আজ বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ: বর্তমান উন্নয়ন প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-১৬ ১৮:৩৬:৪১

আল-আমিন :: আমার অহংকার হয়, আমি গর্ব করি। আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ তথা জন্মশতবার্ষিকী দেখার সুভাগ্য হয়েছে আমার। শত বছর আগে এই মহানায়কের আগমনের ফলে পঞ্চাশ বছর আগে আমরা পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে লাল-সবুজের পতাকা এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। এবছর বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোটি বাঙালি মহা উৎসবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে।

এজন্য শেখ মুজিব জন্মশতবর্ষ আমার কাছে এক অনুভূতিময় আনন্দের উজ্জ্বলময় বছর। এই মহানায়কের নেতৃত্বে পঞ্চাশ বছর পূর্বে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে মুক্তির সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অর্জন করেছে বিজয়। তাঁর ইশারায় স্বদেশভূমিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মানচিত্র। ফলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবময় এই বিজয় অর্জনের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দরবারে স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ করেছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয় ও জাতীয় পতাকার তাৎপর্য বিশাল ও দীর্ঘতর। বাংলাদেশের এই মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিশ্বের আর্কাইভে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ভিয়েতনামের পর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছিল। এই হিসেব কষে বাংলাদেশ আজ নব জাগরণে, অযুত সম্ভাবনায় মুহূর্তে। স্বাধীনতার চেতনার রূপ সংবিধানের জাতীয় চার মূলনীতি- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের আদর্শে। এজন্য আজকের বাংলাদেশ যুদ্ধময় অতীত বাংলাদেশকে ভুলে এখন সম্ভাবনাময় আগামীর বাংলাদেশের পথে উন্নয়নের মহাসড়কে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। ১৭ মার্চ ২০২০ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বছর পূর্ণ হয়েছে। ফলে ২০২০-২০২১ সালকে মুজিববর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। এজন্য এবছর আমাদের কাছে তাৎপর্য বহন করছে।

বাংলাদেশ মুজিব জন্মশতবর্ষে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ঘটেছে। এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বৃদ্ধি এ তিনটি সূচকের মানদন্ডে বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে মানদন্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্জিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাহসী এবং অগ্রগতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত রূপান্তর ও উল্লেখযোগ্য সামাজিক অগ্রগতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এবং মুজিব জন্মশতবর্ষে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সাফল্য এসেছে দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানীমূখী শিল্পায়ন, ১০০ টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানী আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচক। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ। দলমত নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের এই মুজিব জন্মশতবর্ষে।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবেলা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে ভূমিকা, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ক্ষুধা ও দারিদ্র অবকাঠামোবিহীন বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করা নিতান্ত সহজ কাজ ছিল না। এই কাজটিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করতে সক্ষম হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম রীতিমতো বিশ্বকে অবাক করেছে। এই সরকার শিক্ষাকে দেশের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছে। দেশে একসাথে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে নতুন করে জাতীয়করণ, এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদেরর চাকরি সরকারীকরণ, বেসরকারি স্কুল ও কলেজকে এমপিওভুক্তকরণ, শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২" প্রণয়ন এবং শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট গঠন করাসহ গৃহীত প্রকল্প পদক্ষেপ গ্রহন করেছে।

শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১”। তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক। উপজেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।

নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১”। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও। “জাতীয় শিশু নীতি-২০১১” প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দুঃস্থ, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে শিশু বিকাশ কেন্দ্র। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ–সাউথ এওয়ার্ডে।

বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০% এর উপর নারী। বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। দেশের সবকটি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়। টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে সকল নাগরিকের হাতে মোবাইল ফোন। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা।

বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে শাখা স্থাপন করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিক যেতে পেরেছে। বিদ্যুৎখাতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ জমাসহ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোজন।

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ঔষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ঔষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম রয়েছে। হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, মুক্তিযুদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার কাজে সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ ও ২০১৩ সালে আসা টানা দুই মেয়াদের ক্ষমতায় বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশ ও গোষ্ঠীর চাপ সত্ত্বেও শীর্ষস্থানীয় অপরাধীদের বিচার শেষে রায় কার্যকর করা হয়েছে। এই বিচার করতে পারা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে বড় সাফল্য। সেই সঙ্গে গত কয়েক বছরে ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করছে। ভূমি ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনের ফলে মানুষের দুর্ভোগ কমেছে। ই-টেন্ডারিং, ই-জিপির ফলে দুর্নীতি কমেছে। এখন ১০ টাকায় কৃষক ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলতে পারে। স্বাধীনতার পরপর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা ছিল বাংলাদেশের এই সরকারে বড় অর্জন। চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশ ও সংস্থা এই ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে পাশে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন "মাদার অফ হিউম্যানিটি" উপাধি। তলাহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্বও পালন করে সুনাম কুঁড়িয়েছে।

একাত্তরের বিজয় ছিল এ জাতির চার হাজার বছরের দীর্ঘ ইতিহাসের উজ্জ্বলতম অধ্যায়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধারা হলেন এ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাঁদের প্রতি সহস্র সালাম।

তাঁরা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করে জাতির জন্য বিজয় এনে উজ্জ্বলতম একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছেন। একটি নতুন স্বপ্নের বাংলাদেশ তৈরির ইতিহাস রচনা করেছেন। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান মন্ত্র উচ্চারণে সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার নিশ্চয়তা বিধানে বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম প্রজাতন্ত্ররূপে প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর ইহা সম্ভব হয়েছে এদেশের জনগণের সাহস, শৌর্য ও সীমাহীন ত্যাগের মাধ্যমে। আমি তরুন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অর্থাৎ মুজিব শতবর্ষে আমি স্বপ্ন দেখি আগামীর উন্নয়নের বাংলাদেশকে দেখার। আমি স্বপ্ন দেখি আমার জন্মভূমি প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর থাকবে। আমরা আকাশছোঁয়া স্বপ্নে নয়, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হবো। নিজেদের সৃজনশীলতায় সৃষ্টি করবো উদ্দীপ্ত। নতুন শক্তিতে নিজেদের ভাগ্য গড়ার প্রত্যয়ে আস্থাশীল হবো নিজের আত্মার প্রতি। কারণ আমরা স্বপ্ন দেখি একটি নিরাপদ বাংলাদেশের, একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের। আমরা চাই আমাদের সমাজ হবে দুর্নীতিমুক্ত, স্বার্থপরতা এবং সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে। আমাদের হৃদয় হবে আকাশের মতো উদার। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পশূন্য, সব মত-পথ-বিশ্বাসের অবাধ চারণক্ষেত্র এবং শহীদ মিনারের মতো পবিত্র। এই মুজিব বর্ষে আমাদের প্রত্যাশা, এদেশের নাগরিকরা দক্ষ, সুশিক্ষিত, সচেতন ও সৃজনশীল মানবসম্পদে রুপান্তরিত হবে। আমরা পরিণত হবো উত্তম ব্যক্তিতে। উন্নত সাংস্কৃতিক আবহ সংরক্ষণে সক্ষমতা অর্জন করে বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ধারা অব্যাহত থাকবে সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। বেকারত্বকে মানব সম্পদে রুপান্তর করে বিশাল জনসমষ্টির এই বাংলাদেশকে আমি দেখি শত সম্ভাবনা এবং প্রগতিশীল রাজনীতি, উন্নয়নে অগ্রগামী, শান্তিপূর্ণ, কল্যাণমুখী, সৃজনশীল এক জনপদরূপে। যে জনপদ হবে বিশ্ব দরবারে একটি দৃষ্টান্ত, শান্তির।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি সারাবাংলার আকাশে বাতাসে যার চিরন্তন জয় ধব্বনি শোনা যায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা।


লেখক: কথা সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন