আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

পূর্ণদৈর্ঘ্য জীবনের স্বল্পদৈর্ঘ্য রোজনামচা

এইচ এস সি পরিক্ষা ও আমাদের বাস্তবতা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-০৯ ১০:২২:১২

ফারজানা ইসলাম লিনু :: ঐতিহাসিক করোনা বর্ষ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু করোনার নাইওরি শেষ হওয়ার নাম গন্ধ নেই। চলে যাওয়ার জন্য গাট্টি গুট্টি বেঁধে সিদ্ধান্ত বদল করে আবার দ্বিতীয় দফা ঘাঁটি গেড়েছে।

করোনার টিকার পরিক্ষামূলক সফলতাও কাগজে পত্রে। বাস্তবের আলোর মুখ দেখতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

উন্নয়নশীল দরিদ্রপীড়িত রাষ্ট্র আমার। স্বাস্থ্যখাতে কেনা কাটার নামে করোনার আগেই তিনশো কোটি টাকা লোপাট। সুতরাং ছেড়া কাঁথায় শুয়ে করোনার টিকার পদ্মপুরাণের স্বপ্ন দেখে কাজ নেই। এমনিতেই আমরা ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে গিয়ে কপর্দকহীন নিঃস্ব হয়ে ঘরে ফেরার চেয়ে করোনায় ধুকে ধুকে মৃত্যুই শ্রেয়। করোনাও আমাদের মতো দরিদ্রজনগুষ্টির প্রতি যারপরনাই দয়াপরবশ। উত্তুরে বাতাসের শীত আগত। শীতে নাকি করোনা আবার দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে হানা দিবে। মোড়ল ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোতে করোনা পাততাড়ি গুটিয়ে আবার সেকেন্ডের ওয়েভের দোকান খুলে বসেছে।  চুয়াত্তর বছর বয়সী বাপের বেটা ট্রাম্প। করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাস্ক মুস্ক ছাড়া সিনা ফুলিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। হোয়াইট হাউসের করোনা সংক্রমণে তার কিছু যায় আসেনা। আর আমরা তো করোনা নিয়ে শুরু থেকেই বেপরোয়া। এই  হিসেবে ট্রাম্প আমাদের এক খুদে শিষ্য মাত্র। করোনাকালে শিক্ষাখাতের ক্ষতি পুষাতে শুরুতেই বিশ্বে বেশিরভাগ দেশ অটোপ্রমোশন বা বিকল্প মুল্যায়নের চিন্তাভাবনা করেছে। অল্প কয়টা দেশ ছাড়া বেশিরভাগ দেশ ফলাফল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির পর্ব সমাপ্ত করেছে। সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে কিংবা সরাসরি ক্লাস শুরু করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ ছয়মাসেরও অধিককাল পর গতকাল বাংলাদেশ সরকার এইচ এস সি পরিক্ষার ব্যাপারে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

বিকল্প মুল্যায়নে প্রমোশন।
সারা দেশে চৌদ্দ লাখ পরীক্ষার্থী। সামাজিক, শারিরীক দুরত্ব মেনে সঠিক পদ্ধতিতে পরিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয় জেনে এমন পরিকল্পনা। শীতের শুরুতে পরিক্ষা নিতে গেলে কি কি সম্ভাব্য সমস্যা হতে পারে তা আমরা সবাই জানি। আক্রান্ত একজন পরীক্ষার্থীর কারণে শয়ে শয়ে পরীক্ষার্থী আক্রান্ত হবে। মাঝ পথে পরিক্ষা বন্ধ করতে যেয়ে কি একটা লেজে গোবরে অবস্থা হবে আল্লাহ মালুম। আবার পরিক্ষা স্থগিত রাখা মানে দীর্ঘস্থায়ী সেশনজটের শংকা। এইচ এস সি আরো দুইটা ব্যাচ পেছনে অপেক্ষমাণ।  অর্ধেক বছর অনিশ্চয়তায় থাকতে থাকতে পরিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিও লব ডংকা। পড়াশুনা শিকেয় তুলে তারাও বিন্দাস, নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়।  পরিক্ষা হবে জেনে আবার পরীক্ষার্থীরা যদিও টেবিলে ফিরেছে। কিন্তু বুঝা যায় পড়াশুনায় আগের গতি নেই। এইচ এস সি পরিক্ষার্থীর অভিভাবক ও ভুক্তভোগী মা বাপের সিদ্ধান্তহীনতা ও দুঃশ্চিন্তায় যাচ্ছে পুরো করোনাকাল।  বাঁচা মরার আগে পরে সন্তানের সুষ্টু ভবিষ্যৎ চিন্তাই যে বাপ মায়ের অন্যতম প্রধান এক ইহলৌকিক কর্ম। কঠিন এই পরিস্থিতিতে গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা আসে, এইচ এস সি পরিক্ষা হবেনা। জে এস সি ও এস এস সি পরিক্ষার ভিত্তিতে  মুল্যায়ন হবে। পক্ষে বিপক্ষে এই নিয়ে শুরু হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চেঁচামেচি। আমাদের জন্য এ আর নতুন কি? আমরা তো সবকিছুতে ফইর বাছতে ও ত্যানা ছিড়তে ওস্তাদ। নিজেরাই বলবো, "কলাটা ছিলে দাও।" পরক্ষণেই,  "ছিলাইছো কেন? জোড়া লাগাইয়া দাও।" পরিক্ষার্থীরা নাকি অটোপ্রমোটেড টু জিরো টু জিরো ব্যাচের চিহ্নিত শিক্ষার্থী হয়ে গেলো। করোনা তথা টু জিরো টু জিরো ব্যাচ কোন কলংকের চিহ্নতো নয়। শিক্ষার্থী তথা মানবকুল এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী নয়। স্রষ্টা আমাদের হেদায়েতের জন্য অমন বলা পাঠালেও আমাদের হেদায়েতের নাম গন্ধ নেই। লাগামহীন  ধর্ষণ, দুর্নীতি, অনাচার কি প্রমাণ করে?

এইচ এস সি পরিক্ষার মুল্যায়ন পদ্ধতিকে নতুন ইস্যু না করে ধর্ষণ ও ধর্ষকের বিচার নিশ্চিতে সরকারকে সহযোগীতা করুন। করোনা সহ অন্যান্য প্রসঙ্গে সরকারের পদস্থ ও দায়ীত্বশীল ব্যক্তিদের বক্তব্য হাস্যকর ও পীড়াদায়ক হলেও ধর্ষকের শাস্তিতে সবাই আন্তরিক।  

ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি দলমত নির্বিশেষে সকলের। রাজনৈতিক ফায়দা লাভের আশায় খামাখা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে না নেমে ধর্ষনের বিচার ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি অব্যাহত থাকুক।  এসিডের দুষ্প্রাপ্যতা ও আইনের সঠিক প্রয়োগে এসিড সন্ত্রাস আজ শূন্যের কোঠায়।  সরকারের আন্তরিক চেষ্টায় ধর্ষনের মতো অপরাধও নিয়ন্ত্রনে আসবে আশাকরি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ও পদ পদবীর যথেচ্ছ ব্যবহারে এমনটা হচ্ছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেকোন ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাস, দুর্নীতি সব সময় ফুলে ফেঁপে হৃষ্টপুষ্ট হয়।  তবে হ্যাঁ এইবার অতীতের অপকর্মের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

(পুনশ্চ: ধর্ষণ ও ধর্ষকের বিচার দাবি অব্যাহত থাকুক,বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে)

ফারজানা ইসলাম লিনু : শিক্ষিকা ও গল্পাকার

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন