আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেট অঞ্চলের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তারকারী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত একটি পর্যালোচনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-১৮ ১৩:৫৮:১৯

।। ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল।।

কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সে দেশের বিনিয়োগ ও উৎপাদনের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সঞ্চয়কে যদি উৎপানমূখী খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় তবে কর্মসংস্থান এবং আয়স্তর বৃদ্ধি পায়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দারিদ্রদূরীকরণ সম্ভব। সিলেট অঞ্চলে বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে যেগুলো সিলেট অঞ্চলের অর্থনৈতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে  সিলেট অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ১১টি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ১০,৬০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। সিলেট অঞ্চলের প্রায় ৬৩,০০০ জন অধিবাসী এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল যা সিলেট অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই ১১টি প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে প্রায় ৯.৫ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা- র্কমচারীদরে মধ্যে বতিরণ করছে যা সলিটে অঞ্চলরে র্অথনীততিে প্রভাব ফলেছ।ে এছাড়াও  প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মকর্তা- র্কমচারীদরে মধ্যে অন্যান্য সুযোগসুবধিা প্রদান করছে যার ব্যয়  প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগতাগণ অনুকরণীয় দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। সলিটে অঞ্চলরে সফল উদ্যোক্তাদরে অনুসরণ করে যদি প্রবাসীগণ দেশে উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ করে থাকেন, তবে আগামী প্রজন্মের সাথে দেশের সম্পর্ক বিদ্যমান থাকবে এবং দশেরে বকোর সমস্যা হ্রাস হবে। এতে উপকৃত হবে দেশের অর্থনীতি। (সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি সলিটে অঞ্চলরে স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থকেে তথ্য সংগ্রহ করতে সহায়তা করছে।) সিলেট অঞ্চলের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান গুলোর বর্ণনা তুলো ধরা হলো:

আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড  ::
সিলেট অঞ্চলে যে কয়েকটি স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এদের অন্যতম আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড। আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড একটি কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক ও গবেষণা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি বিসিক শিল্পনগরী গোটাটিকর কদমতলী সিলেট-এ অবস্থিত। কৃষিকে যান্ত্রীকীকরণের মাধ্যমে দেশের উৎপাদনবৃদ্ধি সম্ভব। এই লক্ষকে সামনে রেখে আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড কৃষিখাতে ইতিমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছে। সিলেট শহরের রায়নগর রাজবাড়ী নিবাসী জনাব মরহুম আব্দুল আলীম চৌধুরী ১৯৯০ সালে সিলেটের গোটাটিকরে প্রতিষ্ঠা করেন প্রতিষ্ঠানটি। শুরুতে ৩৫,০০০০০ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মূলধন প্রায় ২০কোটি টাকা। মাত্র ৭ জন জনবল নিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১২০জন। এ পর্যন্ত কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫৫০ জনের।
বর্তমানে আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের মাধ্যমে যে সকল যন্ত্র উৎপাদিত হচ্ছে এদের মধ্যে আলীম পাওয়ার টিলার, ধান-গম মাড়াই কল, ভুট্টা মাড়াই কল, পাওয়ার রিপার (ধান/শস্য কাটার যন্ত্র) উইনোয়ার (শস্য ঝাড়াই যন্ত্র), ড্রাম সিডার (ধানের বীজ বপন যন্ত্র), ড্রায়ার (ধান/শস্য শুকানোর যন্ত্র), পাওয়ার টিলার অপারেটেড সীডার (জমি চাষ, বীজ বপন ও মই দেওয়ার যন্ত্র),  ভি, এম, পি মেশিন (জমি চাষ, বীজ বপন, বেড তৈরি যন্ত্র) ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি স্যামে ট্রাক্টর, রোটারি টিলার, কম্বাইন হারভেস্টার, পাওয়ার রিপার (ধান কাটার যন্ত্র), ডি এফ টাইপ পাওয়ার টিলার ইত্যাদি আমদানী করে। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ধান-গম মাড়াইকল, ড্রায়ার, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্র এবং আলীম পাওয়ার টিলার ভারত, নাইজেরিয়া, পূর্ব তিমূর এবং মেক্সিকোতে রপ্তানি করেছে যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন জনাব আলীমুল এছহান চৌধুরী এবং বর্তমান চেয়ারম্যান জনাব আলীমুছ ছাদাত  চৌধুরী। আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের রয়েছে দক্ষ এবং নিবেদিত ম্যানেজমেন্ট টীম এবং একদল সুদক্ষ প্রকৌশলী। আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক উৎপাদিত পন্যের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বর্তমানে ৬টি ইউনিট জুড়ে আলীম-ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড এর কারখানা বিস্তৃত রয়েছে।

এ ছাড়াও কুমিল্লা, ফরিদপুর ও রংপুরে ৩টি শোরুমের মাধ্যমে উৎপাদিত পন্য বিক্রয় হচ্ছে। বর্তমানে কারখানার আয়তন প্রায় ২৬৭ শতক জমি। কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা মেটাতে প্রতিষ্ঠানটি চীন, ভিয়েতনাম, ভারত, জাপান, দক্ষিন কোরিয়া, থাইওয়ান, সংযুক্ত আরব-আমিরাত সহ অন্যান্য দেশ থেকে কৃষি যন্ত্রপাতি ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানী করে এসেমব্লিং করে থাকে। কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে ১৯৯০ সালে কৃষি উন্নয়নে রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার, ২০১৪ এবং ২০১৬ সালে ষ্ট্যান্ড-চার্ট এগ্রো ওয়ার্ড, ২০১৬ সালে কে. আই. বি. কৃষি পদক এবং ২০১৭ সালে ন্যাশনাল প্রোডাক্টিভিটি এবং কোয়ালিটি এক্সিল্যান্স এওয়ার্ড অর্জন করেছে। মরহুম জনাব এস এ আলীম চৌধুরীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত আলীম ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড বর্তমানে শুধু সিলেট অঞ্চলেই নয়, সমগ্র বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে নেতৃত্বদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিত লাভ করেছে।

বারাকা পাওয়ার লিমিটেড ::
সিলেট জেলায় যে কয়েকটি স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে এদের অন্যতম বারাকা পাওয়ার লিমিটেড।  সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে অবস্থিত ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০৯ সালের ২৪শে অক্টোবর কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির প্ল্যান্টটি বর্তমানে উৎপাদন করছে ৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এবং ন্যাশনাল গ্রীডে সরবরাহ করা হচ্ছে।। চারিদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত এলাকায় অবস্থিত বারাকা পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানীর বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্টটি এবং আশেপাশের পরিবেশ সত্যিই চমৎকার। প্ল্যান্টটিতে মোট ১৯টি জেনারেটর রয়েছে যেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে অষ্ট্রিয়া থেকে। প্রতিষ্ঠানটির  ম্যানেজমেন্টটিম খুবই দক্ষ এবং অতিথিপরায়ন। প্রবাসী এবং দেশে অবস্থানরত বিনিয়োগকারীগণের মাধ্যমে এবং ঋণ সংগ্রহের মাধ্যমে দুইশত কোটি টাকার বেশী মুলধন দিয়ে প্ল্যান্টটি তৈরী করা হয়েছে। তাছাড়াও সুপ্রশস্থ খেলারমাঠ, গাছপালা, অফিসকক্ষ, নামাজেরস্থান, এম.ডি সাহেবের কক্ষ খুব রুচিশীল, গোছানো এবং পরিচ্ছন্ন। প্ল্যান্টসহ মোট এলাকার আয়তন ৮.৬ একর।

কোন দেশের সঞ্চয়কে যদি উৎপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয় তবে তা দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে। এতে আয়স্তর বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়ে থাকে। বারাকা গ্রুপের ম্যানেজিং ডায়রেক্টর জনাব গোলাম রব্বানী চৌধুরী, চেয়ারম্যান জনাব ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, বারাকা পাওয়ার লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ফাহিম আহমদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ  আব্দুল বারি এবং ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আহসানুল কবির, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম. কে. শাফী এলিম সহ বারাকা গ্রুপের সব স্পন্সর বা উদ্যোক্তারা এক অনুকরণীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
বারাকা পাওয়ার লিমিটেড বারাকা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান।পূর্বে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিলো বারাকা ইলেক্ট্রো ডায়নামিক লিমিটেড। ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে বারাকা পাওয়ার লিমিটেড নামকরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জ এর লিস্টেড কোম্পানি। বিশ্ব বিখ্যাত GE Jenbacher ব্র্যান্ডের ১৯টি গ্যাস ইঞ্জিনের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ৫৫.১ মেগাওয়াট হলেও সরকারের সাথে চুক্তি ৫১ মেগাওয়াট। এগুলো প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে পরিচালিত। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিষ্ট্রিবিউশন লিমিটেড বারাকা পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানীকে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। তাছাড়াও ABB (Sweden), AVK (UK) এবং QRE (China)) বারাকা পাওয়ার লিমিটেডকে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাসংশ সরবরাহ ও সেবা প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির ইকুইটি মূলধনের অধিকাংশই প্রবাসী বাংলাদেশী (NRB) বিনিয়োগকারীগণ প্রদান করেছেন। এছাড়াও ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড ও আইডিসিওএল প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ প্রদান করেছে। ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পত্তির পরিমান ছিলো প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা। বারাকা পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানী তার আরও ৩টি সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোট ৩১৬ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ উৎপাদনকরে থাকে। বারাকা পাওয়ার লিমিটেড এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড, বারাকা কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেড এবং শিকলবাহা পাওয়ার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১৩৪ জন এবং এর মাঝে মোট প্রকৌশলীর সংখ্যা ৩৩ জন। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর প্রায় ৪০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি তার কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য Festival Allowances, Profit Sharing, Contributory Providend fund, Subsidized Lunch facilities ইত্যাদি প্রদান করেছে। বারাকা পাওয়ার লিমিটেড কোম্পানীরমত অন্যান্য খাতে যদি প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়, তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বারাকা পাওয়ার লিমিটেড হতে পারে সমগ্র দেশের জন্য একটি মডেল।

সিলকো ফার্মাসিটিক্যালস্ লিমিটেড ::
সিলেট অঞ্চলের একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান হলো সিলকো ফার্মাসিটিক্যালস্ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ঔষধ উৎপাদন করে থাকে। সিলকো ফার্মাসিটিক্যালস্ লিমিটেডের প্ল্যান্টটির খাদিম নগরের বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত। সিলেট জাফলং রোডের সিলেট জিরো পয়েন্ট থেকে এর দূরত্ব পূর্ব দিকে প্রায় ১০ কিলোমিটার। ১৯৯৬ সালে যাত্রা শুরু করা প্ল্যান্টটির আয়তন প্রায় ৪৫ হাজার বর্গফুট। ১০টি product দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে সিলকো ফার্মাসিটিক্যালস্ এর উৎপাদিত ঔষধের সংখ্যা ১০৮টি। Quality Management System এর স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিষ্ঠানটি ISO 9001: 2015 সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দেশীয় প্রয়োজন মিটিয়ে ইতিমধ্যে আফগানিস্তানে রপ্তানী করেছে। এছাড়াও ভূটান, মায়ানমার, তানজানিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, উগান্ডা প্রভৃতি দেশে ঔষধ রপ্তানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি শক্তিশালী Distribution নেটওয়ার্ক আছে এবং সিলেট, নোয়াখালি, বরিশাল, বগুড়া এবং যশোর অবস্থিত ৫টি গুদামের মধ্যেমে সমগ্র দেশে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বমোট কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা প্রায় ৭৫০ জন।
প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান মিসেস নাঈম ফাতেমা এবং ম্যানেজিং ডায়রেক্টর হিসেবে ডা. বদরুল হক রোকন দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ডায়রেক্টর হিসেবে আছেন ডা. আজিজুর রহমান, ডা. হারুনুর রশীদ, প্রফেসর ডা. ফয়সাল আহমেদ, প্রফেসর ডা. আবুল আহবাব, ডা. মাহমুদুল মজিদ চৌধুরী প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে Alopin-5, Ambrosia syrup, Bactazim Capsule, Deslosil Tablet, Samprid Tablet, Silflox Tablet, Viton Syrup, Viton-Z Tablet প্রভৃতি অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্ট টিম দক্ষ এবং নিবেদিত প্রাণ। বেশ কয়েকজন ক্যামিষ্ট, ফার্মাসিষ্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং হিসাবরক্ষ এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট অফিস সিলেট শহরের সুবিদবাজারে অবস্থিত। ২০১৮-১৯ অর্থবছর প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৭ কোটি টাকা মূনাফা অর্জন করেছে। ২০১৯ সালের ৩০শে জুন তারিখে প্রতিষ্ঠানটি মোট সম্পতির পরিমান ছিলো প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির E.P.S ছিলো যথাকমে ২.২৮ এবং ১.৬৪ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সিলকো ফার্মাসিটিক্যাল্স লিমিটেড কোন ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করেনি অর্থাৎ এদের Capital Structure এর মাঝে কোন Debt Financing নেই। সিলকো ফার্মাসিটিক্যাল্স লিমিটেড সিলেট অঞ্চলের একটি অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান যা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে। প্রতিষ্ঠানটির উন্নতি এবং সমৃদ্ধি এ অঞ্চলে ভবিষ্যত উদ্যোগতাদের উৎসাহিত করবে।

এম. আহমেদ টি এবং ল্যান্ডস কোম্পানী লিমিটেড ::
এম. আহমেদ টি এবং ল্যান্ডস কোম্পানী লিমিটেড সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী স্বনামধন্য এম. আহমেদ গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। সিলেটের স্বনামধন্য M.C কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল জনাব মরহুম অধ্যাপক এম. আহমেদ চৌধুরী ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৫৫ সালের ১২ই জুলাই প্রতিষ্ঠানটি Incorporated হয়। ৮টি চা বাগানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি গত বছর প্রায় ৩০ লক্ষ কেজি CTC Black চা উৎপাদন করেছে। চা-শ্রমিকসহ প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত জনবল প্রায় ৫,৫০০ জন। পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিষ্ঠাতা মরহুম অধ্যাপক এম. আহমেদ চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্র সিলেটের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহিউস সুন্নত চৌধুরী প্রতিষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালনা করেন এবং ব্যবসায়ের পরিসর বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির M.D মোহাম্মদ সাফওয়ান চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালন হিসেবে জনাব মোঃ হাসান চৌধুরী, ডায়রেক্টর মার্কেটিং হিসেবে মো: তেহসীন চৌধুরী দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতিষ্ঠানটির চানবাগ নামক একটি চাবাগান ১৯৮২ সালে দেশের সর্বোচ্চ চা উৎপাদনকারী চাবাগান হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এম. আহমেদ টি এবং ল্যান্ডস কোম্পানী লিমিটেড ISO 9001:2000 সনদ প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদিত চায়ের বৃহৎ অংশ নিলামে বিক্রয় করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত ম্যাগনোলিয়া ব্যান্ডের চা নিজস্ব মার্কেটিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিক্রয় করে। তাছাড়াও সুগন্ধি চাল, সরিষা, আলু, তিসি, মটরসুটি, লেবু, কাঠাল, তেজপাতা প্রভৃতির চাষ করে বিক্রয় করে। খান চা বাগান এবং লালাখাল চা বাগানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বছরে প্রায় ১০০ মেট্রিকটন রাবার উৎপাদন ও বিক্রয় করে থাকে। চা শ্রমিকের কল্যানে প্রতিষ্ঠানটি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, স্বাস্থ্যকর বাসস্থান, রেশন, প্রদান করে থাকে। তাছাড়াও শ্রমিকের জন্য বিদ্যুৎ বিলের একটি অংশ প্রতিষ্ঠানটি প্রদান করে। এম. আহমেদ টি এবং ল্যান্ডস কোম্পানীর অফিস সিলেট শহরের দরগামহল্লায় অবস্থিত। ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি সিলেট অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

খাদিম সিরামিক্স লিমিটেড ::
সিলেটের খাদিমনগরের দলইপাড়ায় অবস্থিত খাদিম সিরামিকস্ সিলেট অঞ্চলের স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি সিরামিক নির্মিত বিভিন্ন ধরণের টাইল্স প্রস্তুত করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্পোরেট অফিস ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি পরিবেশ বান্ধব মাটির তৈরী বিভিন্ন টাইল্স এবং গ্লেইজ (Glaze) ) টাইল্স তৈরী করে। বিভিন্ন ধরনের টাইল্সের মধ্যে Architectural টাইল্স, ওয়াল টাইল্স, ফ্লোর টাইল্স, রুফ টাইল্স ইত্যাদি অন্যতম। টাইল্সের মাটি মালোয়েশিয়া এবং এষধুব চীন থেকে আমদানী করা হয়। এক সময় নেত্রকোণা অঞ্চলে মাটি কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সিরামিক্স পন্যের বিভিন্ন কাচামাল যেমন কাদামাটি, সোডা, সিলিকা সিলেট অঞ্চলে পাওয়া যায়। উৎপাদিত পন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং সিঙ্গাপুর ও কাতারে রপ্তানী করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রতিদিন ৭০০০ বর্গমিটার টাইল্স। ৬৪ একর জমির উপর প্রতিষ্টিত খাদিম সিরামিকস্ লিমিটেড কোম্পানীতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক হিসেবে প্রায় ১০০০ জন জড়িত রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব আসিফ আরিফ তাবানি এবং ম্যানেজিং ডায়রেক্টর হিসেবে সাকিব আরিফ তাবানি দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও অন্যান্য ডায়রেক্টর হিসেবে জনাব আসিফ তাবানি সাহেবের পরিবারের সদস্যগণ দায়িত্বে রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির Capital Structure এর মধ্যে কোন ব্যাংক ঋণ অর্থাৎ Deb নেই। প্রতিষ্ঠানটির সমস্যাগুলোর মধ্যে প্রধান হলো দক্ষ শ্রমিকের অভাব। এছাড়াও আমদানীকৃত কাচামাল সিলেটে আনতে পরিবহন খরচ অপেক্ষাকৃত বেশী হবার ফলে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ৬,০০০ বর্গমিটার উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্লোর টাইন্স নির্মানের Factory করার পরিকল্পনা করেছে। খাদিম সিরামিকস্ লিমিটেড ইতিমধ্যেই সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

গোল্ডেন হারভেষ্ট ফুডস্ লিমিটেড ::
সিলেট-জাফলং রোড এর পাশ্ববর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুরে ১০০ একর জমি নিয়ে গঠিত গোল্ডেন হারভেষ্ট ফুডস্ লিমিটেড সিলেটের অন্যতম সেরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠানটির প্ল্যান্টটিতে উন্নত প্রযুক্তিতে খাদ্যজাত দ্রব্য উৎপাদন শুরু হয়। হারভেষ্ট ফুডস্ লিমিটেডের উৎপাদিত খাদ্যজাত পণ্যের মধ্যে বোম্বে-মিক্স চানাচুর, ঝাল-মিক্স চানাচুর, সস, ডালভাজা, মটরভাজা, Potato Crackers ইত্যাদি অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে প্রায় ৫০০ জন লোক জড়িত রয়েছেন। হারভেষ্ট ফুডস্ লিমিটেডের Dry Foods Productগুলো সিলেটে উৎপাদিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির Managing Director হিসেবে মিসেস নাদিয়া সামদানী এবং চেয়ারম্যান হিসেবে জনাব আহমেদ রাজীব সামদানী দায়িত্বপালন করছেন। জনাব আহমেদ রাজীব সামদানী সাহেবের পৈত্রিক নিবাস গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বিক্রয় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। 
গোল্ডেন হারভেষ্ট গ্রুপের আরও একটি প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন হারভেষ্ট ডেইরি লিমিটেডর দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্রটি সিলেটির ফতেহপুর অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে রাজীব আহমেদ সামদানী এবং Managing Director হিসেবে মইনুল ইসলাম চৌধুরী দায়িত্বে আছেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্রান্ড Happy Cow বর্তমানে সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। ৮০০ টি গাভীর মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ২৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি যার মূল্য বৎসরে প্রায় ৫ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা। উৎপাদিত দুগ্ধের একটি বিরাট অংশ সিলেট অঞ্চলের মিষ্টিজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বনফুল এবং কোং ক্রয় করে থাকে। হারভেষ্ট ফুডস্ লিমিটেড এবং হার হারভেষ্ট ডেইরী লিমিটেড দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। সিলেটের খাদিমনগরে অবস্থিত গোল্ডেন হারভেষ্ট এর ডিপোর মাধ্যমে হিমায়িত খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণ করা হয় এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্টন করা হয়ে থাকে। গোল্ডেন হার ভেষ্ট ফুডস্ লিমিটেড এবং গোল্ডেন হারভেষ্ট ডেইরী লিমিটেড জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। কোভডি -১৯ পরস্থিতিরি কারণে বর্তমানে র্ফামটরি বক্রিয় যথষ্টে পরমিাণে কমছে।

প্রিমিয়াম ফিশ এবং এ্যাগরো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড ::
২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সদর উপজেলার বলাউরায় অবস্থিত প্রিমিয়াম ফিশ এবং এ্যাগরো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড সিলেট অঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি রান্নার জন্য সরাসরি প্রস্তুতকৃত মাছ এবং খাদ্যদ্রব্য তৈরী ও বিক্রয় করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির Ready to Cook and Ready to Eat পন্য (Product) গুলো সরাসরি আমেরিকা, কানাডা, ইংল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরে রপ্তানী করে থাকে। দেশীয় মার্কেটে এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কোন Product বিক্রয় হচ্ছে না। সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন নদী, হাওড়, নালা, খাল, বিল ইত্যাদি থেকে সংগৃহীত ছোট মাছ, যেমন- মলা, পুটি, কাঁচকি, চাপিলা মেনি ইত্যাদি। রান্নার জন্য প্রক্রিয়াজাত করে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানী করে থাকে।
তাছাড়াও রান্নার জন্য সরাসরি তৈরী বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্তু (যেমন: পরোটা, সমুচা, সিংগারা ইত্যাদি) প্রকিয়াজত করে প্রতিষ্ঠানটি প্রস্তুত করে থাকে। তাছাড়াও সিলেটে সংগৃহীত কাঠালের বিচি, কচুর মুখী, শিমের বিচি, পটল, কাকরোল ইত্যাদি রান্নার জন্য তৈরী করে প্রস্তুত করা হয়। তাছাড়াও চাল, মুরি, বিস্কুট ইত্যাদি প্রস্তুত করে প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানী করে থাকে। ৫ তালা বিল্ডিং বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির ভূমির পরিমাণ ১৫৬ শতক। বিল্ডিং এর প্রতিটি Floor-এর আয়তন ১৫,০০০ বর্গফুট। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জনাব কল্লোল আহমেদ প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়াও ডায়রেক্টর হিসেবে আছেন মিসেস মারুফা আহমেদ, মাহফারা আঞ্জুম আহমেদ এবং জনাব শওকত আহমেদ। C.E.O হিসেবে দায়িত্বে আছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ১ম ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র মাহবুবুল আলম চৌধুরী। প্রিয়িাম ফিস এবং এ্যাগরো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানীতে কর্মরত আছেন প্রায় ২০০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী। প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির Capital structure এ কোন ঋণ নেই। শুধুমাত্র চলতি মূলধন হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি ৫ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করেছে। তথ্য নিয়ে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা পন্য বিদেশে রপ্তানী করে এবং বছরের প্রায় ৫ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের শ্রমিকদের জন্য খাদ্য এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। প্রিমিয়াম ফুড এন্ড এ্যাগরো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড সিলেটের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

সানটেক এনার্জি লিমিটেড এবং সানটেক টায়ার লিমিটেড ::
সানটেক এনার্জি লিমিটেড কোম্পানী এবং সানটেক টায়ার লিমিটেড কোম্পানী সিলেটের খাদিমনগরের বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত। সানটেক এনার্জি লিমিটেড ২০০৯ সালে এবং সানটেক টায়ার লিমিটেড ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠান দুটির প্রধান অফিস ঢাকার বনানীতে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠান দুটির চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডায়রেক্টর যথাক্রমে এ.কে এম আনোয়ারুল হক এবং এ. কে এম. নুরুল হক। সানটেক এনার্জি লিমিটেডের মোট জনবল ১৬০ জন এবং সানটেক টায়ার লিমিটেডের মোট জনবল ১০০ জন। সানটেক এনার্জি লিমিটেড এবং সানটেক টায়ার লিমিটেড এর মোট জায়গার পরিমাণ যথাক্রমে ৫০ হাজার বর্গফুট এবং ৩০ হাজার বর্গফুট। সানটেক এনার্জি লিমিটেড গাড়ীর ব্যাটারী, আইপিএস এর ব্যাটারী এবং সোলার ব্যাটারী প্রস্তুতকরে থাকে। ব্যাটারীতে ব্যবহৃত কাঁচামাল শীশা-পাবনা, নরসিংদী এবং নারায়নগঞ্জ জেলা থেকে আনা হয়। তাছাড়াও ভারত ও চীন থেকে Separator আমদানী করা হয়। Plastic Container আসে ঢাকা থেকে। সমগ্র বাংলাদেশে সানটেক এনার্জি লিমিটেড বিক্রয়ের পরিমাণ প্রায় ৬০ কোটি টাকা। সানটেক এনার্জি লি: কোম্পানীর কাঁচামাল আনয়নের খরচ তুলনামূলক ভাবে বেশী। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারীর Capacity এবং উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তাছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি Plastic Container তৈরীর উদ্যেগ গ্রহণ করছে।

সানটেক টায়ার লিমিটেড এর বাৎসরিক বিক্রয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির মোট সম্পত্তি প্রায় ৫০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি মোটর সাইকেলের চাকা, C.N.G-এর চাকা, পিক-আপ ভ্যানের চাকা, ইত্যাদি বিভিন্ন আকারের চাকা উৎপাদন করে থাকে। এছাড়াও ছোট অটো রিক্সার চাকাও প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদন করে। চাকা তৈরী বিভিন্ন উপাদান যেমন রাবার, Black-কার্বন, Lylon Cord ইত্যাদি ভিয়েতনাম, ভারত, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানী করা হয়। সিলেট অঞ্চলের রাবার প্রতিষ্ঠানটি টায়ার উৎপাদনে ব্যবহার করে থাকে। উৎপাদিত চাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। দেশে চাকা উৎপাদনের সাথে জড়িত Expert জনবলের অভাব থাকায় বিদেশ থেকে নিয়ে আসতে হয়। সানটেক এনার্জি লি: কোম্পানী এবং সানটেক টায়ার লি: কোম্পানী সিলেট অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

কুশিয়ারা ব্রিকস্ লিমিটেড ::
সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কুরার বাজার ইউনিয়নের আংগারজুর গ্রামে অবস্থিত পরিবেশ বান্ধব (Eco Friendly) ইট উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান কুশিয়ারা ব্রিকস্ লিমিটেড সিলেট অঞ্চরের বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির আয়তন ২০ একর এবং ১৫০ জন শ্রমিক ইট উৎপাদনের সাথে জড়িত রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ৪০ হাজার ইট উৎপাদন করে থাকে যা সিলেট শহরে এবং বিয়ানীবাজার উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। Clay-Auto-Bricks নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির ইটের মাটি সংগ্রহ করা হয় বিয়ানীবাজারের মরিয়া হাওর থেকে। প্রতিষ্ঠানটিতে ইতিমধ্যে ১৩৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ৯০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে ADB এবং IDCOL থেকে। ইক্যুইটির (Equity) পরিমাণ ৪৫ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডায়রেক্টর হিসেবে আছেন মতিউর রহমান এবং ডায়রেক্টর হিসেবে আছেন তাঁর পুত্র জনাব মিজানুর হরমান। ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জনাব মতিউর রহমান সাহেবের মতে প্রতিষ্ঠানটির ইটের আকার বড় এবং Strength বেশী। কুশিয়ারা ব্রিক্স লিঃ এর উৎপাদিত ইটের মূল্য ৯ টাকা থেকে ৯.৫০ পর্যন্ত। উন্নতমানের মেশিন এবং ইট নির্মাণে উর্বর মাটি ব্যবহার না করায় প্রতিষ্ঠানটির ইট উৎপাদন খরচ বেশী। তাছাড়াও উৎপাদন প্রক্রিয়াটি পরিবেশ বান্ধব রাখার ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। কুশিয়ারা ব্রিকস্ লিমিটেড সিলেট জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান।

সিলেট টি কোম্পানী  লিমিটেড ::
১৮৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সিলেট টি কোম্পানী সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ঢাকার মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি সিলেটের মালনীছাড়া চা বাগানের মাধ্যমে বছরে ৮.৫ লক্ষ কেজি চা উৎপাদন করে থাকে এবং আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ১০ লক্ষ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। মালনীছাড়া চা বাগান দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত চা বাগান হিসেবে চা উৎপাদন শুরু করে। উৎপাদিত চা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত Produce Brokers Limited- মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করে থাকে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১.৫ লক্ষ কেজি  Latex  উৎপাদন করে, যা রাবার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিলেটের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও দানশীল ব্যক্তিত্ব ড. সৈয়দ রাগীব আলী।
এছাড়াও তনিি কানাইঘাটরে লোভাছড়া টি কোম্পানী  লমিটিডে, শ্রীমঙ্গলরে দলই টি কোম্পানী লমিটিডে,  রাজনগর টি কোম্পানী  লমিটিডে এবং পঞ্চগর টি কোম্পানী লমিটিডে- এর ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট টি কোম্পানীর ডাইরেক্টর হিসেবে রয়েছেন জনাব আব্দুল হাই এবং মিসেস রেজিনা কাদির। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সর্বমোট ৭ জন। বর্তমানে CEO হিসেবে প্রতিষ্ঠানটিতে দায়িত্বরত রয়েছেন জনাব এম. এম. ইসলাম। মোট চা শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২,০০০ জন। মালনীছড়া চা বাগানের মোট জমির পরিমান ২,৫০০ একর। প্রতিজন চা শ্রমিক মাসে প্রায় ৫,০০০ টাকা আয় করেন। প্রতিষ্ঠানটি চা শ্রমিকদের জন্য বোনাস, বিনামূল্যে বাসস্থান, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, রেশন ইত্যাদি প্রদান করে থাকে। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি সিলেটের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবার নিকট পরিচিত।  

অয়েস্টার পোলট্রি এবং ফিশারিজ লিমিটেড ::
অয়েস্টার পোলট্রি এবং ফিশারিজ লিডিটেড সিলেট অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। পোলট্রি সেক্টরে প্রতিষ্ঠানটি সিলেট বিভাগের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ২০০৬ সালে কার্যক্রম শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির ব্রয়লার ফার্ম এবং লেয়ার ফার্মাটি সিলেট সদর উপজেলার ওসমানী বিমান বন্দরের নিকটবর্তী দারাবাজারে অবস্থিত। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির ব্রীডার ফার্ম, নির্মানাধীন ফিডমিল এবং হ্যাচারী লালাবাজার এলাকার বিবিদইল এ অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি মৎস্যচাষ সিলেট সদরের দারাবাজার এবং লালাবাজার এলাকার বিবিদইল-এ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির মোট এলাকার পরিমাণ প্রায় ৫৬ বিঘা। প্রতিষ্ঠানটির ডিম, মাছ, লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগী এবং দেশী গরু উৎপাদন করছে। চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে আছেন আব্দুল হাই চৌধুরী এবং Managing Director হিসেবে আছেন জনাব ইমরান হোসেন।
প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট জনবল প্রায় ৫০ জন। অয়েস্টার পোলট্রি এবং ফিশারিজ লিডিটেড প্রতিবছর প্রায় ১৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রয় করে থাকে। বার্ষিক মুনাফার পরিমাণ প্রায় ২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। মুরগীর বাচ্চা, মাছের পোনা এবং মাছ ও মুরগীর খাদ্য মূলত গাজীপুর, সাভার ও ঢাকার উত্তরা থেকে ক্রয় করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির বেলজিয়ামের পিটার সাইম মেশিনসহ অত্যাধুনিক ইনকিউবেটরে প্রতিমাসে ১,৬০,০০০ মোরগের বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪টি শেডের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ১২,০০০ ব্রয়লার মোরগ উৎপাদন চলছে এবং ১১টি পুকুর থেকে বছরে প্রায় ২৫ মেট্রিকটন মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির অফিস জিন্দাবাজারের নেহার মার্কেটে অবস্থিত। অয়েস্টার পোলট্রি এন্ড ফিশারিজ লিমিটেড ইতিমধ্যে তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধির পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

লেখক : অধ্যাপক, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
ই-মেইল: fazle.faisal@yahoo.com

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন