Sylhet View 24 PRINT

অবশেষে স্থানান্তর হচ্ছে ছাতকের এমএনএ আব্দুল হকের সমাধিস্থল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২৬ ০০:০৩:১৫

মাহবুব আলম, ছাতক :: দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র ও শিল্পাঞ্চল ছাতকের অবিসংবাদিত নেতা ও প্রগতিশীল রাজনীতির ক্ষনজন্মা পুরুষ সাবেক এমএনএ, মহান মুক্তিযুদ্ধের-৫ নং সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা মরহুম আব্দুল হকের সমাধিস্থল অবশেষে স্থানান্তর হচ্ছে।

১৯৭১ সালের ১৯শে ডিসেম্বর সিলেট-সুনামগঞ্জ রোডে মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় এমএনএ আব্দুল হক চলে যান না ফেরার দেশে। সিলেট সার্কিট হাউজে সংগ্রাম কমিটির সভা থেকে প্রাইভেট গাড়ি যোগে সুনামগঞ্জে ফেরার পথে সিলেটের টুকেরবাজার এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। এসময় ছাতক শহরে তাকে সমাধিস্থ করার দাবি উঠে স্থানীয়ভাবে। ২০ ডিসেম্বর বিশাল জানাযা শেষে ছাতক শহরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় প্রবাসী কবরস্থানের পাশে তাকে চিরশায়িত করে রাখা হয়।

দীর্ঘদিন তার সমাধিস্থলটি অযন্তে-অবহেলায় ঝোপ-ঝাড়ে ঢাকা পড়ে ছিলো। চতুর্দিকে বাসাবাড়ি, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ ও দোকানকোটা তৈরী হওয়ায় মানুষের নজরের আড়ালে চলে গিয়েছিলো তার কবরস্থানটি।

অবশেষে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত বাশতলায় বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ এই সহচরের সমাধিস্থলটি আনুষ্ঠানিক স্থানান্তর করা হবে আগামীকাল ২৬ মার্চ।

এমএনএ আব্দুল হক ১৯৩০ সালে তৎকালীন সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমার ছাতক থানাধীন ভাতগাঁও গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মৌলভী আব্দুল ওয়াহিদ ও মাতা মাহেবুন নেছার অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন তিনি।

তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন পরিবারে জেষ্ঠ্য সন্তান। তার মেজো ভাই মরহুম আবুল হাসনাত আব্দুল হাই ছিলেন স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ছাতক-দোয়ারা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ আসন থেকে আব্দুল হাই পরপর ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এমএনএ আব্দুল হক ১৯৫১ সালে সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী হাইস্কুল থেকে মেট্টিক পাশ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন। তিনি আইএ পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিম উলাহ হলে জিএস নির্বাচিত হন। পরে হাইকোর্টে আইন পেশায়ও নিযুক্ত হন তিনি।

১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ওয়েষ্ট এন্ড হাইস্কুলে তিনি কয়েক বছর শিক্ষকতাও করেছেন। সুনামগঞ্জের ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে আব্দুল হক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৫৫ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং দীর্ঘ ১৩ মাস কারাভোগ করেন। রাজপথের অগ্রসৈনিক আব্দুল হক ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে বৃহত্তর ছাতক (ছাতক- দোয়ারাবাজার-কোম্পানীগঞ্জ) ও জগন্নাথপুর থানা নিয়ে গঠিত পাকিস্থান জাতীয় পরিষদ আসনে এমএনএ নির্বাচিত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ৫নং সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা ও ছাতক-জগন্নাথপুর-দিরাই’র প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল হক।

মরহুম এমএন এ আব্দুল হককে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৭২ সালে ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করা হয় আব্দুল হক স্মৃতি ডিগ্রী কলেজ। ৭২ পরবর্তি ২৫ বছর ছাতকের এ মহান নেতার নামে উলেখযোগ্য কিছু করতে দেখা যায়নি। দীর্ঘ ২৫ বছর ছাতকের কিংবদন্তি পুরুষ আব্দুল হক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানকে রাখা হয়েছে প্রচার বিমুখ।

১৯৯৬ পরবর্তি সময়ে আওয়ামী সরকারের আমলে মুহিবুর রহমান মানিক এমপি মুক্তিযুদ্ধের ৫নং সেক্টর হেড কোয়াটার বাঁশতলায় প্রতিষ্টা করেন এমএনএ আব্দুল হকের নামে হকনগর ও স্মৃতিসৌধ। ও জাউয়া বাজার ডিগ্রী কলেজে আব্দুল হক স্মৃতি ভবন নির্মাণ করেন।বর্তমানে বাশঁতলা-হকনগর একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এই পর্যটন কেন্দ্রেই তার সমাধিস্থল স্থানান্তর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরা তার বীরত্বগাথা ইতিহাস জানতে পারবেন বলে স্থানীয়দের ধারনা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৬ মার্চ ২০১৯/মাআ/ইআ

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.