজনের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে বেশি। তাদের একজন মিছবাউর রহমান। জেলা ছাত্রলীগ যুবলীগের সাবেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র, যুবলীগের রাজনীতি করে আসা রাজনীতিবিদ। বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এই মুহুর্তে সারা জেলায় সাত উপজেলায় দলের কমিটিগুলোতে তার নিয়ন্ত্রন ও কর্মী বাহিনী রয়েছে। তুমুল কৌশলী এক রাজনীতিবিদ। রাজনীতি যদি মেধার খেলা হয়, তাহলে এই মুহুর্তে জেলার সব দল নির্বিশেষে একজন মেধাবী রাজনীতিবিদের নাম মিছবাউর রহমান। রাজনীতিতে কোন সময়ে কোন পদক্ষেপটি নিতে হয়, সেটা তিনি জানেন। ছাত্রলীগ, যুবলীগের পর সর্বশেষ জেলা আওয়ামী লীগে প্রতিদ্বন্দীতার তীব্রতার মধ্যেও সাধারণ সম্পাদক হতে পেরে তিনি নিজের সে তীক্ষতার প্রমান রেখেছেন। এরপর গড়েছেন বিশাল কর্মীবলয়। আরেকজন সৈয়দ মহসীন আলীর স্ত্রী সৈয়দা সায়রা মহসীন। মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সৈয়দ মহসীন আলীর আকস্মিক মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা তাঁকে উপনির্বাচনে এমপি বানিয়েছিলেন। দলীয় রাজনীতিতে কৌশলের খেলায় বার বার মার খাওয়া মানুষটি এমপি গিরি ধরে রাখতে পারেন নি। দলে কোন পদও নেই তার। গ্রুপিংগের রাজনীতিতে সৈয়দ মহসীন আলীর হাতে গড়া বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতাই নেতার মৃত্যুর পর তার বলয় ছেড়ে ক্ষমতার নতুন বলয়ে ভীড়ে গেছেন। কিন্তু, সারা জেলায় বিশেষত সদর রাজনগরে সৈয়দ মহসীন আলীর দলের ভেতরে বাইরে একনিষ্ট অনুসারী সমর্থক,কর্মীদের বলয় আছে। সৈয়দ মহসীন আলী খুব সাধারণ মানুষের নেতা ছিলেন। তার মাঠের নেতাকর্মীরাও সাধারন মানুষ। তাদের অনেকের ফেসবুকে নেতার জন্য গুনকীর্তন লেখার সংস্কৃতিতে দক্ষতা নেই। অনেকে পদবি ধারীদের বিরাগভাজন হবার ভয়ে নিক্রিয়। কিন্তু, সেই মানুষগুলি সৈয়দ মহসীন আলীর অবর্তমানে সৈয়দা সায়রা মহসীনকেই তার রাজনৈতিক উত্তরসুরী হিসেবে মানেন। সৈয়দা সায়রা মহসীনও সাধারণ জনতা বান্ধব একজন মানুষ। খুব সাধারণ খেটে খাওয়া একজন মানুষও তিনি এমপি থাকাবস্থায় তাঁর রান্নাঘরে গিয়ে ঢুকে নিজের সমস্যার কথা এমপিকে বলতে পারতেন। কোন দম্ভ, অহংকার ছিল না সাবেক এই এমপির। সৈয়দ মহসীন আলীর উদারতার রাজনীতির সৌন্দর্যটুকু মানুষটির মধ্যে প্রবলভাবে উপস্থিত। আরেকজন হলেন মুহিবুর রহমান তরফদার। জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম আলোচনায় এসেছে রাজনীতিতে,বয়সে তিনি সবার মুরব্বী। জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক,বর্তমান সিনিত্তর সহ সভাপতি। ছাত্রলীগ যুবলীগে মাঠ পর্যায়ে রাজনীতি করে আসা আওয়ামী লীগ অন্তপ্রান নিবেদিতপ্রান এক নেতা। বড় কোন নেতার আনুকুল্যে বা ছায়ায় মুহিবুর রহমান তরফদারের রাজনৈতিক উত্থান বা পথচলা নয়। তৃনমুল থেকে উঠে ধাপে ধাপে রাজনীতি করে এসেছেন চার দশকের বেশি সময়। ছয় ফুট লম্বা দীর্ঘদেহী এই মানুষটি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কঠিন দুঃসময়ে মৌলভীবাজারে আওয়ামী রাজনীতির এক ভ্যানগার্ড হয়ে উঠেন। ছাত্রলীগ যুবলীগের দুঃসময়ের এই কান্ডারী কখনো ছাত্রলীগ যুবলীগে সভাপতি সাধারন সম্পাদক হতে পারেন নি। তাঁর সমসাময়িক, পেছনের সারির অনেকেই সাংসদ, মন্ত্রী হলেও ইউনিয়নে, উপজেলায় চেয়ারম্যানও তাকে হতে দেয়া হয় নি। যোগ্য মানুষদের অবস্থানে যেতে না দিতে অযোগ্যরা শত্রুর শত্রু হিসেবে বন্ধুতা গড়ে একাট্টা হয়। বার বার দলীয় প্রার্থী হয়ে এলেও দলের মানুষদের বিরোধীতায় তাকে বার বার হারতে হয়েছে। কৌশলের খেলায় তার জয় কেড়ে নেয়া হয়েছে বার বার। তারপরও দল যখনই দুঃসময়ে; তখন মৌলভীবাজার জেলা সদরে আজিজুর রহমান বা সৈয়দ মহসীন পর কর্মীদের ভরসার তৃতীয় নেতা বরাবর মুহিবুর রহমান তরফদারই ছিলেন। ইতিহাস তার স্বাক্ষী। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি পরিবহন ব্যবসা করেন,তবু এখনো শহরে ভাড়া করা খুব সাধারণ একটা বাসায় থাকেন। বার বার দলের কর্মীদের দুঃসময়ে শারীরিক আর্থিকভাবে আশ্রয় হয়ে উঠা পরীক্ষিত এই জননেতা নিজের ভাড়া বাসাতেও কর্মীদের দুঃসময়ে আশ্রয় দিয়েছেন। তার মতোন সাহসী, পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে উঠে আসা দুঃসময়ের ত্যাগী অথচ মুল্যায়ন বঞ্চিত বর্ষীয়ান নেতা মৌলভীবাজার জেলায় আওয়ামী রাজনীতিতে এখন আর দ্বিতীয়জন নেই। দলের দীর্ঘ সুদিনেও মুল্যায়ন বঞ্চিত এ মানুষটি বিচার সালিশে বা বলয়ের রাজনীতিতেও তার ক্লিনম্যান ইমেজ নিয়ে শুভ্র সাদার পরিচ্ছন্নতার সৌন্দর্যের দ্যুতি ছড়িয়েই এখনো রাজনীতি করছেন। প্রয়াত আজিজুর রহমান বিয়ে-সংসার না করায় সঙ্গত কারনেই কোন রক্তের রাজনৈতিক উত্তরাধীকার নামের বোঝা বা সম্পদ;কোনটাই অনুসারীদের কাঁধে রেখে যান নি। মুহিবুর রহমান তরফদারের শিক্ষিত, মেধাবী পুত্র দেশে বেসরকারী পর্যায়ে শিক্ষকতা করলেও তিনি তার কোন সন্তানকে রাজনীতিতে টেনে আনেন নি। আজিজুর রহমান স্বাধীনতার পর আরো তিনবার এমপি হলেও সরকারের কাছ থেকে ট্যাক্স ফ্রি গাড়ী, ঢাকায় জমি কিছুই নেননি। মুহিবুর রহমান তরফদারও পৈত্রিকসুত্রে পাওয়া ছাড়া নিজে কোন সম্পদ গড়েননি ।এখনো চড়েন টয়োটা ই এইটটি মডেলের চল্লিশ বছরের পুরনো মডেলের ভাঙাচোরা বিবর্ন গাড়িতে। দাম হবে বড়জোড় ষাট সত্তর হাজার টাকা। অথচ, এই মৌলভীবাজারেই তাঁর দশ স্থর নিচের কর্মীও শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে বিশ ত্রিশ লাখ টাকার গাড়ির মালিক হয়েছেন, এমন উদাহরন অসংখ্য। একটা খুব সত্য ঘটনা বলি। এ ঘটনার শত শত সাক্ষী এখনো মৌলভীবাজারে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। ৯০ এ বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরের ঘটনা। মৌলভীবাজারের রাজনীতির সম্প্রীতির ইতিহাসে সেদিন ঘটেছিল এক লজ্জাজনক দুর্ঘটনা। ক্ষমতাশীন যুবদল ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী চৌমুহনাস্থ আওয়ামী লীগ কার্যালয় সশস্ত্র ঘেরাও করে রাখেন। সেই মুহুর্তে সেখানে আটকা পড়েছিলেন সংসদে আওয়ামীলীগের হুইপ ও স্থানীয় এমপি আজিজুর রহমান। ছোট শহরে সঙ্গে সঙ্গে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে। খবর অনেকেই পান। কিন্তু, বাস্তবতা হলো সেইদিন মুহিবুর রহমান তরফদারই নিজের লাইসেন্স করা দু'নলা বন্দুকটি নিয়ে একা বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন চৌমুহনাস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। আজিজুর রহমানকে দলীয় কার্যালয় থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। ব্যাক্তি মুহিবুর রহমান তরফদার আজিজুর রহমানের একান্ত রাজনৈতিক ছায়ায় পালিত হওয়া অনুসারী নেতা ছিলেন না। তরফদার সেদিন এগিয়ে গিয়েছিলেন তার দলের জন্য, তার আদর্শের সিনিত্তর নেতার জন্য। সেই বীরত্ব দেখাবার মতো একজন অকুতোভয় মুহিবুর রহমান তরফদারই সেদিন ছিলেন, এখনো তিনি সামনে, প্রকাশ্যে কথা বলেন। পেছনে কথা বলা নেপথ্যের গুটিবাজি মানুষটাকে স্পর্শ করতে পারেনি।বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে মৌলভীবাজার সদর সহ এ জনপদের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তিনি আওয়ামী লীগের সংগঠন গুছিয়েছেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে প্রত্যেকটা গ্রামের প্রত্যেকটি পরিবারের কারো না কারো সাথে তার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ এখনো আছে। জেলাজুড়ে সব মহলে গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে তিনি সক্রিয় রাজনীতি, সামাজিকতায়। সেই ঘটনার প্রায় ত্রিশ বছর পর আজিজুর রহমানের মৃত্যুজনিত কারনে শুন্য হয়েছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নামের রাজনৈতিক পদটি। সেই রাজনৈতিক শুন্যপদে দলে ত্যাগ, যোগ্যতার বিবেচনায়, সত্যের বাটখারায়, অতীত কর্মকান্ডের মানদন্ডে মুল্যায়নের প্রশ্নে মুহিবুর রহমান তরফদারের নামটিও আলোচিত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, পরবর্তী নির্বাচনের আগে মেয়াদের এক বছর অবশিষ্ট সময়ে মুল্যায়নবঞ্চিত ও দুর্দিনের কান্ডারী এই নেতা চেয়ারম্যানের চেয়ারটি পেলে প্রমানিত হবে, দলে তৃনমুলের পোড় খাওয়া মাঠের নেতাদের নিয়মিত মুল্যায়ন হয়। শেখ হাসিনার কাছে আসলে চট্রগ্রামের খোরশেদ আলমের মতো মৌলভীবাজারের মুহিবুর রহমান তরফদারের মতো নেতাদের নামটিও পৌঁছে। মাঠের কোন কোন ত্যাগী নেতারা এখনো মুল্যায়ন বঞ্চিত তাদের খবর শেখ হাসিনা জানেন। সবকিছু লবিংগের, চ্যানেলের মুল্যে বিকোয় না।
চার. আর জেলা পরিষদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় মাত্র কয়েক মাসের জন্য বাইরে থেকে প্রশাসক বসালেও দায়িত্ব হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত নিয়ম অনুযায়ী চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসবার কথা জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্যানেল চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ জাবেদের। সরাসরি কোন দলীয় রাজনীতি না করলেও নব্বই দশক থেকে মৌলভীবাজারের ক্রিকেট, খেলাধুলা ও সামাজিক অঙ্গনে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে হাসান আহমেদ জাবেদ তার নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছেন। বর্তমান জেলা পরিষদে তিনি ছিলেন আজিজুর রহমানকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যাওয়া থেকে উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিশ্বস্ত এক সহচর। জাবেদও মৌলভীবাজার শহরের একটি রাজনৈতিক পরিবারের একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সন্তান।
পাঁচ. জানি, রাজনীতি তার মতোন করেই চলবে। ক্ষমতাশীন বা বিরোধী দল দুই শিবিরেই ত্যাগীদের,যোগ্যদের রাজনৈতিক মুল্যায়নের জায়গাটা উপেক্ষিত,সংকুচিত প্রবলভাবে। দুই একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া সারাদেশেই। বিরোধী দলে দলের জন্য শ্রম-ঘাম দেন, মামলা নির্যাতন সহ্য করে রাজনীতি করেন, মিছিল-মিটিং একদল মানুষ। কিন্তু দলের ভেতরেও যখন পদ পদবি নেবার সময় আসে, তখন রাজপথে আন্দোলনের পুরো সময়টা দশর্কসারিতে বসে থাকা একদল মানুষ মাঠে নামেন। তারা শুধু পদের জন্য নানা ধরনের লবিং, বিনিয়োগ করেন। পদ পদবি মুল্যায়ন বাগিয়ে নিতে না পারলে কিনে নেন। এই কেনা বেচার বাজারে যতটা ক্ষতি আর ক্ষত হয় ত্যাগী কর্মীর,নেতার বা সমর্থকদের হৃদয়ে;তার চেয়েও হাজারগুন ক্ষতিগ্রন্থ হয় সামগ্রিক রাজনীতি। যোগ্যদের অবমুল্যায়ন আর বসন্তের কোকিল, হাইব্রিডদের অতি মুল্যায়ন দলে, সমাজে ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে। আর সে ভারসাম্যহীনতার গ্লানি সমাজের সাধারন মানুষদেরও ভীষনভাবে আক্রান্ত করে।
লেখক: মুনজের আহমদ চৌধুরী, লন্ডনে কর্মরত প্রবাসী সাংবাদিক।