Sylhet View 24 PRINT

বউয়ের মালিক শহীদুল হেফাজত করেন মামুনুল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৪-০৭ ০১:১৬:০৯

পীর হাবিবুর রহমান :: ১. বিষাদগ্রস্ত পৃথিবীতে করোনার আরেক দফা ছোবল এসেছে। দেশে লকডাউন জারি হয়েছে। হাসপাতালে হাসপাতালে রোগী ধারণের ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই অবস্থা। কেবিন, শয্যা, আইসিইউ বাড়িয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোজ অর্ধশতাধিক মানুষ সরকারি হিসাবে মৃত্যুবরণ করছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এক দিনেই ৭ সহস্রাধিক। কতজন করোনা রোগ বহন করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, তা হিসাব নেই। ঘুম ভাঙলেই মৃত্যুর সংবাদ। রাত নামলেই শোক সংবাদ। সবকিছু বিষিয়ে উঠছে। অন্যান্য রোগের চিকিৎসা দিতে গিয়েও চিকিৎসকরা ঘাম ঝরাচ্ছেন। হঠাৎ বলা নেই, কওয়া নেই ঢাকার জনপ্রিয় এমপি আসলামুল হক অকালে আকস্মিক চিরনিদ্রা নিলেন। এই দুঃসময়ে লাশের মিছিল বাড়ছে। মানুষের শোক প্রকাশের সময়-সুযোগও মিলছে না। একটা অভিশপ্ত সময় আমরা অতিক্রম করছি। ইয়া নফসি ইয়া নফসি করছি। আল্লাহ আল্লাহ করছি। কখন কার ডাক আসে কেউ জানে না। আল্লাহ মহান সর্বশক্তিমান এই বিপদ থেকে মানুষকে হেফাজত করুন- এ আকুতি চারদিকে। সরকার সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। সতর্কতা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে শুরু থেকেই তাগিদ সবখানে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সবখানে সবকিছুতেই আমাদের বেপরোয়া ঔদ্ধত্য মনোভাব। মূর্খতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার মধ্যে বীরত্বের আনন্দ লাভ দেখা যাচ্ছে। মাস্ক পরতে নারাজ। সামাজিক দূরত্ব মানতে অনীহা। স্যানিটাইজার ব্যবহারে অনাগ্রহ। কি সমাবেশ, কি ওয়াজ-মাহফিল, কি সামাজিক অনুষ্ঠান, কি জানাজা নামাজে মানুষের আবেগের ঢল- সবকিছুতে বেয়াড়া আবেগের কাছে ভেসে গেছে করোনা থেকে বাঁচার স্বাস্থ্যবিধি। এখন জীবন-জীবিকার লড়াইয়ের সঙ্গে করোনার আগ্রাসন থেকে বেঁচে থাকার কি আকুতি। আমাদের সাহস, মনোবল আর বিচার-বুদ্ধি ও সচেতনতা কাজে লাগাতে না পারলে এ ঢেউয়ে পরিণতি কোথায় যাবে কেউ জানি না।

২. এর মধ্যে হেফাজতের তান্ডব চলছে। করোনাও তাদের সভা-সমাবেশ রুখতে পারেনি। গেল শুত্রুবারও বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজের পর তাদের উগ্র বক্তৃতাবাজি চলেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেছিলেন। হেফাজত আর তার সরকারবিরোধী মিত্ররা জঙ্গি মনোভাবে আচরণে বিরোধিতায় নামল। তিনি চলেও গেলেন। তবু থামাথামি নেই হেফাজতের। উগ্র-রণমূর্তি নিয়েই তারা তাদের অবস্থান বহাল রেখেছে। আসলে কি নরেন্দ্র মোদির বিরোধিতার জন্যই হেফাজতের এ তান্ডব, প্রলয়লীলা? রক্তের হোলিখেলা? নরেন্দ্র মোদি তো আগেও এ দেশে এসেছেন, কই তারা তো এভাবে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে প্রতিবাদে নামেনি? তাহলে আজ কেন? হেফাজতের আমির আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর উগ্রপন্থি নেতা বাবুনগরীর হাতে এর নেতৃত্ব আসে। তার চেয়ে আরও কয়েক গুণ উগ্র তালেবানি ধাঁচের মামুনুল হকরা সাত কদম এগিয়ে আসেন। মোদি এদের কাছে অসিলা মাত্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক সরকার তাদের দুশমন। এ সরকারকে ফেলে দিতে পারলেই তারা মনে করে কাবুলের তালেবানি স্টাইলে ক্ষমতা তাদের। তাদের সঙ্গে রয়েছে হাজার হাজার মাদরাসার অন্ধ ছাত্র-শিক্ষক। যাদের তারা নিষ্ঠুরভাবে হাসতে হাসতে গুলির মুখে ঠেলে দিতে পারে। হাটহাজারীকে তারা বানিয়েছে প্রশিক্ষণ ও শক্তির দুর্গ। পবিত্র বায়তুল মোকাররম মসজিদকে বানিয়েছে তাদের প্রচারে আসার কেন্দ্র। গত কয়েক যুগে সারা দেশে রাস্তার আশপাশে যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে কওমি মাদরাসা। এতিম ছাত্রদের লেখাপড়ার নামে তারা শিখিয়েছে ধর্মের নামে শহীদি জীবনলাভের শিক্ষা। রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি থেকে রেখেছে চিন্তা-চেতনায় উল্টো দিকে। মাদরাসাছাত্রদের কোরবানির ঈদে বাড়ি বাড়ি চামড়া আনতে পাঠায়। কোরবানি দিতে পাঠায়। মাদরাসা চালানোর সামর্থ্য নেই দেশের ক্ষমতা দখলের লোভ রাখেন এসব উগ্র সাম্প্রদায়িক হেফাজত নেতারা। সরকারের কাছ থেকে দাবি করে আদায় করতে করতে মাথায় এতটাই উঠে গেছে যে, এখন আর ভার রক্ষা করতে পারছে না। এরা লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের সব আবেগ-অনুভূতি, চেতনা ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে এক অন্ধকার তালেবানি যুগ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই তারা দাওরা পরীক্ষা মাস্টার্স সমতুল্য করেও তৃপ্ত হয়নি। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এনেও স্বস্তি পায়নি। বাড়াবাড়ির সব সময়সীমা অতিক্রম করেছে। এই তালেবানি আদর্শের উগ্রপন্থিরা নারী শিক্ষা চায় না, নারীকে কালো বোরখায় ঢেকে দিতে চায়। নারীরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ুক তারা চায় না। তারা গৃহবন্দী করতে চায়। পুরুষের পাশাপাশি নারী তার মেধা-যোগ্যতা ব্যক্তিত্বে নেতৃত্বে সমাজ ও দেশের জন্য কাজ করবে- এটা তাদের বিকারগ্রস্ত সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ চিন্তার বিষ। তারা ছেলেদেরই জ্ঞানে-বিজ্ঞানে আধুনিক ধ্যান-ধারণায় বেড়ে ওঠা, শিক্ষালাভের বিপরীতে। ছাত্ররা যত মাদরাসামুখী হবে পশ্চাৎপদ থাকবে, অন্ধকারে ডুবে থাকবে ততই তাদের লাভ। ধর্মের নামে তারা যখন তখন ব্যবহার করবে। যখন যা হুকুম দেবে বেহেশতের আশায় আগুনেও ঝাঁপ দেবে। এই যে মহাপ্রলয় ঘটাল, এই যে থানায় থানায় হামলা করাল, সরকারি অফিস-আদালত ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে নামিয়ে দিল, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি শাবল দিয়ে ভাঙচুর চালাল, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিবিজড়িত শিক্ষাঙ্গন ধুলোয় মিশিয়ে দিল- সবই তাদের ঠান্ডা মাথার কাজ। জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার প্রতীককে আঘাত কর, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে দাও। শিল্প-সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর ধুলোয় মিশিয়ে দাও। সবই তালেবানি দর্শন। তুরস্কে কামাল আতার্তুক সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থিদের কাঠোর হাতে দমন করেছিলেন। সেখানে এরদোগানের নেতৃত্বে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি আধুনিক বেশে ক্ষমতায়। এখানকার জামায়াত যে রাজনীতি ও শাসন চায় তার মডেলই তুরস্ক। জামায়াত সব নিপীড়নের মধ্যেও তাদের নেতারা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুললেও হাল ছাড়েনি। নীরবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অর্থায়নে দেশে-বিদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা কাজ করছে। তারা তাদের দলের প্রতি আদর্শের প্রতি কমিটেড। কঠিন সময় পার করছে। তাদের অর্থকে তারা ব্যক্তিগত ভোগবিলাসে নয়, দলের স্বার্থে ব্যয় করে। তাদের অর্থ তারা সরকারবিরোধী দেশি-বিদেশি নানা প্রচার-লবিংয়ে খরচ করে। হেফাজতের নেপথ্যেও তাদের অর্থ কথা বলছে। হেফাজতই নয়, এমন কোনো দল নেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি হোক যেখানে জামায়াতের লোক নেই। জামায়াতের টাকা কথা বলে না এমন কোনো জায়গা নেই। শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী ছোট দল থেকে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও টাকার ভাগটা ঠিকমতো পায়।
জামায়াতও হেফাজত দিয়ে সরকার পতন ঘটিয়ে তাদের ফ্যাসিস্ট শাসন চায়। বিএনপিও চায় হেফাজতে ভর করে ক্ষমতায় আসতে। আর হেফাজত চায় তাদের তালেবানি শাসন। এর কোনোটাই দেশের জন্য আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ।

৩. আওয়ামী লীগ বারবার বলে অনুপ্রবেশকারী বের করে দিতে হবে। সুবিধাবাদীদের দরকার নেই। কই কবে তালিকা করে কোথাও বের করেছে এমন নজির নেই। আশ্রয় কারা দিচ্ছেন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে? কারা নিজেদের পাল্লা ভারী করতে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন তাদের চেহারা কি উন্মোচিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি সত্যিকার অর্থে মনে-প্রাণে দলকে ভালোবাসে যারা এক যুগে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে তাদের তো এই দুঃসময়ে উদার হাতে এ উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে গণজাগরণ ঘটাতে অর্থ খরচ করার কথা। উগ্র সাম্প্রদায়িক ধর্মান্ধ শক্তির ভোটের আশায় আর কালসাপ না পুষে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির ঐক্য সুসংহত ও শক্তিশালী করার কথা। কই কোথাও কাউকে তো উদ্যোগ নিতে দেখিনি। নিজেরা নিজেরা গুঁতোগুঁতি মারামারি করতে পারেন আধিপত্য বিস্তারে, ক্ষমতার বলয় বাড়াতে, উগ্র সাম্প্রদায়িক হেফাজতকে দমনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নামতে তো পারেন না। এ সর্বনাশা আত্মঘাতী খেলা কেন? বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-চিন্তা-চেতনা হৃদয়ে লালন ও ধারণ করলে ক্ষমতার অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত হয়ে দুর্নীতির বাইরে সৎ ত্যাগের রাজনীতির পতাকা উড়িয়ে জনগণের মনটা জয় করতে হবে। জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। জনগণই আওয়ামী লীগের শক্তি ও ঠিকানা। জনগণের শক্তিতেই সারা দেশে উগ্র-সাম্প্রদায়িক তালেবানি হেফাজতকে প্রতিরোধ করতে হবে। ওরা হামেশা উগ্র দম্ভোক্তি দিচ্ছে। কোথাও না কোথাও অঘটন ঘটাচ্ছে। সব সীমা অতিক্রম করছে। আওয়ামী লীগকে তার সেই রণধ্বনি জয় বাংলা জনগণকে নিয়ে দিতে হবে। আবার সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের রক্তে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেøাগান দিতে হবে দেশজুড়ে বীর বাঙালিকে জাগিয়ে, ‘তুমি কে আমি কে - বাঙালি বাঙালি’, ‘তোমার আমার ঠিকানা - পদ্মা মেঘনা যমুনা’, বীর বাঙালি অস্ত্র ধর - তালেবানিদের প্রতিরোধ কর’। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর জীবনের দীর্ঘ সংগ্রাম, ১৩ বছরের কারাজীবন, বারবার ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে আপসহীন থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা মাটিতে, সম্ভ্রমহারা আড়াই লাখ মা-বোনের আর্তনাদ। কত ক্ষয়ক্ষতি অগ্নিসংযোগ। একাত্তরের বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর ক্ষমা নেই। এখানে সাম্প্রদায়িক উগ্রতার জায়গা নেই। আইএসআই, জামায়াতের অর্থে, ইন্ধনে, সমর্থনে নব্য তালেবানি শক্তির উত্থান এখনই রুখতে হবে। সেদিন ওরা সেøাগান দিয়েছিল, ‘আমরা সবাই তালেবান - বাংলা হবে আফগান’ আমলে নিইনি। ওদের ঔদ্ধত্য ও শক্তি আজ বেড়েছে। ওদের এখনই রুখে দাঁড়াবার সময়।

বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সৈয়দ বোরহান কবীর এ উগ্র সাম্প্রদায়িক তালেবানি শক্তির বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কলম ধরেছেন। হেফাজতকে সামনে রেখে সব সরকারবিরোধী শক্তি একজোট হয়েছে। সবাই বুঝতে পারছেন। রাজনৈতিক দর্শনে অতিবামের এতিম অংশও মাঠে। রাজনৈতিক বর্ণচোরা সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুও রহস্যময় কারণে মাঠে। বলছে, রাজনীতি সরাতেই লকডাউন। কি অদ্ভুত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোজ সরকারবিরোধী উগ্রপন্থিদের সরব অপপ্রচার নোংরামি চলছে। বৃহৎ দল আওয়ামী লীগ ও তার সুবিধাবাদীরা নীরব। একদম নিষ্ক্রিয়। আওয়ামী লীগের প্রচার সেল কই? বিভিন্ন গবেষণা সেল সিআরআইসহ সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কী করেন? আওয়ামী লীগ এক বছরে তার আদর্শিক গণমুখী কর্মীদের তাড়িয়েছে, নয় নষ্ট করেছে। তাই এ অবস্থা। কর্মীদের বাদ দিয়ে নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে পার্টিতে বেহুঁশ হয়েছিল। কোথায় আজ তারা? এই বিপদে দলের আদর্শের পক্ষে তাদের সাড়া নেই কেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলতে এত লজ্জা কীসের? এত উপকমিটির এত সদস্য কই কারও একটি স্ট্যাটাসও চোখে পড়ে না উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। কেন? সরকারবিরোধী উগ্রপন্থিদের মিথ্যাচারের জবাবও দিতে পারে না কেন?

৪. হেফাজত নেতা উগ্র তালেবানি মামুনুল হক সোনারগাঁয়ের রিসোর্টে এক নারীকে নিয়ে ধরা খেলেন। কই এটা যদি অন্য কেউ হতো কী অবস্থা বুঝছেন? প্রথমে পুলিশের ৩৬ ঘা। তারপর ট্রল আর ট্রল। মামুনুলরা সব সময় রিসোর্টে যাওয়া, অবকাশযাপনে যাওয়াকে বেলেল্লাপনা বলেন। ইহুদি-নাসারাদের সংস্কৃতি বলেন; কিন্তু তিনি গেলেন এমন এক নারীকে নিয়ে যিনি তার স্ত্রী কি না এ বিতর্কের ঝড় উঠেছে। বলেছেন আল্লাহর কসম শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করা দ্বিতীয় স্ত্রী। নাম আমেনা তাইয়েবা। মামুনুলের মিথ্যাচার কত নির্লজ্জতার প্রকাশ। কিছু দিন থেকে শয়তান তাকে ভর করেছিল বলেই হয়তো ঘুরতে ঘুরতে তাকে নিষিদ্ধ গন্ধমের আকর্ষণের মতো সেখানে নিয়ে গেছে। মামুনুল প্রথম স্ত্রীকে মিথ্যা শিখিয়েছেন। আমাদের শহীদুলের ভাইয়ের স্ত্রী, এসে বুঝিয়ে বলব। কবে কোথায় কাদের নিয়ে বিয়ে করলেন, তার তথ্য নেই। কাবিনও নেই। দুষ্ট ছেলেরা এখন বলছে, বউয়ের মালিক শহীদুল হেফাজত করেন তালেবানি মামুনুল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংসদে বলেছেন, যে নারীকে তিনি নিয়ে যান তিনি মামুনুলের স্ত্রী নন। আরও তথ্য আছে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তখন অনেক তথ্য পেয়েছে। মামুনুলকে মাদরাসাছাত্ররা লাঠিসোঁটা নিয়ে রিসোর্ট ভাঙচুর করে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তারা আইন, বিধিবিধান মানছে না। এটা হতে পারে না। এটা চলতে দেওয়া যায় না। লকডাউনে কওমি মাদরাসা বন্ধ করা যাবে না, এমন ঔদ্ধত্য তারা দেখিয়েছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সব স্কুল-কলেজ বন্ধ সেখানে মাদরাসা বন্ধের বাইরে। আপস করার সুযোগ নেই। এদের গ্রেফতার, আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কওমি মাদরাসা রাষ্ট্রের বাইরে নয়। এমনিতেই মাদরাসার অভ্যন্তরে যে বিকৃত যৌনাচার হয় তার খবর বেশ কিছু দিন ধরে প্রকাশ হচ্ছে। অনেকেই গ্রেফতার হচ্ছে। ছাত্ররা মাদরাসার শিক্ষক দ্বারা দিনের পর দিন বলাৎকারের শিকার হচ্ছে। কি ভয়ঙ্কর দৃশ্য। নির্যাতন-নিপীড়নের অভিযোগ তো আছেই। এসবে সরকারের মনিটরিং বাড়াতেই হবে। একজন ছাত্রীকে ইমাম দিনের পর দিন ধর্ষণ করে অপবিত্র অবস্থায় কোরআন নিয়ে শপথ করায় কাউকে বলবে না। আল্লাহর আরশ কাঁপে তাদের বীভৎস বিকৃত যৌনাচারে, ধর্ষণে। মামুনুল হকের অতীত রেকর্ডও ভালো নয়। এসবের জন্য অনেক মাদরাসা থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়। এদের নামের সঙ্গে ‘আল্লামা’ কেন গণমাধ্যম ব্যবহার করে বুঝি না। সংবিধান মানবে না, আইন মানবে না, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ মানবে না, রাষ্ট্রের রীতিনীতি মানবে না- তা হবে না। এদের একচুলও ছাড় আর দেওয়া হবে না। সরকারকে কঠোর থেকে কঠোর হতে হবে। এরা বাঙালির প্রাণের বর্ষবরণের বাংলা নববর্ষ নিয়ে কথা বললে তাদের কণ্ঠ রোধ করতে হবে। মাদরাসাকে মূলধারার আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। না মানলে এসব ধর্মান্ধ উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষ তৈরির অপরাধে বন্ধ করে দিতে হবে। মাদরাসা আর ইসলাম এক নয়। একসময় এ দেশে কত আলেম-ওলামা ওয়াজ করতেন। ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার করতেন। এ কালের উগ্রপন্থিদের মতো সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষ বাতাসে ছড়াতেন না। মানুষ তাদের শ্রদ্ধা-সমীহ করত। কিন্তু হেফাজতি তালেবানরা যে ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছেন তা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, আইনবিরোধী, সংবিধানবিরোধী, সমাজে অশান্তির আগুন ছড়ানোর। এদের  ছাড় নয়, আইনের আওতায় আনতে হবে।

৫. রাজনৈতিকভাবেই এ অন্ধকারের শক্তিকে রুখতে হবে। আমরা স্বপ্ন দেখতেই পারি। এদের বিরুদ্ধে জনগণের ইস্পাতকঠিন ঐক্য। ছাত্র-জনতার শক্তিশালী প্রতিরোধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ। এ দানব শক্তিকে রুখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অকুন্ঠ সমর্থন দিতে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রসমাজের উত্তাল মিছিল। চাই আগুন ঝরানো একেকটা মিছিল। নারীসমাজকে প্রতিরোধের আগুনে বিসুভিয়াসের মতো জনগণের সঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তির গণমিছিলে আবার সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠতে হবে। সারা দেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ অন্ধকার অশুভ শক্তিকে পরাজিত করতেই হবে। ওরা আঘাত হানার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওদের আক্রমণের আগে তাদের সরকারবিরোধী সব তৎপরতা ও তালেবানি শাসনের স্বপ্ন ধুলায় মিশিয়ে দিতে হবে। সব মন্ত্রী-এমপি জনপ্রতিনিধিদের উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির ভোটের হিসাব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে অস্তিত্বের লড়াইয়ে নামতে হবে। তাদের প্রতিটি অপ্রচারের জবাব সঙ্গে সঙ্গে দিতে হবে। গণমাধ্যমকেও এখানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রেখে এ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। ওদের ঔদ্ধত্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে। কেবল থানা নয়, গণমাধ্যমকর্মীদের ওপরও হামলা করছে। যারা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে, লিখবে, তাদের পিষে মারার হুমকি দিচ্ছে। বায়তুল মোকাররম থেকে ওদের বের করে দিতে মুসল্লিদেরও এগিয়ে আসতে হবে। হাটহাজারীর দুর্গ উচ্ছেদ করতে হবে। স্বাধীন দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ না মেনে সংবিধান, আইন, বিধিবিধান লঙ্ঘন করে  ওরা ঔদ্ধত্য দেখাতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হয়েছে। এ উগ্র সাম্প্রদায়িক তালেবানি শক্তিকেও আজ কঠোরভাবে দমন করতে হবে। এদের ক্ষমা নেই। এ দেশ উগ্র তালেবানিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া যায় না। কতজন গ্রেফতার হলে এদের দম্ভের পতন হবে। কতজনের বিচার হলে এদের উগ্র ঔদ্ধত্য থেমে যাবে তা বুঝতে বাকি নেই। এত বিএনপি গ্রেফতার হলে, এত জামায়াত গ্রেফতার হলে, রাষ্ট্রের আদর্শ, সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করা, বিরোধিতা করা, আইন হাতে তুলে নিয়ে থানায় হামলা, উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষে সমাজকে বিষাক্ত করার অপরাধে হেফাজতের ১০০ জনকে কারাগারে নিক্ষেপ করলে সব চুপসে যাবে। সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না তার কারাজীবন নিয়ে ‘কারাগারে ২২ মাস’ বই লিখেছেন। পড়ছিলাম। অবাক হয়েছি অনেকের নির্দয় আচরণে। তার কন্যার আর্তনাদ বুকে এসে বাজল বড়। মান্না যদি ২২ মাস কারাগারে থাকেন রাষ্ট্রদ্রোহী মামুনুল হকরা কেন বাইরে? এ প্রশ্ন এসে যায়। এই মামুনুল হকের চরিত্র, ধুতরা ফুলের মতো পবিত্র। সে জাতির পিতার ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। শরীরের সব রক্ত টকবগ করে দ্রোহের আগুনে ফুটেছে। ভাস্কর্য কেন স্থাপন হলো না? মামুনুলকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে জাতির পিতার ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করা হোক। এসব নিয়ে কোনো আপস হতে পারে না। শহীদের রক্তে আপসনামা লেখার অধিকার সরকার বা কাউকে ইতিহাস দেয়নি। দেবে না। বহু হয়েছে জাতির জনককে পরিবার-পরিজনসহ নৃশংস হত্যাকান্ডের পর। সেই ভয়ংকর দিন কবে শেষ হয়েছে। এখন এদের দমন করার উপযুক্ত সময়। সারা দেশ রাজনীতির সংস্কৃতির উর্বর ভূমি হয়ে উঠুক। সাম্প্রদায়িক উগ্রপন্থিদের জন্য শহীদের রক্তে লেখা মাটি নিষিদ্ধ হোক। প্রকৃত আলেম যারা শান্তির সুললিত বাণী প্রচার করেন তাদের চারণভূমি হোক। এই যে হেফাজতের উগ্রপন্থি এদের আয়ের উৎস, অর্থের জোগান যাচাই-বাছাই অনুসন্ধান করা হোক। এই যে ফ্যাশনেবল আজহারী থেকে অনেকে ভোগ-বিলাসের জীবনে বসে হেলিকপ্টারে উড়ে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ান ওয়াজে ধর্মের অপব্যাখ্যা করেন তাদের আয়ের উৎস সন্ধান করা জরুরি। সরকারকে কঠিন থেকে কঠিন হয়েই অ্যাকশনে নামতে হবে। গণজাগরণও ঘটাতে হবে। দেশের সর্বত্র বলতে হবে, ‘জাগো বাহে কুনঠে সবাই’।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.