আজ মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের টাকায় গ্রামের রাস্তা!

১৩টি অপ্রয়োজনীয় পিআইসিতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৪ ০৯:৪০:১৪

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ ::  সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ফসল রক্ষাবাঁধের টাকায় গ্রামের রাস্তা নির্মাণ করা, হাওরের বোরো ফসলের সংশ্লিষ্টতা নেই এমন স্থানে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের বৃহৎ পরিমাণ টাকা অপচয় করার অভিযোগ পাওয়াগেছে। তাছাড়া আমান ও রবি ফসলের জমির রক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করারও অভিযোগ পাওয়াগেছে। উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে চলতি নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ এলাকায় ১৩টি অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহলসহ হাওর সংশ্লিষ্ট একাধিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এসব প্রকল্প হাওরের বোরো ফসলের সম্পৃক্ততা নেই জানিয়ে প্রকল্পগুলোতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া বিপুল পরিমাণ অনিয়ম দুর্নীতির আশঙ্কা করেছেন তারা। এদিকে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে বাঁধের টাকায় রাস্তা নির্মাণ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে কাজ বন্ধের দাবী জানিয়েছেন উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের অক্ষয় নগর গ্রামের বাসিন্দারা।

সোমবার সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুরমা ইউনিয়নের চলতি নদীর বামতীরে অক্ষয় নগর, উড়ার কান্দা, সাহেব নগর, সৈয়দপুর , মুসলিমপুর গ্রাম অবস্থিত। চলতি নদী তীরবর্তী এলাকা দিয়ে এই গ্রামগুলোর মানুষ ডলুরা-বাঁশতলা সড়কে যোগাযোগ করে থাকেন। সড়কে বাম পাশেই আমন জমি ও রবি ফসলের জমি রয়েছে। যেখানে বর্ষায় আমন ধান ও শুস্ক মৌশুমে রবি ফসল চাষ করে থাকেন স্থানীয় চাষীরা। চলতি অর্থ বছরে ২০১৭ এর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে চলতি নদীর বামতীরে অক্ষয় নগর থেকে বাঁশতলা পর্যন্ত ১৩ টি পিআইসির মাধ্যমে প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ইতোমধ্যে একসেবেটরের সাহায্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে কয়েকটি প্রকল্পে। বাঁধের কাঁছে মাটি না পাওয়াসহ মাটি কাটার মেশিন না পাওয়ায় বেশির ভাগ প্রকল্পে এখনও কাজই শুরু হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন  অতীতের কোনো সময় এই স্থানে বেড়িবাঁধের কাজ হয়নি। তাছাড়া এই সকল প্রকল্পের সাথে বোরো ফসলের সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং বাঁধ দেয়ার কারণে বর্ষায় জলাবদ্ধতার কারণে আমন ধান ও রবি ফসল চাষে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। জলা বদ্ধতায় আক্রান্ত হতে পারে কয়েকটি গ্রাম। বোরো ফসল রক্ষার নামে এসব পিআইসির মাধ্যমে গ্রামের রাস্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। একাধিক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকা অপচয় হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। মাঠ পর্যায়ে যাচাইয়ের মাধ্যমে এসব প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানান তারা।

এদিকে বিগত বছরের চেয়ে অধিক প্রকল্প গ্রহণ ও বরাদ্দ বেশি দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যাক্তয় করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। সদর উপজেলায় গত বছর ৯ টি পিআইসির অনুমোদন দেয়া হলেও চলতি বছরে এর তিনগুন ২৭টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়ার যৌক্তিকতা পাননি তারা। বরং এর মাধ্যমে সরকারে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

আকমল হোসেন নামের ইউনিয়নের অক্ষয় নগর গ্রামের বাসিন্দা বলেন কি কারনে বেড়িবাঁধ করা হচ্ছে আমাদের জানা নেই। এখানে বোরো ধান কই। আমরা সারা জীবন আমন ধান ও শাক সবজি রোপণ করেছি। কোনো কারণ ছাড়াই অসংখ্য প্রকল্প গ্রহণ করে বাঁধের টাকায় রাস্তা করা হচ্ছে। এইভাবে সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় করা হচ্ছে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, এবার হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজে প্রতিযোগিতা করে প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গত বছর  সদর উপজেলার ৯টি পিআইসির মাধ্যমের হাওর রক্ষা হলেও এবার কোনো কারণ ছাড়াই ২৭টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ১টি ইউনিয়নে ১৩টি প্রকল্পে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বেড়িবাঁধের কাজে বাঁধা দিলেও কর্ণপাত করছেননা কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, সরকার বোরো ধান রক্ষার জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়। আর এই টাকায় গ্রামের রাস্তা হচ্ছে। অতীতে যেখানে কোনো দিনও বেড়িবাঁধের কাজ হয়নি সেখানে অহেতুক প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারে কোটি কোটি টাকা অপচয় করছেন কর্তৃপক্ষ। এসব অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান তিনি। নইলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জবাবদিহীতার আওতায় আনা হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান এ ব্যপারে বলেন,স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশে উপজেলা কমিটি এই প্রকল্পগুলো অনুমোদন করে চুরান্ত অনুমোদনের জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠান। যাচাইবাচাই করে জেলা কমিটি চলতি নদীর বাম তীরে ১৪টি প্রকল্পের অনুমোদন দেন।

সম্প্রতি এই প্রকল্পগুলোর কাজ নিয়ে দুইটি পক্ষ হয়ে বিরোধ দেখা দেয়। সরেজমিনে গিয়ে কাজগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। জেলা কমিটির নেতৃত্বে একটি কারিগরী টিম সরেজমিনে দেখে যদি প্রকল্পগুলোর যথার্থ্যতা মনে করে রিপোর্ট দিলে কাজ শুরু অনুমতি দেয়া হবে নতুবা বাতিল করা হবে। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ জানুয়ারি ২০২০/এসএনএ/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন

সাম্প্রতিক সুনামগঞ্জ খবর

  •   জগন্নাথপুরের মোশাহিদের স্বপ্ন ঝড়ল ফ্রান্সের সড়কে
  •   তাহিরপুরে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
  •   দিরাইয়ে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে এসএসসি ১৪ ব্যাচের মিলনমেলা
  •   দোয়ারাবাজারে ৩শ’ টাকার জন্য সংঘর্ষে আহত ব্যক্তির মৃত্যু, আটক ২
  •   সুনামগঞ্জে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
  •   দক্ষিণ সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট'র উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী
  •   ছাতকে ভাবির সাথে দেবরের পরকিয়া, ভাতিজা খুন
  •   দোয়ারাবাজারে হামলায় সম্ভাব্য ইউপি সদস্য প্রার্থী আহত, উত্তেজনা
  •   গ্রামে এসে নৌকা নিয়ে ঘুরলেন পরিকল্পনামন্ত্রী