আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রাতাগুলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশংকা পরিবেশবাদীদের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-১০ ১৬:০৫:১৮

আব্দুল হাই আল-হাদী :: কাপনা সিলেটের একটি দীর্ঘ নদী। নদীটি বড়হাওরের কুশিগাঙগ থেকে উৎপত্তি লাভ করে ক্রমশ: পশ্চিম দিকে অতিবাহিত হয়ে হরিপুর বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিলেট-তামাবিল সড়ক অতিক্রম করে করিচ নদীকে সঙ্গে করে এটি আরও পশ্চিম দিকে অতিবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে। এরপর এটি সারি নদী ওরফে চেঙ্গেরখাল নদীতে পতিত হয়েছে। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টের অস্তিত্বের সাথে নদীটির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ নদীকে ইজারা দিলে সরাসরি রাতারগুলের বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

কাপনা নদীকে জলমহাল’র তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে দেওয়া এক পত্রে এ আশংকার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পদক শরীফ জামিল ও সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আব্দুল হাই আল-হাদী স্বাক্ষরিত এ পত্রটি মঙ্গলবার হস্তান্তর করা হয়।

এতে বলা হয়, জাতীয় দৈনিক একটি পত্রিকায় গত ১লা মার্চ, ২০২১ ইং তারিখে জলমহাল ইজারার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। জৈন্তাপুর ভূমি অফিস থেকে প্রকাশিত এ বিজ্ঞপ্তিতে ২০ একর পর্যন্ত ২৯ টি জলমহালের যে তালিকা রয়েছে, তার মধ্যে কাপনা নদীর নাম রয়েছে। কাপনা নদীর উমনপুর হাওর এলাকার ৭.৭০ একর এলাকার ইজারার আবেদন আহবান করা হয়েছে। একটি নদীকে এভাবে জলমহালের তালিকাভূক্তির মাধ্যমে ইজারা প্রদানের ব্যাপারটি সত্যিই আমাদের অবাক করেছে।  

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রাতারগুল জলাবন বা বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা এ নদীর তীরে অবস্থিত। কাপনা নদী ও কৈয়ারখাল হচ্ছে রাতারগুলের বাস্তুসংস্থানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনভাবে কাপনা নদীর স্বাভাবিকতা নষ্ট হলে তার প্রভাব সরাসরি রাতারগুলের জীববৈচিত্র্যের উপর পড়বে। সেজন্য রাতারগুলের প্রাণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের স্বার্থে দ্রুততম সময়ে কাপনা নদীকে ’জলমহাল’ এর তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ইজারা বাতিল করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাই।  

জলমহাল ইজারা নীতিমালা অনুসারে এবং যে প্রক্রিয়ায় জলমহাল বন্দোবস্ত দেওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতে মৎস্যজীবী ছাড়া অন্য কেউ ইজারা পাওয়ার কথা নয়। তারপরও সরকারি অনেক কর্মকর্তাকে ফাঁকি দিয়ে অথবা যোগসাজশে বছরের পর বছর ধরে জলমহাল ক্ষমতাধরেরাই ভোগ করে চলছেন। যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি এ কাজ করেন, তাঁদের স্থানীয় নিজস্ব বাহিনী থাকে। তাঁদের ভয়েও অনেকে কথা বলতে পারেন না। প্রকৃত মৎস্যজীবীরা এতে প্রায় ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হন। সর্বোপরী তদারকির অভাবে জলমহালকে ইজারাদাররা নিজের ইচ্ছে মতো পানি আটকে, নদী শুকিয়ে যথেচ্চমতো ব্যবহার করেন। এতে নদীর স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়।   

উল্ল্যেখ্য, কাপনা নদী বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর একটি তালিকাভূক্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৮ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার । পাউবি প্রদত্ত নদীটির পরিচিতি নম্বর উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১১। হরিপুর বাজারে নদীর দু’পাশে নদীটির পরিচিতিমূলক সাইনবোর্ড রয়েছে। এরকম একটি স্বীকৃত নদীকে জলমহাল ঘোষণা এবং ইজারা প্রদান কোনভাবেই কাম্য নয় বলে মনে করছেন সচেতন মানুষজন।  

লেখক: সারি নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন