Sylhet View 24 PRINT

ফসল রক্ষাবাঁধে নয় ছয় করতে প্রতিযোগিতা করে বাড়ানো হয়েছে পিআইসি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-২০ ১০:০৯:৫৮

শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: ২০১৭ এর কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ি সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার বিভিন্ন হাওরের বোরো ফসল সুরক্ষায় শুরু হয়েছে বেড়িবাঁধের কাজ।  বাঁধ নির্মাণের শুরু দিকেই পিআইসি গঠনে নীতিমালা না মানা, বিগত বছরের চেয়ে অধিক প্রকল্পের অনুমোদন, অপ্রয়োজনীয় স্থানে বাঁধ নির্মাণ , অধিক প্রকল্প বরাদ্দসহ নানা বিষয় নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে চেয়ে চলতি অর্থবছরে অতিরক্ত পিআইসির অনুমোদন ও কাজের তুলনায় অধিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অসংখ্য অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহন করে প্রশ্নবিদ্ধ পানি উন্নয়নবোর্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। কোনো কারণ ছাড়াই অধিকাংশ উপজেলায় প্রতিযোগিতা করে বাড়ানো হয়েছে পিআইসির সংখ্যা। বিগত বছরের চেয়ে দেয়া হয়েছে অধিক বরাদ্দ।  বরাদ্দ বাগিয়ে নেয়া ও প্রকল্প বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় ১ম স্থান দখলে নিয়েছে জেলার ধর্মপাশা উপজেলা। যার অর্ধেক বাঁধই অপ্রয়োনীয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পিআইসি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় ২য় স্থানে আছে সদর উপজেলা। বিগত বছরের চেয়ে  তিনগুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এই উপজেলায়। যার বেশির ভাগই অপ্রয়োজন। এছাড়াও পিআইসি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় পিচিয়ে নেই শাল্লা, জামালগঞ্জ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার,  ছাতক উপজেলা।  প্রকল্প বাড়ানোর সাথে সাথে বাড়ি দেয়া হয়েছে টাকার পরিমাণ। যত্রতত্র স্থানে প্রকল্প গ্রহন, বাঁধের টাকায় গ্রামের রাস্তা করাসহ গত বছরের ভালো বেড়িবাঁধে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহনের মাধ্যমে হাওরে হাওরে সরকারের কোটি কোটি টাকার অপচয় ও লুটপাটে মহোৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় হাওর পারের কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। যাচাইয়ের মাধ্যমে এসব অতিরিক্ত  প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানা যায়, গত অর্থ বছরের জেলার ৫৪১ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৫৭২টি পিআইসির মাধ্যমে ৮০ কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই বরাদ্দে নির্মিত বাঁধে নিরাপদে বোরো ফসল ঘরে তুলেন কৃষকরা।

চলতি অর্থ বছরে জেলার ১১ উপজেলায় ৬৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৭৪৪টি পিআইসি গঠন করে ১৩২ কোটি ১৭ লাখ টাকার বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাবনা পাঠায় পাউবো। যা থেকে প্রথম ধাপে ৬৭৮টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। যা অন্য বছরের চেয়ে দেড়শ' প্রকল্প বেশি।  বরাদ্দের পরিমাণও দ্বিগুন।

জানা যায়, জেলার অধিক প্রকল্প গঠন করা হয়েছে ধর্মপাশা উপজেলায়। গত বছর ৮৯টি পিআইসির মাধ্যমে ১৪ কোটি টাকা দিয়ে ৬৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলেও এবার প্রকল্পের পরিমাণ দ্বিগুন করে গ্রহণ করা হয়েছে ১৭৪টি  পিআইছি। ১৬৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য গত বছরের চেয়ে চাওয়া হয়েছে দ্বিগুনের বেশি ৩৩ কোটি টাকা।  যার বেশিভাগই অপ্রয়োজনীয় বলে দাবি কৃষকদের। সদর উপজেলায় গত বছর বাঁধ নিমার্ণে ৯টি পিআইসির জন্য মাত্র ৬২ লাখ টাকা ব্যয় করলেও এবার ২৭টি পিআইসির জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অনুমোদিত ২৭ পিআইসির মধ্যে বোরো জমির সংশ্লিষ্টতা নেই এমন স্থানে চলতি নদীর বামতীরে ১৪টি প্রকল্পকে অপ্রয়োজনীয় দাবি করে এই পিআইসিগুলো বাতিলের জন্য স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছে লিখিত আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

এদিকে বিগত বছরের চেয়ে অধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে শাল্লা উপজেলায়। গত বছর ১১৫টি পিআইসির মাধ্যমে ১৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকায় ৯২ কিলোমিটার বাঁধ নিমার্ণ করা হলেও এবার প্রকল্প বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৭টি।  গত বছরের বাঁধসহ নতুন করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে ৯৬ কিলোমিটারের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।  জামালগঞ্জ উপজেলায় গত বছরের ৫৩ টি পিআইসি থেকে বেড়ে এবার অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৬৯টি পিআইসি। যার ব্যায় গত বছরের চেয়ে ২ কোটি টাকা বেশি। বিশ্বম্ভপুর উপজেলায় গত বছর ১৬ টি প্রকল্প গ্রহণ করে ফসল রক্ষা পেলে এবার বৃদ্ধি করে ২৬ টি পিআইসির অনুমোদন দেয়া হয়েছে৷ যার ব্যয় গত বছরের চেয়ে আড়াই কোটি টাকা বেশি।

এদিকে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় গত অর্থ বছরের ৪২টি পিআইসির ৩৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ৩কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও এবার ৫০ টি পিআইসির জন্য তিনগুন টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৪৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

দোয়ারাবাজার  বাজার উপজেলায় ২৩ টি পিআইসিকে বৃদ্ধি করে অনুমোদ দেয়া হয়েছে ৩৪টি পিআইসিকে। যার বরাদ্দ গত বছরের চেয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা বেশি। বৃদ্ধিকৃত সকল প্রকল্পকে অপ্রয়োজনীয় বলে জানিয়রছেন সংশ্লিষ্ট হাওর পারের কৃষকরা। 

তাহিরপুর উপজেলায় গত বছর ৬৬টি পিআইসির ৫৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণে ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও এবার বৃদ্ধি করে ৭০ টি পিআইসির ৭৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের জন্য ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।  যা প্রায় দেড় কোটি টাকা বেশি। ছাতক উপজেলায় ৭টি পিআইসি থেকে বৃদ্ধি করে ১১ টি পিআইসির অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
 অপর দিকে গত বছরের চেয়ে এবার জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলায় দুয়েকটি পিআইসি কমলেও বেড়েছে বরাদ্দের পরিমাণ।
গতবছর জগন্নাথপুর উপজেলায় ৫০টি পিআইসির জন্য ৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এবার ৪৫ টি পিআইসির জন্য চাওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দিরাই উপজেলায় গত বছর ১০২ টি পিআইসিতে ১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও এবার ১০১টি পিআইসির জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এবাবে প্রকল্প বাড়িয়ে অধিক বরাদ্দ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় ও অপ্রয়োজনীয় পিআইসির অনুমোদন দিয়ে দুর্নীতি অনিয়মের মাধ্যমে সরকারের টাকা আত্মসাৎ করা হবে বলে অভিযোগ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃ।  দ্রুত সময়ের মধ্যে যাচাই করে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, গত বছরে সাড়ে ৫ শ প্রকল্পের মাধ্যমে    সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা হলেও এবার এবার অহেতুক প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে প্রতি উপজেলায় প্রতিযোগিতা করে পিআইসি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক প্রকল্প অপ্রয়োজনীয়। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে। এই সকল অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

প্রকল্প বৃদ্ধির ব্যাপারে জেলা পানি উন্নয়নবোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো.সবিবুর রহমান বলেন,  উপজেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করে পিআইসির তালিকা অনুমোদনের  জন্য জেলা কমিটির কাছে পাঠায়। পরবর্তীতে জেলা কমিটি ৬৭৮ টি  প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। এর কিছু পিআইসি নিয়ে অভিযোগ আছে। জেলা  প্রশাসন ইতোমধ্যেই প্রকল্প যাচাই কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তারা মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প যাচাই করে রিপোর্ট দিলে প্রকল্প কার্যকর হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ জানুয়ারি ২০২০/শহীদনূর/মিআচৌ 

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.