আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সুশিক্ষার ক্রন্দন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-২৪ ১৩:০৪:০৫

আহমদ সাঈদ সালমী :: রাতুল বোনের বাড়ি যাচ্ছে। অফিসের ব্যস্ততা তাকে ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে। হয়ে যাচ্ছে অসামাজিক। সেই চিন্তা থেকেই অনেকদিন পর কথাও যাওয়া হচ্ছে। বোনের দুইটা ছেলেও আছে। একজন ক্লাস থ্রি আর আরেকজন ফোরে পড়ে। অনেকদিন পর ওদের সাথেও দেখা হবে ভেবে উচ্ছ্বসিত রাতুল। বাসের যাত্রা বিরতিতে ওদের সবার জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিলো। যাত্রাপথে জানালার পাশের সিটে বসেছে রাতুল। গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশের দোকানগুলোর বিলবোর্ড পড়তে পড়তে যাওয়া রাতুলের একটা অভ্যাস। ঠিক যেনো গাড়ীতে উঠে পত্রিকা পড়ার মতো !

যাইহোক, সে লক্ষ্য করলো ভুল বানানে সয়লাব দোকানগুলোর বিলবোর্ড। ওর কাছে সবচেয়ে খারাপ লাগে সহজ বানানগুলোর ভুল ব্যবহার যেগুলো একটু খেয়াল করলেই শুদ্ধ করে লিখা সম্ভব। দেখতে দেখতে কখন যে গন্তব্যে এসে পৌঁছেছে গাড়ি সে খেয়াল ই করেনি। বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা নিয়ে সোজা বোনের বাড়িতে হাজির রাতুল।

বোনের তো সেই রকম আনন্দ। এতদিন পর নিজের ভাইকে কাছে পেলো সে। ভাগ্নেরাও তো মামা কে দেখে, গিফট পেয়ে অসম্ভব খুশি। বোনের কাছে জানতে পারলো দুইজন ই নাকি নামকরা একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ছে। গত বছর দুইজন-ই তাদের নিজের ক্লাসে ফার্স্ট হয়েছে।রাতুল শুনে মনে মনে ভাবলো ওদের জন্য আরো কিছু গিফট আনা দরকার ছিলো, ফার্স্ট বয় বলে কথা !!

রাতে খাবার পরে দুই ভাগ্নের সাথে আড্ডা দিতে বসলো রাতুল। ভাবলো ভালো স্টুডেন্ট যেহেতু, কিছু কমন প্রশ্ন করি। ভাগ্নেরাও খুব খুশি, ওরা ব্যাপারটাকে কুইজ কুইজ হিসেবে নিলো।
রাতুল প্রশ্ন করলো, আচ্ছা বলতো, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কয় তারিখে পালন করা হয়? প্রশ্ন শুনেই ওদের মুখ কেমন জানি হয়ে গেলো! অনেক চিন্তা করে বড় ভাগ্নে বললো ২৬ শে মার্চ হবে হয়তো! রাতুলের তো চক্ষু চড়কগাছ! বলে কি ফার্স্ট বয়!

সে আরেকটা প্রশ্ন করলো, বলতো ভাগ্নেরা, আমাদের স্বাধীনতা দিবস কবে?? এবার ছোট ভাগ্নে মুখ উজ্জল করে বললো, মামা আমি জানি এটা ১৬ ই ডিসেম্বর!!

রাতুলের ততক্ষনে মাথার তার চিড়ে গেছে। সে লক্ষ্য করলো এসব প্রশ্ন বা বিষয়ে তাদের একদম আগ্রহ নেই। তাদের শুধু আগ্রহ ইংরেজী গ্রামার/রাইমস এসব নিয়ে !!

রাতুল ভাবছে, আজ বিজয়ের ৫০ বছর পরেও আমাদের আগামী প্রজন্মের এই দশা, যাদের উপর পুরো জাতির ভবিষ্যত নিহিত।তারা জানে না আমাদের গৌরবের কথা, তারা জানে না এই ভাষার মূল্য কতো, তারা জানে না এই দেশ কতটা ত্যাগে অর্জিত !!

সাথে সাথে তার মনে হতে থাকলো রাস্তার পাশের দোকান গুলোর বিলবোর্ডের কথা।এ যেনো ঠিক মুদ্রার এপিঠ অপিঠ!
রাতুল ভাবতে থাকে আর ঝাপসা চোখে সামনে শুধু অন্ধকার দেখতে পায়।

লেখক: সিনিয়র অফিসার, রুপালী ব্যাংক লিমিটেড

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন