আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে জন্মের ৫ বছর পর সন্তানের পিতৃপরিচয় শুরু হয় তুলকালাম কান্ড। এ ঘটনায় ধুম্রজালের সৃষ্টি হলে বিষয়টি শেষমেষ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালত স্থানীয় পুলিশকে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম টিলাগাঁও গ্রামের ইদ্রিছ আলীর অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রিপা বেগম পর পুরুষের লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়েন। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন মেয়ের পরিবারবর্গের কথা অনুযায়ী ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একই গ্রামের রিপার খালাতো ভাই মিন্টু মিয়ার ছেলে জাকির মিয়ার সাথে তাকে বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়ের পর থেকেই জাকির রিপাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে রাজি হয়নি। নিকটাত্মীয় বলে বিষয়টি প্রথম থেকেই ধামাচাপা দেয়ায় লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে চলে যায় জাকির। ৫ মাস পর রিপা একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। এ সময় জাকিরকে পিতার পরিচয়ে কন্যাসন্তান সিপার জন্ম নিবন্ধনও তৈরি করা হয়।
কিন্তু বিয়ের দীর্ঘদিন পর সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য। এলাকাবাসী জানান, জাকিরের পরিবার নিরীহ বিধায় স্থানীয় মোড়লদের চাপে জাকির সন্তান সম্ভবা প্রতিবন্ধী রিপাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। জোরপূর্বক তার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বিয়ে দেয়ায় জাকির লজ্জায় বাড়ি ছাড়া হয়। বর্তমানে স্বামী হিসাবে জাকিরের সাথে সংসার করাটা মোটেই গ্রহনযোগ্য না হওয়ায় বিয়ের ৫ বছরের মাথায় সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে সমাজে মুখ খুলতে বাধ্য হন প্রতিবন্ধী রিপা বেগম।
স্থানীয় সালিশ বৈঠকে রিপা অভিযোগ করে, ওই সন্তানের (শিপা বেগম) পিতা জাকির নয়, তার পিতা একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র মাহবুব। রিপার পরিবার নিরীহ বিধায় মূল ঘটনাকারী ও তার আত্মীয়স্বজনদের প্ররোচনায় এবং স্থানীয় মোড়লদের চাপে পড়ে মুল বিষয়টি আড়াল করতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল। তখন জাকিরের ওপর দায়ভার চাপিয়ে জোরপূর্বক তাকে তার সাথে বিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেন প্রতিবন্ধী রিপা।
বিয়ের ৫ বছর পর খোদ সন্তানের জননীর মুখ থেকে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসায় এ নিয়ে আরো জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বসলেও মাহবুব ও তার পরিবার সন্তান প্রসবের ৫ বছর পর সন্তানের পিতার দাবিটি অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তা মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি সমাধান হয়নি।
অপরদিকে মাহবুবের পরিবার প্রভাবশালী বিধায় প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র অসহায় রিপার পরিবারকে একঘরে করে রাখাসহ নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছেন বলেও জানা যায়।
স্থানীয় সালিশপক্ষ বিষয়টি সমাধান দিতে ব্যর্থ হলেও অবশেষে প্রতিবন্ধী রিপার বাবা হতদরিদ্র ইদ্রিস আলী আদালতের শরণাপন্ন হয়ে মাহবুবকে প্রধান আসামী করে দুইজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা দায়ের করেন।
সম্প্রতি আদালত সন্তানসহ অভিযুক্ত মাহবুব ও জাকিরের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন দোয়ারাবাজার থানা পুলিশকে। পুলিশ উভয়ের ডিএনএ টেস্টের প্রস্তুতি নিলে মাহবুব এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়।
সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ২২ আগস্ট ২০১৯/ টিআই/ এসএইচ