আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

তাহিরপুরে শহীদ সিরাজুলের সমাধি, বন জঙ্গলে ভরপুর

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-০৮ ১৫:৪৫:৪৮

এম এ রাজ্জাক, তাহিরপুর :: স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও জঙ্গলই রয়ে গেছে তাহিরপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় যুদ্ধকালীন সাব সেক্টর ট্যাকেরঘাট শহীদ সিরাজুল ইসলামের সমাধিস্থল। ধীরে ধীরে জঙ্গলের আড়ালে মুছে যেতে বসেছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার শেষ চিহ্নটুকু। শহীদ সিরাজুল ইসলামের নামে লেকের নাম করণ করা হলেও সমাধিস্থলের খোঁজ রাখছেন না কেউ। সমাধিস্থলটি বন জঙ্গলে ভরে সেই কাল থেকে এখন পর্যন্ত অরক্ষিতই রয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার ছোট ছিলানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন দেশ প্রেমিক সিরাজুল ইসলাম। তখন তিনি তুখোড় ছাত্রনেতা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর দেশের টানে কিশোরগঞ্জ জেলার গুরুদয়াল কলেজ থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও নিজ গ্রাম থেকে আরো কয়েকজন যুবককে সাথে নিয়ে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধে। ট্রেনিং নিতে চলে যান ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বালাট ক্যাম্পে। সেখান থেকে আসাম রাজ্যের ইকুয়ানে পাঠানো হয় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে। প্রশিক্ষণ শেষে মেজর মীর শওকত আলীর অধীনে যোগ দেন যুদ্ধকালীন ৫নং সাবসেক্টর ট্যাকেরঘাটে। তার দক্ষতার কারণে একটি কোম্পানির সহকারী কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিনি। সে কোম্পানির অন্যতম পৃষ্টপোষক ছিলেন প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহুকুমার গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দর জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজার দিয়েই পাক হানাদার বাহিনীর রসদ সিলেট পৌঁছানো হতো। তাই এই নদীবন্দরকে মুক্ত করতে মিত্র বাহিনীর মেজর বাট ও জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ৩৬ জন চৌকুস মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠন করা হয় একটি এডভান্স পার্টি। এ পার্টির নেতৃত্ব দেন সাহসী যোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম।

১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট এডভান্স পার্টি সুর্যাস্তের পরপরই শুধুমাত্র ত্রি-নট থ্রি রাইফেল আর গ্রেনেড কমান্ডার সিরাজের নেতৃত্বে ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টর হতে ২৫ মাইল দক্ষিণে সাচনা বাজার পৌঁছে পাক হানাদার বাহিনীর সুরক্ষিত ব্যাংকারে গেরিলা আক্রমণ করেন। অতর্কিত হামলায় ব্যাংকারে অবস্থানরত পাক বাহিনীদের মৃত্য হয় এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পুর্ণ ধ্বংস হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম আনন্দে লাফিয়ে উঠে জয় বাংলা শ্লোগান দিতে থাকেন, এমন সময় পাক বাহিনীর একটি বুলেট এসে তার চোখে বিদ্ধ হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শহীদ সিরাজুল ইসলামের মৃতদেহ টাকেরঘাট সাবসেক্টরে নিয়ে আসা হয় এবং পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরে সমাহিত করা হয়। তার অসমান্য অবদানের জন্য শহীদ সিরাজুল ইসলামকে সরকার বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করেন।

ট্যাকেরঘাট সাব সেক্টরে শহীদ সিরাজের সহযোদ্ধা সাবেক উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা কমান্ডার রৌজ আলী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ও বিজয় দিবস এলেই শহিদ সিরাজের কথা অনেকের মনে পড়ে। কিন্তু আরও বীর মুক্তিযুদ্ধা যুদ্ধকালীন শহীদ হয়ে আশপাশে সমাহিত আছেন তাদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন টুকু কেউ সংরক্ষণ করছেন না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৮ ডিসেম্বর ২০১৯/এমএআরএস/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

সাম্প্রতিক সুনামগঞ্জ খবর

  •   জগন্নাথপুরের মোশাহিদের স্বপ্ন ঝড়ল ফ্রান্সের সড়কে
  •   তাহিরপুরে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
  •   দিরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে এসএসসি ১৪ ব্যাচের মিলনমেলা
  •   দোয়ারাবাজারে ৩শ’ টাকার জন্য সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু, আটক ২
  •   সুনামগঞ্জে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট'র উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী
  •   ছাতকে ভাবির সাথে দেবরের পরকিয়া, ভাতিজা খুন
  •   দোয়ারাবাজারে হামলায় সম্ভাব্য ইউপি সদস্য প্রার্থী আহত, উত্তেজনা
  •   গ্রামে এসে নৌকা নিয়ে ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী