Sylhet View 24 PRINT

তাহিরপুরে তোফাজ্জল হত্যাকান্ড: আতংক কাটছেনা শিশু ও অভিবাবকদের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৯ ১৪:২৮:৪৩

এম এ রাজ্জাক, তাহিরপুর :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মাদ্রাসা পড়ুয়া শিশু তোফাজ্জল হত্যাকান্ডের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক কাটছেনা। এই নৃশংস শিশু হত্যাকান্ডের পর অভিবাবকরা শিশুদের একা স্কুলে বা মাদ্রাসায় যেতে দিচ্ছেন না।

বিশেষ করে ছোট শিশু ও পিতা মাথার মধ্যে ভয় ও আতংক বিরাজ করছে। এই নির্মম ঘটনার পর থেকে শিশু শিক্ষার্থীদের অভিবাবকরা স্কুল বা মাদ্রাসায় নিয়ে যাচ্ছেন, আবার ছুটির পর তাদের সঙ্গে করে নিয়ে বাসায় ফিরছেন।

বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া শিশুদের বাড়ির বাহির হতে দিচ্ছেন না শিশুদের পিতা মাথা। এমনকি মাঠে খেলাদোলাও করতে দিচ্ছেন না তারা। তবে পুলিশ বলছে, এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভয়ের কোন কারণ নেই। এ নির্মম ঘটনাটির সত্য উদঘাটনে পুলিশ অনেকটা এগিছে, এলাকায় নিয়মিত পুলিশ টহল রয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শিশু তোফাজ্জল হোসেন ও দিরাই উপজেলার তুহিনের মতো পারিবারিক নৃশংসতার বলি হয়েছে বলে পুলিশ প্রথম থেকেই সন্দেহ করে আসছে। আর এর ধারাবাহিকতায় নিহত শিশুর চাচা, ফুফু, ফুফা ও দাদা সহ পরিবারের ৭জনকে আটক করে এবং তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড নেয় পুলিশ। রিমান্ডে থাকা সম্পর্কে দাদা রাসেল প্রথম দিনেই তোফাজ্জলকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে পুলিশ তাদের রিমান্ড বাতিল করে জেল হাজতে পাটায়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৮ জানুয়ারি বুধবার বিকালে দাদা জয়নাল আবেদীনের বাড়ির সামনে থেকে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী বাসতলা গ্রামের জোবায়েল হোসেনের ছেলে তোফাজ্জল হোসেন নিখোঁজ হয়। বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা অনেক খোঁজ করেও তার সন্ধান পায়নি। এ ঘটনায় তোফাজ্জলের দাদা জয়নাল আবেদীন ৯ জানুয়ারি থানায় জিডি করেন। জিডির দিন রাতেই শিশু তোফাজ্জলের জুতাসহ ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করে একটি চিরকুট শিশুর পিতার ঘরের বারান্ধায় রেখে যায় একটি চক্র।

চিরকুটে লিখা ছিল, ৮০ হাজার টাকা শিশুর পিতার গরু ঘোয়াল ঘরে রাখলে তারা শিশুকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিবে, না হয় শিশুটি কে মেরে ফেলবে। এ বিষয়টি পরদিন পুলিশকে জানায় পরিবারের লোকজন। শনিবার ভোরে চোখ উপড়ানো লাশ বস্তায় বন্ধি তোফাজ্জলের দাদার ফুফাতো ভাই হবি মিয়ার ঘরের পিছন থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

রবিবরার সরেজমিন গিয়ে যানা যায়, প্রায় ১ বছর আগে তোফাজ্জলের ফুফু শিউলি বেগম একই গ্রামের কালন মিয়ার ছেলে সেজাউল মিয়ার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাস পরই তোফাজ্জল ও তার পরিবারের লোকজন শিউলী বেগম কে নির্যাতন করতো। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে প্রায়ই জগড়া বিবেদ হতো। ঘটনার কয়েকদিন আগে সেজাউলের বিরুদ্ধে মামলা হয় কোর্টে। দুই পরিবারের এই কোন্দলের জের ধরে শিশু তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিক ধারণা করলেও বিষয়টি এখন অন্যদিকে মোড় নিতে পারে বলে পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানিয়েছে।

এই নির্মম হত্যাকান্ডের পর সন্দেহ হওয়ায় শিশু তোফাজ্জলের চাচা-ফুফু,ফুফা এবং সম্পর্কে দাদা রাসেল সহ ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল মিয়াকে সন্দেহ করে পুলিশ। গত সোমবার সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস টিম খুন হওয়া তোফাজ্জলের বাড়ী গিয়ে রাসেল মিয়ার শোয়ার ঘরের খাটের পাশের ছোট ওয়ারড্রব থেকে একটি রক্তভেজা লুঙ্গি ও দুটি বালিশের কাভার উদ্ধার করে।

পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় (শিশু তোফাজ্জলের দাদার আপন ফুফাতো ভাই) সম্পর্কে দাদা রাসেল মিয়া বলেছে, ঘটনার দিন তার খাটেই শুয়েছিল শিশু তোফাজ্জল। সে নিজে শুয়ার সময় হঠাৎ করে বিছানার উপর পড়লে তোফাজ্জল চিৎকার দিয়ে ওঠে। তোফাজ্জল যাতে চিৎকার না দেয় সে জন্য সে তাকে (তোফাজ্জলকে) বালিশ চাপা দিয়েছিল। এক পর্যায়ে তোফাজ্জল দমবন্ধ হয়ে মারা যায়।

পুলিশকে রাসেল বলেছে, তোফাজ্জলকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে বালিশ চাপা দেয়নি সে। কিন্তু তোফাজ্জল মারা যাওয়ার পর সে হতবাক হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে এই দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর জন্য তোফাজ্জলের চোখ উপড়ে ফেলে এবং পা ভেঙে রাসেলের মৃতদেহ বস্তাবন্দি করে রাখে সে।

বাসতলা গ্রামের ছাত্র অভিবাবক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ ঘটনার পর থেকে শিশুদের নিয়ে আতংকে রয়েছেন। কখন কি হয় এই ভয়ে সব দিন রাত পার করেন। সকালে তার ছেলে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে আসেন এবং দুপুরে গিয়ে স্কুল থেকে আবার নিয়ে আসেন।

স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য হাসান মিয়া জানান, এ হত্যাকান্ডের পর বিশেষ করে শিশুদের মায়েরা খুব ভয়ে ও আতংকে সময় পার করছেন। প্রয়োজন ছাড়া এখানকার শিশুদের অভিবাবকরা বাড়ির বাহিরে যেতে দিচ্ছেন না।

তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় আতকিংত বা ভয়ের কোন কারণ নেই, সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত পুলিশের টহল রয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্ধ জড়িত রয়েছে। শিশুর সম্পর্কে দাদা রাসেল মিয়া ১৬৪ দ্বারা জবানবন্ধি দিয়ে দায় স্বীকার করেছে। মূল রহস্য উদঘাটনে পুলিশ অনেকটা এগিয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, শিশু তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকান্ড ও দ্রুততম সময়ে অধিক তদন্দ্রের মাধ্যমে চার্জশিট গঠন করা হবে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত খুনিরা কেউ রেহাই পাবে না।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারি ২০২০/এমএআর/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.