আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং
তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সুরমাসহ সকল নদী-নালা, হাওর, খাল-বিলের পানি ধীরগতিতে নামতে থাকলেও দূর্ভোগ বাড়ছে চরমে। গত চারদিন ধরে তেমন বৃষ্টিপাত না হলেও ভাটিতে পানির টান না থাকায় নিম্নাঞ্চলের পানি এখনও রয়ে গেছে।
উপজেলা সদরের সাথে বিভিন্ন ইউনিয়নের সংযোগ সড়কগুলোর অবস্থা এমনিতেই নাজুক, এর মধ্যে লাগাতার ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এ ছাড়া অপ্রতুল ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানীয় জলসহ মানুষ ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে বানভাসিরা পড়েছেন বিপাকে। অপরদিকে খামারিদের মাছের ঘের বানের জলে ভেসে যাওয়াসহ উঠতি আউশ, ইরি বোরো, আমনের বীজতলা ও সবজি খেত বিনষ্ট হওয়ায় সংশ্লিষ্টর চোখে অন্ধকার দেখছেন। আগামি আমন ফসল উৎপাদনও অনেকটাই অনিশ্চিত ভাবছেন কৃষিজীবীরা। তাই অচিরেই দোয়ারাবাজার উপজেলাকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার মাধ্যমে বন্যা পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিনা সুদে কৃষিঋণ ও কৃষি উপকরণসহ বিনামূল্যে আমনের বীজ ও চারা বিতরণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
এদিকে দোয়ারাবাজার-বগুলাবাজার সড়কের ভাঙনের ফলে লক্ষীপুর, সুরমা ও বাংলাবাজার (আংশিক) ইউনিয়নের অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। দোয়ারাবাজার-বালাবাজার, দোয়ারাবাজার-নরসিংপুর ভায়া ব্রিটিশ-বালিউরা, নরসিংপুর-চাইরগাঁও (ক্যাম্পেরবাজার) সড়কেরও একই দশা। ফলে নরসিংপুর, বাংলাবাজার ও দোয়ারা সদর (আংশিক) ইউনিয়নবাসীও চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। এমনিতে প্রয়োজনীয় লোকবল ও সুষ্ঠ তদারকির অভাবে সারা বছরজুড়েই শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন এসব রাস্তা দিয়ে।
জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্য খামারি টেংরা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় শতাধিক পুকুরের কোটি টাকার মাছ ভেসে যাওয়ায় আমরা খামার মালিকগন বিপাকে পড়েছি। আমাদের এ ক্ষতি অপূরণীয়।
চিলাই নদী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আকন্দ (সাব্বির) বলেন, সুষ্ঠু প্রশাসনিক তদারকির অভাবে ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাচারিতায় খাসিয়ামারা ও চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ নির্মাণে অনিয়মের দোয়ারাবাজার-বগুলা-লক্ষীপুর সড়কে ৩-৪ স্থানে বড় বড় ভাঙনে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও মাছ চাষসহ সর্বক্ষেত্রেই আজ আমরা চরম বিপর্যের সম্মুখিন।
একইভাবে সুরমার অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের কার্যক্রমেও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন উপজেলা নদীভাঙন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন এসব অনিয়মে খোদ উপজেলা পরিষদ ভবন সম্মুখস্থ সড়কে ফাঁটল, ভাঙন, দোয়ারাবাজার-লাফার্জ সড়কে লাফার্জ ব্রিজের এপ্রোচসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের কারণে সড়ক যোগাযোগ ব্যহত হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ ছাড়ার ওই সড়কে গত বছরের বন্যায় অন্তত অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা ও বাড়িসহ ৭টি দোকান সুরমায় বিলীন হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক বন্যায় উপজেলা পরিষদেরে সম্মুখভাগে আরও দুটি দোকান সুরমায় ধসে পড়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোনিয়া সুলতানা বলেন, বর্তমানে সুরমাসহ সকল নদনদী ও হাওর খাল-বিলের পানি ক্রমশ নামতে শুরু করেছে। কবলিত এলাকায় আমাদের ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রণয়ণকৃত তালিকা মোতাবেক বন্যা পরবর্তী ভূক্তভোগীদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৩ জুলাই ২০২০/তাজুল/পিডি