আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

“আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” : সত্য, নাকি, কল্পকথা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-৩১ ১৪:৩১:০১

আশিক শাওন :: “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” সত্যি নাকি মিথ্যা - তা নিয়ে বর্তমানে অনেকেই সন্দিহান। গত কয়েক বছর যাবৎ একাধিক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হচ্ছে যে, পাকিস্তান সরকারের দায়ের করা এই মামলাটি সঠিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই করা হয়েছিলো; যদিও মামলার ৩৫ জন আসামীর মধ্যে বর্তমানে জীবিত কেবলমাত্র চারজনের প্রদত্ত মতামতের ভিত্তিতে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো আসলে বেশ দুরুহ বিষয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মধ্যে বর্তমানে জীবিত আছেন ক্যাপ্টেন (অব.) নূর মোহাম্মদ বাবুল (৫ নং আসামী), কর্নেল (অব.) শামসুল আলম (২৪ নং আসামী), কর্নেল (অব.) শওকত আলী (২৬ নং আসামী) এবং সার্জেন্ট (অব.) আবদুল জলিল (২৯ নং আসামী)।[সূত্র: দৈনিক সমকাল-এ ১৯ জুন ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার বার্ষিকী আজ’ - শিরোনামীয় প্রতিবেদন] এছাড়াও, ২০১১ সালে প্রথমা প্রকাশন থেকে যখন কর্নেল (অব.) শওকত আলীর বই “সত্য মামলা আগরতলা” প্রকাশিত হয় তখনও জীবিত কোনো আসামী (তখন এই ৪ জনের সাথে আরও জীবিত ছিলেন মামলার ১৯ নং আসামী মো. খুরশীদ, যিনি গত ২ জুলাই ২০২০ তারিখে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন [সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ ২ জুলাই ২০২০ তারিখে প্রকাশিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি খুরশিদ আর নেই’ - শিরোনামীয় প্রতিবেদন]) এর প্রতিবাদ করে কোনো মন্তব্য বা বিবৃতি দেননি।

    শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামী এবং কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (২ নং), স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান (৩ নং), প্রাক্তন এলএস সুলতান উদ্দিন আহমেদ (৪ নং), সিডিআই নূর মোহাম্মদ (৫ নং), আহমেদ ফজলুর রহমান সিএসপি (৬ নং), ফ্লাইট সার্জেন্ট মাহফিজউল্লাহ (৭ নং), প্রাক্তন কর্পোরাল আবুল বাশার (৮ নং), মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (৯ নং), প্রাক্তন হাবিলদার দলিল উদ্দিন (১০ নং), রুহুল কুদ্দুস সিএসপি (১১ নং), ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. ফজলুল হক (১২ নং), ভূপতিভুষণ চৌধুরী ওরফে মানিক চৌধুরী (১৩ নং), বিধানকৃষ্ণ সেন (১৪ নং), সুবেদার আবদুর রাজ্জাক (১৫ নং), প্রাক্তন হাবিলদার ক্লার্ক মুজিবুর রহমান (১৬ নং), প্রাক্তন ফ্লাইট সার্জেন্ট মো. আবদুর রাজ্জাক (১৭ নং), সার্জেন্ট জহুরুল হক (১৮ নং), মো. খুরশীদ (১৯ নং), খান মোহাম্মদ শামসুর রহমান সিএসপি (২০ নং), হাবিলদার আজিজুল হক (২১ নং), মাহফুজুল বারী (২২ নং), সার্জেন্ট শামসুল হক (২৩ নং), শামসুল আলম এএমসি (২৪ নং), ক্যাপ্টেন মো. আবদুল মোতালেব (২৫ নং), ক্যাপ্টেন এ শওকত আলী মিয়া (২৬ নং), ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা এএমসি (২৭ নং), ক্যাপ্টেন এ.এন.এম. নুরুজ্জামান (২৮ নং), সার্জেন্ট আবদুল জলিল (২৯ নং), মো. মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী (৩০ নং), লে. এস.এম.এম. রহমান (৩১ নং), প্রাক্তন সুবেদার এ.কে.এম. তাজুল ইসলাম (৩২ নং), মোহাম্মদ আলী রেজা (৩৩ নং), ক্যাপ্টেন খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ এএমসি (৩৪ নং) এবং লে. আবদুর রউফ (৩৫ নং)-কে সহযোগী হিসাবে উল্লেখ করে ১৯৬৮ সালে দায়ের করা ‘পাকিস্তান রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান গং’ নামক মামলাটিকে তৎকালীন শাসকেরা দেশবাসী এবং একই সাথে বিশ্ববাসীর নিকট শেখ মুজিব সহ অন্যান্যদের ইমেজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও সন্দেহের প্রকাশ ঘটানোর জন্যে সর্বত্র “আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা” নামে অভিহিত করতে থাকে; তাদের আশা ছিলো এধরনের নামকরণের ফলে শেখ মুজিবকে সকলের নিকট ভারতীয় চর ও বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারলে মামলাটি হয়তো জনসমর্থন পাবে এবং জনমত সরকারের পক্ষে যাওয়ায় দেশের অখণ্ডতার জন্যে হলেও তারা শেখ মুজিব সহ অন্যান্যের কঠোর সাজার পক্ষে অবস্থান নেবে।[সূত্র: বাংলাপিডিয়া-এর ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ - শিরোনামীয় নিবন্ধ]
 
    ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ যে সত্য সে বিষয়ে ১৯৮৭ সালে প্রয়াত আওয়ামী নেতা আব্দুল রাজ্জাক প্রথম মুখ খুলেছিলেন। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭ তারিখে সাপ্তাহিক মেঘনায় প্রকাশিত আব্দুর রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার হতে আমরা এ সম্পর্কে জানতে পারি; যেখানে তিনি বলেছিলেন, “তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) ভারতের সাথে তার একটা লিংক আপ আগে থেকেই ছিল - ১৯৬৬ সাল থেকে। তারা তাদের সবসরকম সাহায্য করবে। তুই ঐ ঠিকানায় দেখা করবি। তখন তিনি চিত্তরঞ্জন সুতারের সাথে দেখা করতে বললেন। সেই প্রথম ভারতের সাথে বঙ্গবন্ধুর যোগাযোগ করিয়ে দেয়। তবে ১৯৬৯ সালে জেল থেকে বেরিয়ে বঙ্গবন্ধু লন্ডন যান। সেখানে সুতার ও অন্যান্য ভারতের লোক লন্ডনে তার সাথে দেখা করেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সাথে ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি চুড়ান্ত হয়।” সেই সাক্ষাৎকারে তিনি একথাও বলেন, “আমরা ভারতের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেছি স্বাধীনতার জন্যে, অন্য কোন কারণে নয়।”

    ১৯৯১ সালে, ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র ত্রিশ বছর পুর্তিতে মামলার তৎকালে বেঁচে থাকা অভিযুক্তদের সংবর্ধনার অনুষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আয়োজন করা হয়; যেখানে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ সম্পর্কিত খবরাখবর কভার করতে আদালতে উপস্থিত থাকা প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহ্মদ তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের জাতীয় স্বার্থেই আমরা শিশুদের কিছু কিছু ভুল বা অসত্য তথ্য শেখাই; ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ হল সেরকমই একটি সত্য মামলা যা শিশুতোষ বইতে মিথ্যা বলে প্রকাশ করা হয়।” এর স্বপক্ষে তথ্য-প্রমাণ হিসাবে তিনি উল্লেখ করেন যে, সেই সময় সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ষড়যন্ত্রটি আদতেই সঠিক ছিল কি-না?’ এবং এর প্রতিউত্তরে বঙ্গবন্ধু নাকি বলেছিলেন, ‘ষড়যন্ত্রটি সঠিক ছিল।’ আবার, ঐ একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের বড় ভাই আমিনুল হক, যিনি তৎকালে বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তিনিও তার ভাষণে উল্লেখ করেন, তিনিও নাকি তার ভাই সার্জেন্ট জহুরুল হককে প্রশ্ন করায় উত্তর পেয়েছিলেন যে, “ঘটনা সঠিক ছিল।”

    সাংবাদিক ফয়েজ আহ্মদ সাহিত্য প্রকাশ হতে প্রকাশিত তার ‘আগরতলা মামলা, শেখ মুজিব ও বাংলার বিদ্রোহ’ গ্রন্থে একথাও উল্লেখ করেছেন যে, “ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শচীন্দ্রলাল সিংহ বলেন, ‘১৯৬৩ সালে আমার ভাই এমএলএ শ্রী উমেশলাল সিংহ সমভিব্যাহারে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ১০ জন ত্রিপুরার পালম জিলার খোয়াই মহকুমা দিয়ে আগরতলায় আমার আগরতলার বাংলোয় রাত ১২টায় আগমন করেন। প্রাথমিক আলাপ আলোচনার পর আমার বাংলো বাড়ি হইতে মাইল দেড়েক দূরে ভগ্নী হেমাঙ্গিনী দেবীর বাড়িতে শেখ সাহেব আসেন। সেখানেই খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। তারপর শেখ সাহেবের প্রস্তাবনুযায়ী আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওয়াহের লাল নেহেরুর সাথে দেখা করি। আমার সাথে ছিলেন শ্রী শ্রীরমণ, চীফ সেক্রেটারি। তাকে শ্রী ভান্ডারিয়ার, বিদেশ সচিবের রুমে রেখে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করি। তিনি শেখ সাহেবকে ত্রিপুরায় থেকে প্রচার করতে রাজি হননি। কারণ চীনের লড়াইয়ের পর এতো বড় ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। তাই ১৫ দিন থাকার পর তিনি (শেখ সাহেব) ত্রিপুরা ত্যাগ করেন। সোনামুড়া, পশ্চিম ত্রিপুরারই এক মহকুমা, কুমিল্লার সাথে সংলগ্ন। শেখ মুজিবুর রহমানকে সর্বপ্রকার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।”

    কর্নেল (অব.) শওকত আলী প্রথমা প্রকাশন থেকে ২০১১ সালে তার লেখা ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইয়ের ভূমিকাতে লিখেছেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আমরা যাঁরা মামলাটিতে অভিযুক্ত ছিলাম, ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি তাদের জন্য খুবই পীড়াদায়ক। কারণ আমরা ষড়যন্ত্রকারী ছিলাম না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পন্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর সম্মতি নিয়ে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠন করেছিলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, একটি নির্দিষ্ট রাতে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমরা বাঙালিরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সবকটি ক্যান্টনমেন্টে কমান্ডো স্টাইলে হামলা চালিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিদের অস্ত্র কেড়ে নেব, তাদের বন্দী করব এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করব।”

    কর্নেল (অব.) শওকত আলী ‘সত্য মামলা আগরতলা’ বইয়ের ৯৮ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে, “আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা, সেই ১৯৬১ সাল থেকেই কতিপয় দেশপ্রেমিক বাঙালি সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অফিসার বাংলাদেশকে সশস্ত্র পন্থায় স্বাধীন করার জন্য রীতিমত গোপন সংস্থা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছিল। এ জাতীয় কাজের অগ্রভাগে ছিলেন নৌবাহিনীর কয়েকজন সিনিয়র বাঙালি অফিসার যাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন আর্মি মেডিকেল কোরের ক্যাপ্টেন ডা. খুরশীদ উদ্দীন আহম্মদ, যিনি প্রেষণে নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন ও লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন।” এবং বইয়ের ১০৪ নং পৃষ্ঠায় এসে তিনি জানান কীভাবে পাকিস্তানীদের নিকট এই পরিকল্প ফাঁস হয়ে যায় ও মামলা শুরু সম্পর্কে, “আইএসআই ১৯৬৬ সালের শুরুতে বিপ্লবী সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল। আইএসআই সঙ্গে সঙ্গে মোয়াজ্জেম গ্রুপের মধ্যে চর ঢুকিয়ে দিয়েছিল এবং সেই চর বিপ্লবীদের একজন হিসেবে ১৯৬৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত মোয়াজ্জেমের সঙ্গে কাজ করেছিল। চর কর্তৃক সব বিষয় পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার পরই পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামীদের গ্রেফতার কার্যক্রম শুরু করেছিল।”

    যদিও তখন বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রদত্ত জবানবন্দিতে বলেছিলেন, “স্বাধীনতা-পূর্ব ভারতীয় ও বঙ্গীয় মুসলিমলীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আর বিদ্যালয় জীবনের সূচনা হতে আমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করেছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে আমাকে আমার লেখাপড়া পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর মুসলিমলীগ জনগনের আশা আকাঙ্খার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে, এর ফলে ১৯৪৯ সালে আমরা মরহুম জনাব হোসন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামিলীগ গঠন করি। আওয়ামিলীগ পূর্বেও ছিল এবং এখনও সেইরূপ একটি নিয়মতান্ত্রিকতার পথনুসারী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিদ্যমান। ১৯৬৬ সালের এপ্রিলে আমি যখন খুলনায় একটি জনসভা করে ঢাকায় ফিরতেছিলাম, তখন তারা যশোরে আমার পথ অবরোধ করে এবং আপত্তিকর বক্তৃতা প্রদানের অভিযোগে ঢাকা হতে প্রেরিত এক গ্রেফতারী পরোয়ানা বলে এইবারের মতো আমাকে গ্রেফতার করে। – কেবল মাত্র আমার উপর নির্যাতন চালাবার জন্য এবং আমার দলকে লাঞ্জিত অপমানিত ও আমাদেরকে কুখ্যাত করবার জঘন্য মনোবৃত্তি নিয়ে আমাকে এই তথাকথিত ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িত করা হয়েছে। আমি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামিলীগের সভাপতি। এটা একটি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যার একটি সুনির্দিষ্ট, সুসংগঠিত নীতি ও কর্মসূচী রয়েছে। আমি অনিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিকে আস্থাশীল নই। আমি কখনো পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করবার জন্য কোন কিছু করি নাই; কিংবা কোন দিনও এই উদ্দেশ্যে কোন স্থল, নৌ বা বিমান বাহিনীর কোন কর্মসূচির সংস্পর্শে কোন ষড়যন্ত্রমূলক কার্যে আত্মনিয়োগ করিনি। আমি নির্দোষ এবং এ ব্যাপারে পরপিূর্নভাবে অজ্ঞ।”[সূত্র:  বিচিন্তা-য় ২৫ অক্টোবর ১৯৮৭ তারিখে প্রকাশিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত বিবৃতি’ - শিরোনামীয় প্রতিবেদন]

    এহেন মামলা সত্যি বা মিথ্যা যাই হৌক না-কেন তত্কালে বাঙালিকে স্বাধীকার ও স্বাধীনতার জন্য তা এতোটাই আলোড়িত করে যে সাধারণ জনতা ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর হয়ে প্রবল গণ-আন্দোলন তথা উত্তাল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করে এবং তীব্র জন-প্রতিরোধের মুখে তত্কালীন ক্ষমতাসীন আইয়ুব খানের সামরিক সরকার পিছু হটতে ও শেষ পর্যন্ত মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক সরকারি প্রেসনোট ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হওয়া এই মামলাটির ১৯৬৯ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে সর্বশেষ আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করা হয় এবং অতঃপর ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখে পুনরায় অপর এক সরকারি প্রেসনোট ঘোষণার মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল কারাবন্দিকে নিঃশর্ত মুক্তি দানের মাধ্যমে শেষ হয়। মামলার আসামীরা ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তারিখেই মুক্তি পেয়ে পরেরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক বিশাল গণসংবর্ধনা যোগ দেন এবং সেখানেই জাতির আশা-আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক শেখ মুজিবর রহমানকে উপস্থিত ছাত্র-জনতার পক্ষ হতে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

লেখক : আশিক শাওন, বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) কর্মকর্তা হিসাবে শাহপরান সরকারি কলেজ, সিলেট-এ ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত।


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন