আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এমসি কলেজ: আবেগ ও ভালোবাসার এক নাম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-০১ ১৯:৩৭:৪৯




|| বদরুল ইসলাম শোয়েব ||

হাজারো ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ সিলেটের অক্সফোর্ড হিসেবে খ্যাত উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ এমসি কলেজএ আমাদের সকলের আবেগ-অনুভূতি ও ভালোবাসার এক নামএ ছাত্রজীবনের স্মৃতি বিজড়িত ক্যাম্পাস। প্রায় ১২৮ বছরের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর এই প্রতিষ্ঠান অগণিত জ্ঞানী-গুণী সৃষ্টির সূতিকাগার। উন্নত মানুষ, উন্নত সমাজ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে জাতীয় পর্যায়ে ভুমিকা রাখার পাশাপাশি সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে এমসি কলেজ জ্ঞান বিকাশের অনন্য এক বাতিঘরে পরিণত।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সকল ন্যায্য অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা। আজ সিলেট এম সি কলেজ জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে বহির্বিশ্বের সকল উজ্জ্বল জায়গায় স্থান করে নিয়েছে। এই কলেজ যেমন জন্ম দিয়েছে অনেক মন্ত্রী ও এমপির, তেমনি অনেক বিজ্ঞানীরও। জন্ম দিয়েছে নীতি নৈতিকতার অনেক উন্নত মানুষ।
 
৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত পুন্যভূমি হযরত শাহজালাল-শাহপরানের আধ্যাত্মিক নগরীতে অবস্থিত খ্যাতনামা এই প্রতিষ্ঠান সিলেট এমসি কলেজ। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সময় আমাদের অন্য সহপাঠীরা বলতো এমসি কলেজ দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনন্য গুনের অধিকারী, নিশ্চয় আমরা সেদিন সম্মানিত হয়েছিলাম।

নিকৃষ্ট কিছু জঘন্য ঘটনায় এমসি কলেজের সুদীর্ঘ ইতিহাস ও শত ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে দেয়া যাবে না। সকল প্রকার কুসংস্কার ও অপ-রাজনীতি দূর করে শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এখন সময়ের দাবি। আমরা মনে করি, কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলাবিধি যথাযথ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন, যৌন হয়রানি কমিটি থাকলে তা কার্যকরী করে কঠোর দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন, হোস্টেল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের আচরণ বিধির প্রতি গুরুত্বারোপ ও অন্যান্য বিষয়ে নৈতিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানোর মধ্য দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান নিজস্বতা ফিরে পাবে।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদাই বলেন, আইনের উর্ধ্বে কেউ নন, অপরাধীদের কোন দল নেই, তাদের কোন সমাজও নেই। অপরাধীদের শাস্তি হবেই। দেশবাসী তার প্রমাণও পাচ্ছে। বড় বড় অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে। আইনের বাস্তবায়ন হচ্ছে। দূর্নীতিবাজ, অপরাধী ও সন্ত্রাসী কেউই রেহাই পাচ্ছে না। কিন্তু আমাদেরও যার যার অবস্থানের জায়গাগুলোতে নীতি নৈতিকতা উঁচু করে, লোভ লালসা কমিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনের মাধ্যমে সমাজ ও দেশকে এগিয়ে নেয়াই হবে জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা-স্বার্থকতা। সেই সাথে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান হউক নীতি নৈতিকতার প্রশ্নে আপোষহীন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর জীবন বাজী রেখে মৃত্যুদ্বার থেকে বারবার ফিরে এসেছেন, বাস্তবায়ন করছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন, বাস্তবায়ন করছেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন। নিরাপদ সমাজ গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে দিনের বেশিভাগ সময় ব্যয় করেন তিনি। সকল প্যারামিটারের দ্রুত বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশকে নিয়ে গেছেন পূর্ণাঙ্গ মধ্যম আয়ের কাছাকাছি। চলমান করোনাকালীন সময়ে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেকে সাহস ও সততা দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন সম্মানের উঁচু জায়গায়। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুযোগ সুবিধার মোটেই কমতি করেন নাই। আর আমরা বিপরীত কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে ও নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে বেআইনিভাবে জীবন পরিচালনায় ব্যস্ত, যা কখনো সভ্য সমাজ আশা করে না।

তাই প্রত্যাশা- জাতির সামগ্রিক উন্নয়নে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক এই ত্রিভুজ সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি বিকাশের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে শিক্ষালয়, সেই সাথে সমাজ ও দেশ। আমরা চাই না এমসি কলেজের সাথে অপমানজনক কোন শব্দ যুক্ত হউক, চাইনা কলুষিত কোন শব্দ যুক্ত হউক, অব্যাহত থাকুক মেধাবী তৈরির কারখানা হিসেবে।

প্রিয় বিদ্যাপীঠ নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সকল ক্ষেত্রে নিরাপদ হউক প্রানের এম সি কলেজ, সিলেট।
ব্যথিত, লজ্জিত, মর্মাহত।

লেখক: রেজিস্ট্রার, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন