আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সংগীত জগতে এক আশির্বাদের নাম ক্বারী আমীর উদ্দীন আহমেদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০২-২০ ০০:২৬:৫৩

বাবুল দেব :: আজ ৭ই ফাল্গুন! ১৩৪৯ বঙ্গাব্দে,(১৯৪২ সালের ১৯- ফেব্রুয়ারী) এই দিনে লোককবি, গায়ক, পালাকার, মহান সংগীত সাধক ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলাধীন আলমপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শাহ মোহাম্মদ রুস্তম আলী, মায়ের নাম আলিফজান বিবি।

সাধক ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ সাহের পূর্বপূরুষগণ মরমী সাধক,পীর, ফকির ছিলেন। পরম্পরাগত কারণেই তিনি ফকিরি বা মুশির্দি চেতনাধারী। ব্যক্তিগত জীবনে চার পুত্র সন্তান ও এক কন্যা সন্তানের জনক ক্বারী সাহেব স্বস্ত্রীক ইংল্যান্ড প্রবাসী।

প্রায় পাঁচ হাজারেরও অধীক গানের রচয়িতা সাধক ক্বারী আমীর উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে অন্তর্মূখী জীবন যাপন করে আসছেন। তাঁর ভাষায় “ আমি পরকালে বাস করি”। এ কারণে নতুন প্রজন্মের কাছে অনেকটা অচেনা এই প্রচারবিমুখী সুর সাধক।

বলা বাহুল্য যে, কোন বিশেষণই ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ সাহেবের জন্য যথেষ্ট নয়। গান রচনা, গায়কী, যান্ত্রিক দক্ষতা আর উপস্থাপনে- তিনি এক অনন্য উচ্চতায় আসীন। সংগীতের ভাব জগতে যাঁদের বিচরণ, গভীর থেকে গভীরতম থেকে যাঁরা প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করেন, তাঁদের কাছে ‘বাউল সম্রাট’- এর আসনে আসীন ও বিষ্ময় প্রতিভার নাম ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ।

বর্তমান ইন্টানেটের যুগে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ক্বারী সাহের ষাটের দশক থেকে শুরু করে হাজার হাজার গান ইউটিউবে স্থান করে নিয়েছে। এর কারণ তাঁর ঐ সময়ে আকাশচম্বী জনপ্রিয়তা। হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী, আশেকান তাকে দেখার জন্য, তাঁর গান এবং গায়কী শ্রবণ করার জন্য ঐ সময়ের রেকর্ড করার একমাত্র অবলম্বন টেপ রেকর্ডার নিয়ে দেশ- বিদেশ থেকে উপস্থিত থাকতেন। এর এ কারণে তাঁর যৌবনে স্বকণ্ঠে গাওয়া অসংখ্য গান আমরা শুণতে পাই,মুগ্ধ হই।

বৃহত্তর সিলেটে মালজুরা গানের অপ্রতিদ্বন্দী শিল্পী ছিলেন তিনি। টিকেট করে গান উপভোগ করার প্রচলন তাঁর হাত ধরেই শুরু। লোক মুখে প্রচলিত যে, অনেক সময় আসন সংকুলান করতে না পেরে আয়োজকরা তাঁর ভক্ত, অনুরাগীদের উপচেপড়া ভীরের কারণে আসর উন্মুক্ত করে দিতে বাধ্য হতেন।

এটা শোনা যায়, যে জায়গায় তাঁর গানের আসর বসত, এর ২/৩ দিন পূর্ব থেকেই ভক্তরা আশেপাশের বিভিন্ন গ্রামে অস্থান নিতেন। একারণে এলাকা জুড়ে এক উৎসবের আবহ তৈরি হতো।


সুফিবাদী ভাবধারার কবি ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ তাঁর রচিত গানের কথা ও সুরে, কখনও আদর্শ থেকে তিলসম বিচ্ছুত হননি। স্রোতে গা ভাসিয়ে সস্তা জনপ্রিয়তা তাঁকে আকৃষ্ট করেনি। কোন পদক,সম্মাননার প্রত্যাশিও তিনি নন। তাঁর ভাষায়, “ আমি গান করি আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায়”।

তিনি লিখেছেন, “গাওরে আশেকান আল্লা রাসুলের গুণগান” বা কাঁন্দি মোনাজাতে নবীজীর উচিলাতে, কবুল করো পাক সাঁই বা বন্ধুয়ারে অকুলিয়ার কুল ভরসা, শিখাইয়া পিরিতি করিলো ডাকতি, কি সুখে যায় দিন রজনী কেউ জানে না, , হে দীনবন্ধু মম হৃদয়ে এসে হও আবির্ভাব।

অসংখ্য গান তাঁর খোদার প্রেম-ভক্তির গভীরতা প্রকাশ করে। অসংখ্য দেশের গান ও দেহ তত্তে¡রও রচয়িতা এই বাউল কবি, মরমী সাধক ক্বারী আমীর উদ্দিন আহমেদ। উল্লেখ্য যে তিনি সংগীতে স্বতন্ত্র সুরের সৃষ্টি করেছেন যা তাঁকে অনন্য উচ্চতা দিয়েছে।
এ পর্যন্ত তার রচিত ৪টি খন্ড, ২টি পুস্তক আকারে বাজারে বেড়িয়েছে। সুফি সাধক ক্বারী আমীর উদ্দিন সাহেবের ৭৯তম জন্ম দিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা, কামনা করি সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন।

লেখক: বিভাগীয় প্রধান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন