আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং
শহীদনুর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের কৃষ্ণচন্দ্র স্মৃতি হিন্দু ছাত্রাবাস। আধাপাকা ৭ কক্ষের হিন্দু ছাত্রাবাসে মরিচা পড়া টিনের ছিদ্র দিয়ে পড়ছে বৃষ্টির পানি। একাধিক দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাত্রাবাসে থাকা ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্যে একটি শৌচাগার থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। নেই বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা। ময়লা আবর্জনা আর স্যাঁত স্যাঁতে পরিবেশে বসবাস করতে গিয়ে পোহাতে হয় নানা বিড়ম্বনা।
সবমিলিয়ে এ ছাত্রাবাসের অবস্থা বেহাল হলেও এখানে চলছে অছাত্রদের দৌরাত্ম্য। ছাত্র অধিনায়ক দেবাশীষ সরকার মিঠুর ছাত্রত্ব দুই বছর আগে শেষ হলেও এখনও হোস্টেলের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। দীর্ঘদিন অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করায় ছাত্রাবাসে থাকা বাকি ছাত্রদের উপরে চলে মিঠুর খবরদারি। তাঁর কথা অনুসারে সাধারণ ছাত্রদের থাকা-না থাকা, চলাফেরা, খাবারদাবার, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তাকে হারাতে হয় হোস্টেলের সিট। পড়াশুনা ফেলে রেখেও মিঠুর ব্যক্তিগত কাজে যেতেও বাধ্য করা হয় সাধারণ ছাত্রদের। ছাত্রাবাসে নতুন ছাত্র উঠতে গিয়ে কলেজ প্রশাসনে চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে টাকা লেনদেনের খেলা। তাছাড়া প্রায় সময় দিনেদুপুরে ছাত্রাবাসে অসামাজিক কার্যকলাপ করারও অভিযোগ আছে মিঠুর বিরুদ্ধে। মিঠুকে কেন্দ্র করে হোস্টেলে চলে অছাত্রদের বেহায়াপনা। এভাবে দিনের পর দিন অতিবাহিত হতে থাকলেও ছাত্রাবাসের বেহাল অবস্থা ও ছাত্রত্বহীন মিঠুর নৈরাজ্যে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না কলেজ কর্তৃপক্ষের। তাই বেহাল ছাত্রাবাস সংস্কার ও ছাত্রাবাস পরিচালনায় নতুন অধিনায়ক মনোনীত করতে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ প্রশাসনে তৎপরতা জোরদারের দাবি জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু ছাত্রাবাসটি বেহাল অবস্থায় থাকলেও এটি সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। এতে আমাদের আবাসন, সেনিটেশনের সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি কলেজ প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। অধিনায়ক মিঠুর ব্যাপারে এই শিক্ষার্থীরা বলেন, মিঠু দা’র ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে সেই কবে। তিনি এখনও আমাদের উপর খবরদারি করে যাচ্ছেন। উনার ইচ্ছা অনুযায়ি সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয় এখানে। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।
অভিযোগের ব্যপারে ছাত্রাবাস অধিনায়ক দেবাশীষ সরকার মিঠু বলেন, আমি ডিগ্রি পাস করেছি। মাস্টার্স ভর্তি হওয়ার জন্যে আগামীতে চেষ্টা করবো। আমি এখনও সরকারি কলেজের ছাত্র। বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যা। তবে এ ব্যাপারে প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি চা চক্রের মাধ্যমে আরো বলবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে ছাত্রাবাসের ছাত্রদেরকে নিয়ন্ত্রণহীন আখ্যা দিয়ে ছাত্রাবাস সিলগালা করার কথা জানিয়ে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ নীলিমা চন্দ বলেন, ছাত্রাবাসের ছাত্ররা কলেজ প্রশাসনের সাথে একাধিকবার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো কথা শুনতে রাজি না তারা। তারা কলেজ প্রশাসনকে কোনো টাকা দেয় না। বিদ্যুৎ বিল দেয় না।
তিনি আরো বলেন, একটা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এই ছাত্রাবাস পরিচালিত হচ্ছে। তাই ছাত্রাবাস সিলগালা করে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করে পরে পুনরায় চালুর জন্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ এপ্রিল ২০১৯/এসএনএ/পিডি