আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রতনের দুর্দিনে পাশে নেই চার ‘খলিফা’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১৩ ০৯:১৫:৫৩

সুনামগঞ্জ  প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জ-১ আসনের আলোচিত, সমালোচিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের একান্ত আস্থাভাজন চারজন ‘খলিফা’ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন তার ‘ঘোরবিরোধী’ হিসেবে অবস্থান নিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক জ্ঞাত আয়বর্হিভুত সম্পদ অর্জনের তদন্ত ও বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর একে একে তারাও হয়ে ওঠেন ‘দুর্নীতিবিরোধী’, দীর্ঘদিনের মধুর সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে অবস্থান নেন রতনের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ হাত মেলান রতনের শত্রæপক্ষের সাথেও। রাতারাতি দৃশ্যপট বদলের বিষয়টি এখন স্থানীয়ভাবে চায়ের টেবিলে আলোচনার মুখরোচক বিষয়।

প্রসঙ্গত, মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতাধর হওয়া লোকেরা গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ‘খলিফা’ হিসেবে। সংসদীয় এলাকায় মন্ত্রী-এমপিদের পর এরাই ক্ষমতার স্বাদ ভোগ-উপভোগ দুটোই করে থাকেন। এলাকার  উন্নয়ন পরিকল্পনা, উদ্যোগ গ্রহণ, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের মতামত বিশেষ গুরুত্ব পায়। আধিপত্য বিস্তার করেন থানা-পুলিশ, প্রশাসনসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে। সাধারণ-মানুষ ও জনপ্রতিনিধির মাঝে শক্তপোক্ত দেয়াল সৃষ্টি করে রাখেন এইসব খলিফা।

উল্টোদিকে, দীর্ঘ সময়ের একান্ত আস্থাভাজন খলিফারা পল্টি মারার পর  তাদের শূন্যস্থানগুলো পূরণে এতটুকু দেরি করেননি এমপি রতন। জায়গায় জায়গায় বিকল্প দাঁড় করিয়ে সদ্য-বিরোধী হওয়া খলিফাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। সেইসাথে পূর্বের খলিফাদের সুযোগ-সুবিধার খাতগুলো সংকুচিত করে নিয়ে আসছেন।

সংসদ সদস্য রতনের চার খলিফার একজন নিজাম উদ্দিন। তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তিনি।  রতনের স্নেহধন্য নিজাম ২০০৮ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ছিলেন এমপির একান্ত আস্থাভাজন।  চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছেন এমপির বিশেষ সহযোগিতা নিয়ে। এমপির আনুক‚ল্য নিয়ে ‘কাঁচা পয়সার খনি’ খ্যাত ফাজিলপুর বালু-পাথর মহালে বছরের পর বছর রাজত্ব করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম। ব্যক্তি জীবনে অর্থনীতির ঊর্ধ্বমুখী সুচক ছুঁয়েছে আসমান পর্যন্ত। দলীয় কর্মকান্ড, থানা-পুলিশ, প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় বিচার-শালিস, সমাজিক কর্মকান্ড সবখানেই একচ্ছত্র আধিপত্য তার। তাহিরপুরে সরকারি বরাদ্দ কোথায় যাবে, কে পাবে; রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কার্লভাট কোথায় হবে, কোথায় হবে না- এমপির পক্ষ হয়ে তার সবই নির্ধারণ করে দিতেন নিজাম। কিন্তু এমপি রতন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার পর থেকে তাদের ‘দুজনার পথ, দুটি দিকে গেছে বেঁকে’। রতন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন নিজাম।

রতনের অপর খলিফা জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সেলিম আহমদ। চেয়ারম্যান নিজামের ভাই তিনি। প্রসিদ্ধ সিলেট-বালু হিসেবে পরিচিত ফাজিলপুর বালু-পাথর মহালের অন্যতম ইজারাদার সেলিম। মহালটি সৃষ্টির পর থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্থাভাজনরাই ভোগ-দখল করে এসেছেন ‘কাঁচা পয়সার খনি’ ফাজিলপুর। সেই ধারাবাহিকতায় এমপি রতনের স্নেহাশিষ নিয়ে সেলিমও টানা দুই মেয়াদ এক বছর সময়জুড়ে ভোগ-দখল করেছেন ফাজিলপুর। সম্প্রসারিত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। জেলা শহরে বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। বড়ভাই নিজামের মতো রতনের এক সময়ের চোখের মণি শ্রমিক লীগ নেতা সেলিমও এখন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এমপি রতন  থেকে নিরাপদ দূরত্বে। অবস্থান বদলের পর এই ‘খলিফা’ কালবিলম্ব না করে তড়িঘড়ি হাত মিলিয়েছেন রতনের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতার সাথে।

সংসদ সদস্য রতনের আলোচিত এক খলিফা ছিলেন তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের বাসিন্দা আর্ণিক। সহকারী থাকাকালীন ‘এমপি থেকে একহাত এগিয়ে থাকা’ আর্ণিক তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মকান্ডের কারণে আসনজুড়ে ছিলেন আলোচনায়। তিনি এতটাই ক্ষমতাধর ছিলেন যে, তাকে ছায়া সংসদ সদস্য হিসেবে মনে করতেন অনেকে। দলীয় নেতাদের টেক্কা দিয়ে সংসদ সদস্যের কার্যক্রমের নীতিনির্ধারণী ক্ষেত্রে মুখ্য ভ‚মিকা পালন করতেন তিনি। তাঁকে খুশি করলে উন্নয়ন, বিরাগভাজন হলে বঞ্চনা- এমটাই মনে করতেন মানুষজন। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, কর্মসৃজন, থোক বরাদ্দ- এর সবই মনিটরিং করতেন আর্ণিক। অদৃশ্য কারণে সেই আর্ণিকও এখন রতনের ঘোরবিরোধী। চাউর আছে, রতনের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরুর পর তদন্তকারী সংস্থাকে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছেন তিনি।

এদিকে, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামীম আহমদ মুরাদের এমপি রতনের কাছ থেকে বিচ্ছেদ হয়েছিল অবশ্য দুদকের তদন্ত শুরুর বছরখানেক আগে। অন্যজনের মতো মুরাদও এমপির প্রভাব খাটিয়ে সর্বেসর্বা ছিলেন গোটা এলাকায়। রাজনীতি থেকে উন্নয়ন, সবখানেই আধিপত্য ছিল তার। সভা-সমাবেশে বসতেন এমপির পাশের চেয়ারে।  ধর্মপাশা উপজেলার রতনের ডান হাত হিসেবে পরিচিত মুরাদের সাথে শত্রæতা সৃষ্টি হয় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা মুরাদ পরাজিত হন এমপির ছোট ভাই বিদ্রোহী প্রার্থী রুকনের কাছে। সেই থেকে শুরু হওয়া শত্রæতা এখন চরম পর্যায়ে। অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্মুখে রতনকে একহাত নেন মুরাদ। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দরখাস্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশনে।

এসব বিষয় নিয়ে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, রাজনীতিতে স্বার্থের কারণে যা যা করার অনেকে তাই করে। এক সময় আমার পক্ষের যেসব লোকজন ছিলেন, আর এখন বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, তারাও সেটা স্বার্থের কারণে করেছেন। তাদের শুধু চাই আর চাই, সেটা আমি পারিনি।  ১০ টাকা দিলে ৩০ টাকা দরকার, কী করার  আছে। এসব নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ ডিসেম্বর ২০১৯/এসএনএ/পিডি/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

সাম্প্রতিক সুনামগঞ্জ খবর

  •   জগন্নাথপুরের মোশাহিদের স্বপ্ন ঝড়ল ফ্রান্সের সড়কে
  •   তাহিরপুরে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
  •   দিরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে এসএসসি ১৪ ব্যাচের মিলনমেলা
  •   দোয়ারাবাজারে ৩শ’ টাকার জন্য সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু, আটক ২
  •   সুনামগঞ্জে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট'র উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী
  •   ছাতকে ভাবির সাথে দেবরের পরকিয়া, ভাতিজা খুন
  •   দোয়ারাবাজারে হামলায় সম্ভাব্য ইউপি সদস্য প্রার্থী আহত, উত্তেজনা
  •   গ্রামে এসে নৌকা নিয়ে ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী