Sylhet View 24 PRINT

সুনামগঞ্জে নির্ধারিত সময়ের পরেও পাসপোর্ট পাচ্ছেন না বিদেশযাত্রীরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-১৬ ১৬:৫০:৫৫

শহীদ নুর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পান না সুনামগঞ্জ জেলার আবেদনকারীরা। নির্ধারিত সময় ছাড়িয়ে অপেক্ষা করেও পাসপোর্ট  বুঝে পাচ্ছেন না বিদেশযাত্রীরা। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ আবেদনকারীদের।

অতিরিক্ত টাকা খরচ করার পরও তাদের কেউই পাসপোর্ট অফিস প্রদত্ত স্কিপের তারিখে পাসপোর্ট বুঝে পাননি। এভাবে জরুরি পাসপোর্টেও ফি দিয়েও তারা নির্ধারিত তারিখে পাওয়া যায়নি। ফলে আর্থিক ক্ষতিসহ বিদেশ গমনে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া কোনো এজেন্ট ছাড়া নিজে পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে গেলেও পদে পদে হয়রানির মুখে পড়তে হয় আবেদনকারীকে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে পাসপোর্টের আবেদনের খরচ কম হলেও পাসপোর্ট অফিসের নানা জটিলতায় ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় সাধারণ গ্রাহকদের।

সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক পোসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, সাধারণ পাসপোর্ট (ভ্যাটসহ) ৩ হাজার ৪৫০ টাকা ও জরুরি পাসপোর্ট (ভ্যাটসহ) ৬ হাজার ৯০০ টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রাহকের কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়। অনুকুল পুলিশ প্রতিবেদন ও ডাকযোগে প্রাপ্তি সাপেক্ষে সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ২১ দিন ও জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ১১ দিন সময় লাগে। এছাড়া বাড়তি কোনো টাকা গ্রহণ করার নিয়মও নেই। কিন্তু কখনো আবেদনকারীরা নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন এমন কোন খবর জানা যায়নি। পাসপোর্ট ডেলিভারিতে বিলম্ব যেন ‘নিয়ম’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাধারণ পাসপোর্ট পেতে দুই থেকে আড়াই মাস ও জরুরি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ১ মাসেরও অধিক সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। তবে কেউ কেউ জানান, অতিরিক্ত টাকা খরচ করে দালালের সাহায্যে সরাসরি ঢাকা পাসপোর্ট অফিস থেকে দ্রুত সময়ে পাসপোর্ট নিয়ে আসা যায়।

অভিযোগ আছে তখন গ্রাহকদের সাথে পাসপোর্ট অফিসের লোকদের অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের। নিজে নিজে ফরম পূরণ করে জমা দিতে আসা লোকজন বিড়ম্বনায় পড়েন বেশি। এটা নেই, সেটা নেই, কাটাকুটি কেন, কাকে দিয়ে পূরণ করিয়েছেন এমন প্রশ্ন শুনতে হয় তাদের। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে মাধ্যমে অনলাইনে আবেদনকৃত ফরম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত ফটোকপি প্রদান করলেও মূল কপি না দেখালে ফেরত দেয়া হয় আবেদন। মূলত পাসপোর্ট থেকে কমিশনের ভাগ কমে যাওয়ার আশঙ্কার কারণেই স্বউদ্যোগে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন বিড়ম্বনায় পড়েন বলে অভিযোগ ভোক্তভোগীদের। পাসপোর্ট কর্মকর্তার মুখোমুখি, নাম্বারিং, তথ্য আপলোড এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টের সময় পদে পদে ভোগান্তি ও বিব্রতকর প্রশ্ন করেন পাসপোর্ট অফিসের লোকজন।

এদিকে আবেদনপত্র জমা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়া শেষ হলেও অনেকদিন পাসপোর্ট অফিসেই আবেদন পরে থাকে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্যে দেরিতে আবেদন যায় বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

এদিকে সরকারি খরচে পুলিশ ভেরিফিকেশনের তথ্য নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা গ্রহণের অভিযোগও পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এর এদিক সেদিক হলেই পুলিশ প্রতিবেদন প্রতিকূলেও যাওয়ার শঙ্কা থাকায় ভেরিফিকেশনের জন্য বাড়তি টাকা খরচ করতে বাধ্য হন সাধারণ মানুষ। অনেকটা মুখ বুঝেই সেটা দিয়ে থাকেন তারা। আবেদনকারীর বাড়ীতে গিয়ে তথ্য যাচাই করার কথা থাকলেও পুলিশের সংশ্লিষ্টরা আবেদনকারীকে থানা নিয়ে এসে ভেরিফিকেশন সাড়েন। এখানে থাকে টাকার লেনদেন। সঙ্গত কারনেই পুলিশ রিপোর্ট প্রদানে দেরী করেন সংশ্লিরা। পুলিশ রিপোর্ট আসলেও ঢাকায় পাঠাতে নয়ছয় করেন পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্টরা। ঢাকায় তথ্য প্রিন্টের জন্যে পাঠালেও আসার যেনো নাম নেই। প্রিন্ট জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্ট প্রদানে বিলম্ব করা হয়। পাসপোর্ট রিসিভ কাউন্টারে যেথে আসতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন বিদেশযাত্রীরা। দেরিতে পাসপোর্ট বুঝে পেয়ে অনেকেই ক্ষতি স্বীকার। ভিসা প্রাপ্তি, জরুরী রোগী ও ব্যবসায়ি কাজে আর্থিক ভাবে ক্ষতি হন তারা।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম। বিদেশ গমনের জন্যে গত ২১ জুলাই পাসপোর্টর আবেদন জমা দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদান করেছেন। ১১ আগস্ট পাসপোর্ট বুঝে পাওয়ার কথা থাকলেও ১৫ সেপ্টম্বর রবিবার পর্যন্ত ফখরুল পাসপোর্ট অফিসের মাধ্যমে জানতে পারেন তাঁর পাসপোর্ট প্রিন্ট শাখা আছে। পাসপোর্ট বুঝে পেতে আরো ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে।

২৩ দিনে পাসপোর্ট বুঝে পাওয়ার কথা থাকলেও দুই মাস সময়েও পাসপোর্ট না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি জরুরী প্রয়োজনে পাসপোর্টের আবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু আজ এতো দিনেও পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছি না। ২০ আগস্ট পাসপোর্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে দেখি আমার আবেদনের পুলিশ রিপোর্টই দেয়া হয়। থানার সাথে যোগাযোগ করলে তারা ২৫ আগস্ট পুলিশ রিপোর্ট পাঠান। ২৯ আগস্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি আমার আবেদন এখনও ঢাকায় পাঠানো হয়নি। আঞ্চলিক অফিসারকে রিকোয়েস্ট করে ঢাকায় পাঠালেও এখনও পর্যন্ত পাসপোর্ট হাতে পাইনি। আর কোদিন পাবো তা জানি না। ফলে আমি ভিসা প্রসেসিং বিলম্বতায় পড়ে ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছি।

দিরাই উপজেলার মোহাম্মদ জিতু মিয়া। বিদেশ গমনের জন্যে গত ২৮ আগস্ট পাসপোর্টের জন্যে আবেদন করে ছিলেন। রবিবার অফিস খোঁজ নিয়ে জানেন তাঁর পাসপোর্টও প্রিন্ট শাখা আছে। ফখরুল ইসলাম, জিতু মিয়ার মতো অনেক আবেদনকারী অপেক্ষা আছেন কবে পাসপোর্ট হাতে পাবেন। এমন পরিস্থিতিতে দ্রত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট বুঝে পেতে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ভোক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে  কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারি পরিচালক আইরিন পারভীন ডালিয়া বলেন, প্রিন্টিং সেকশনে জটিলতার কারনে সময় মতো পাসপোর্ট প্রদান করতে পারছি না আমরা। এর জন্যে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান পূর্বের চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে বলে জানান তিনি।



সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/এসএনএ/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.