আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সুনামগঞ্জে কোটি টাকার কিচেন মার্কেট এখন ময়লার ভাগাড়!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২২ ১১:১৭:৫৭

শহীদনুর আহমেদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:: সুনামগঞ্জ পৌর শহরে ফল, সবজি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের জন্য ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন কিচেন মার্কেটের নিচের অংশ ব্যবহার করা হলেও উপরে ফল ও সবজি বাজার এখনো চালুই হয়নি। ব্যবসায়ীরা বরাদ্দ নিলেও তারা কেউই মার্কেট চালুর পর পসরা নিয়ে বসেননি। নির্ধারিত স্থানে না বসিয়ে অন্যত্র জায়গায় ফসরা বসিয়ে ফল ও সবজি বিক্রি করছেন তারা। শুধু তাই নয়, সুরমা নদীর তীরবর্তী জগন্নাথবাড়ী এলাকায় দ্বিতল বিশিষ্ট কিচেন মার্কেটিতে ময়লার স্তুপও করে রাখছেন তারা। এছাড়াও অস্থায়ী ফল-ও সবজির বাজারের কারণে শহরের সৌন্দর্য্যও নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এই অব্যবস্থাপনা চললেও সুখ নিদ্রায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সুনামগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের জগন্নাথবাড়ি এলাকায় পুরাতন মাছ বাজার ভেঙে নির্মাণ করা হয় দ্বিতল বিশিষ্ট কিচেন মার্কেটটি। মার্কেটের নিচে মাছ ও শুটকির বাজার করা হলেও উপর তলায় সবজিসহ বিভিন্ন খুচরা ব্যবসার ব্যবস্থা রাখা হয়। মাছ বাজারের জন্য নিচতলা ব্যবহার হলেও উদ্বোধনের পর থেকেই উপরের তলা ব্যবহৃত হচ্ছে না। সেখানে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও উপরের তলায় স্তরে স্তরে ময়লার স্তুপ। অনেকে বাথরুম করেও নোংড়া করে রেখেছে।

সবজি ব্যবসায়ীরা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বরাদ্দ নিলেও কিচেন মার্কেটে না ওঠে জেল রোড, জগন্নাথবাড়ী, থানা পয়েন্ট, ট্রাফিক পয়েন্ট এলাকায় অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করে ব্যবসা করছে। এতে ফুটপাত দখলসহ জনগণের চলাচলও বিঘ্নিত হচ্ছে। তাছাড়া ট্রাফিক পয়েন্টে বাসা ও দোকানের সামনে ফুটপাত দখল করে ফল ও সবজি ব্যবসায় কয়েকটি পরিবারের স্থায়ী সমস্যা হচ্ছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।

জানা গেছে, পৌর কর্তৃপক্ষ কিচেন মার্কেটের নির্ধারিত বরাদ্দকৃদ অংশ ব্যবহারের জন্য ব্যবসায়ীদের তাগাদা দিয়ে আসলেও তারা তা কর্ণপাত করছে না।

এদিকে ২০১৬ সালের দিকে শহরের ওয়েজখালী এলাকায় প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি কিচেন মার্কেট নির্মাণ করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। সেই মার্কেটের উদ্বোধনের পরে কয়েকদিন ব্যবসা করলেও পরবর্তিতে সেই পূর্বে অবস্থায় ফিরে যান ব্যবসায়ীরা। সেখানে এখন অনেকে স্টোর হিসেবে ব্যবহার করে নোংড়া করে রেখেছেন। ওয়েজখালী সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের দুপাশে অস্থায়ী দখল করে মাছ, সবজি ও ফল ব্যবসা করছেন তারা। সড়ক ও জনপথের উদ্যোগে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও ব্যবসায়ীরা আবারও সড়ক দখল তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ফলে যান চলাচল, ক্রসিং কিংবা স্টপিজে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। শহরে সকাল-বিকেল যানজট লেগেই থাকে। পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেও পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগে। সচেতন পৌরবাসীর অভিযোগ দুটি কিচেন মার্কেটের নির্ধারিত স্থান ব্যবহার না হওয়ায় সেখানে রাতে নানা অসামাজিক কার্যক্রম চলছে।

জানা গেছে, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান মমিনুল মউজদীন শহরের জেল রোডে ফল মার্কেট করেছিলেন। তিনি ফল ব্যবসায়ীদের দোকানকোটাও বরাদ্দ দিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বেশি দাম পেয়ে বিক্রি করে এসেছেন বরাদ্দের দোকান কোটা। এখন সড়ক দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সবজি ব্যবসায়ী আব্দুল মান্নান সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা সিএন্ডবি’র জায়গার উপর নিরুপায় হয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। সিএন্ডবি’র জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে দিলে আমরা সরে যেতে রাজি আছি। কিন্তু আমাদের ব্যবসার সুবিধা করে দিলে জীবন জীবিকার একটা উপায় হবে।’
 
ফল ব্যবসায়ী মো. তাজ উদ্দিন সিলেটভিউকে বলেন, ‘উচ্ছেদ করে দিলে আমরা সরে যেতে রাজি। কিন্তু আমাদের জীবন জীবিকার কী উপায় হবে? বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে আমরা জীবন ধারণ করব কি করে? ব্যবসা করার সুবিধা করে দিলে আমরা উপকৃত হবো ‘

তবে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে তারা কেন যাচ্ছেন না জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেন নাই।

কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী বলেন, পৌর কিচেন মার্কেটে বিশুদ্ধ পানি বা চৌচাগার, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকা এবং মার্কেটে প্রবেশ মুখের সরকারি জায়গার ওপর গড়ে উঠা ফার্ণিচার ব্যবসায়ী খেলু মিয়ার প্রতিষ্ঠানটি মার্কেট চালু করার জন্য বাঁধা হয়ে আছে। এ কারণে আমরা সিএন্ডবি’র জায়গার উপর অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা করে যাচ্ছি। পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের এ অসুবিধা দূর করে দিলে আমরা সকল ব্যবসায়ী পৌর কিচেন মার্কেটে চলে যেতে রাজি আছি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ পৌর মেয়র নাদের বখত সিলেটভিউকে বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ ওয়েজখালীর ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ওয়েজখালী মিনি কিচেন মার্কেট নির্মাণ করে দিয়েছে। চালু করার দায়িত্ব ব্যবসায়ীদের। চালু করার পর যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে আমরা প্রস্তুত আছি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম সিলেটভিউকে বলেন,    ‘ওয়েজখালী এলাকার  সড়ক ও জনপথের জায়গার ওপর গড়ে উঠা অবৈধা স্থাপনাগুলো শীঘ্রই উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২২ আগস্ট ২০১৯/ শহীদনুর/ কেআরএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

সাম্প্রতিক সুনামগঞ্জ খবর

  •   জগন্নাথপুরের মোশাহিদের স্বপ্ন ঝড়ল ফ্রান্সের সড়কে
  •   তাহিরপুরে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
  •   দিরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে এসএসসি ১৪ ব্যাচের মিলনমেলা
  •   দোয়ারাবাজারে ৩শ’ টাকার জন্য সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু, আটক ২
  •   সুনামগঞ্জে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট'র উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী
  •   ছাতকে ভাবির সাথে দেবরের পরকিয়া, ভাতিজা খুন
  •   দোয়ারাবাজারে হামলায় সম্ভাব্য ইউপি সদস্য প্রার্থী আহত, উত্তেজনা
  •   গ্রামে এসে নৌকা নিয়ে ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী