Sylhet View 24 PRINT

সিলেটের প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের ভবিষ্যৎ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০২-২০ ২৩:০৯:৫১

ইশমাম কোরেশী নায়ীব :: আধ্যাত্মিকতার নগরী হিসেবে সিলেট সমগ্র দেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে সমাদৃত৷ তবে শুধু আধ্যাত্মিকতা না,বাংলাদেশের রেমিট্যান্স শিল্পে ও সিলেটের অবদান ধরা যায় সবার শীর্ষে৷ শিল্পায়ন,নগরায়ন,ডিজিটাল সেবা প্রধান কোনো দিক দিয়েই পিছয়ে নেই সিলেট।

ডিজিটালাইজেশন এর এই সময়টায় সিলেটে বাড়ছে অনলাইনে কেনাকাটার প্রতি ঝুঁক, এর প্রভাব লক্ষ করা যায় করোনাকালীন সময়েও।

একসময় ছিলো মানুষ শুধু ইলেকট্রনিক,বিউটিফিকেশন সামগ্রী, গেজেট,কিংবা বই অর্ডার করতো অনলাইনে, যার শুরুটা হয়েছিলো দারাজ-এর মতো বিভিন্ন ই-কমার্স ভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে। তবে সময়ের ব্যবধানে আজ সেটা ছড়িয়ে পড়েছে রেস্টুরেন্টের খাবার সামগ্রী,
আলু,পিয়াজ,তেল,চিনি,ডাল,সেম ডে পন্য ডেলিভারি পর্যন্ত।

২০২০ এর কোরবানির ঈদে অনলাইন গরুর হাট নামক নতুন কিছু সাথে পরিচয় ঘটেছে দেশবাসীর। সামগ্রিক দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় কেনাকাটার জন্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছে সাধারণ জনগণ। বলা যায় দেশে ই-কমার্স কর্মকান্ড দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতি মাসে নতুন নতুন সাইটের আগমন ঘটছে নতুন নতুন সেবা নিয়ে,তার কোনও কোনোটা কাস্টমাররা সাদরে গ্রহন ও করছে।
যদিও এ খাতের বর্তমান অবস্থা এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে খুব একটা গবেষণা পরিচালিত হয়নি; তবে Kaymu.com.bd সম্প্রতি প্রকাশিত  ‘A Report on e-commerce Trends in Bangladesh’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। Kaymu-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, ই-কমার্স খাতে লেনদেন প্রতিবছর কমপক্ষে ১০% বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স খাত বেগ পেতে শুরু করে ২০১৩ সাল এর শুরুর থেকে। ওই বছর দুটি ঘটনা ঘটেছিল যা ই-কমার্স এগিয়ে যাওয়ার প্রধান কারন হিসেবে ধরা হয়।

প্রথমত, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই বছর দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (থ্রিজি) চালু করে।

এরপর চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফোরজি) চালু হয়েছে। মানুষের স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। অন্যদিকে ই-কমার্স খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ এসেছে। সব মিলিয়ে খাতটি বড় হয়েছে। ক্রেতা ও বেড়েছে একই হারে৷

ই-কমার্স খাত এর নেতৃত্বস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের হিসাবে, তাদের সদস্যসংখ্যা ১ হাজার ২০০+। বছরে ই-কমার্স খাত থেকে বিক্রির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার মতো। অবশ্য এর বাইরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছোট ছোট পণ্যবিক্রেতা রয়েছেন। আবার দোকানমালিকেরা অনেকেই অনলাইনে পণ্য বিক্রি করেন। তাঁদের অনেকেই আবার সুপরিচিত অনলাইন মার্কেট প্লেস বা কেনাবেচার মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। সর্বোপরি বলা যায় কোনও না কোনো ভাবে ব্যাবসায়ীরা অনলাইন-এর সাথে জড়ি

ই-কমার্স নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারনাঃ
সংক্ষেপে যদি বলা হয়- "ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন ও সুবিধা ব্যবহার করাকেই ই-কমার্স বলে।"  অনলাইনে পণ্য বেচাকেনা এর সহজ উদাহরণ । বস্তুত, যে কোনো ব্যবসায় ইলেক্ট্রনিক্সের মাধ্যমে পরিচালনা করাই হল ই-কমার্স। তবে আজ জ্ঞ্যান অথবা অজ্ঞতায় বিভিন্ন জন বিভিন্ন ভাবে ই-কমার্সের সংজ্ঞা ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। বেশিরভাগ মানুষের কাছেই ই-কমার্স বলতে ফেইসবুক পেইজ খুলে বুস্টিং এর মাধ্যমে পন্য বিক্রি করাই বুঝায়।  

ই-কমার্সের বিশেষ কাঠামোঃ
সময়ের সাথে সাথে ই-কমার্স এর প্রচলন বৃহৎ ভাবে হওয়ায় সেটার ধরন দুই ভাবে লক্ষ করা যায়।  যেমন-
*Mcommerce (এম-কমার্স)
Mcommerce বা এম-কমার্স হল মোবাইলের মাধ্যমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা। মোবাইলে ইন্টারনেট চালু করে মোবাইলেই ব্যবসা করার নামই এম-কমার্স।
*Fcommerce (এফ-কমার্স)
Fcommerce কে সংজ্ঞায়িত করা যায় "ফেসবুক কমার্স" হিসেবে। সহজ কথায় ফেসবুকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্য ক্রমাগত বাড়তে থাকায় এফ কমার্সও তড়িৎ গতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সিলেট এর ই-কমার্স সেক্টরের দিকে নজর দিলে দেখা যায়- বেশ কয়েকটি প্রতিষ্টান খুব ভালোভাবেই তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে,তবে কিছু প্রতিবন্ধকতা,সীমাবদ্ধতা তো থাকছেই। এই সীমাবদ্ধতা গুলোতে কিছু ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভাবে কাজ করে,যেটা প্রতিষ্ঠান গুলোর সফলতার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। প্রোপার নার্সিং,ফান্ডিংয়ের অভাব,এক্সিকিউশনে টাইম বেশী নেওয়া,দক্ষ জনবল,সাপ্লাই চেন ম্যানেজমেন্ট-এর অব্যবস্থাপনা,ব্রেক ইভেন পয়েন্ট নিয়ে সঠিক ধারনার অভাব সহ আরও অনেক।

তবে কিছু নতুন ও পুরাতন ই-কমার্স স্টার্টআপ এর নাম নিতেই হবে। কোথায় যাবেন? খানিদানি ডুরমেড সহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যারা বর্তমানে বেশ ভালো একটি মার্কেট ও ইকোসিস্টেম তৈরী করেছে ই-কমার্স সেক্টরে। সিলেটের তরুণ উদ্দ্যোক্তাদের জন্যে সুযোগ করে দেওয়া যাতে এই সেক্টরটি আরও গ্রোথ করতে পারে।

অনলাইন নির্ভর এই বিশ্বে শুধুমাত্র ই-কমার্স/অনলাইন কেন্দ্রিক অর্থনীতি ই পারে একটি দেশকে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছাতে।
বিশ্বের সাথে পাল্লা দিকে, ভালো কিছু আইডিয়া ও লোকবল নিয়ে সিলেটের কিছু ই-কমার্স স্টার্টআপ এগিয়ে যাচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে সেগুলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে শুধু এই প্রতিষ্ঠানেরই না দায়িত্ব পুরো সিলেটবাসীর।

লেখক : তরুণ উদ্দ্যোক্তা ও সংগঠক।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী- পাইকার্ট (ই-কমার্স ভিত্তিক অনলাইন গ্রোসারি শপ)


সিলেটভিউ২৪ডটকম / মুক্তমত / ডালিম-১০

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.