আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং
শহীদনূর আহমেদ, সুনামগঞ্জ :: করোনাকালে টানা ১০০ দিন ধরে ছিন্নমূল অসহায় মানুষদের দুপুরে রান্না করা খাবার দিচ্ছেন সুনামগঞ্জে কিছু উদ্যোমী মানবিক তরুণ। প্রতিদিন দুপুরে কয়েকজন তরুণ রান্না করা খাবার নিয়ে বের হন সুনামগঞ্জ পৌর শহরে। এরপর বিভিন্নস্থানে রাস্তার পাশে, যাত্রী ছাউনিতে, পরিত্যক্ত ঘরের বারান্দা, মার্কেটের খালি জায়গা অথবা খোলা আকাশের নিচে থাকা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের হাতে এই খাবার তুলে দেন। করোনাপরিস্থিতিতে তিন মাসের উপর সময় ধরে এভাবেই শহরে ঘুরে ঘুরে এসব অসহায় মানুষদের মধ্যে খাবার বিলি করছেন তাঁরা। এখন প্রতিদিন তাদের খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকেন এই মানুষগুলো।
শুক্রবার ছিল খাবার বিতরণের ১০০তম দিন। এক সময় এই তরুণেরা নিজেদের অর্থে খাবার বিতরণ শুরু করলেও এখন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার লোকজন এই মানিবক কাজে সহায়তায় করছেন বলে জানা তারা। শুক্রবার দুপুরে খাবার বিতরণে যোগ দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ। তরুণদের এমন মানবিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান করেন তিনি। এমন মানবিক কাজে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। এ
মানবিক তরুণদের সাথে কথা বলে জানা গেল, নিজের অর্থায়ন ও শহরের কিছু মানবিক মানুষের সহযোগিতার সপ্তাহে তিন দিন মাংস, তিন দিন মাছ ও ১দিন ডিম ও সবজি দিয়ে দুপুরে একবেলা খাবার প্রদান করছেন তারা। করোনাকাল শেষ হওয়া না পর্যন্ত এই মানবিক কাজটি চালিয়ে যাওয়া প্রতিশ্রুতি দেন তারা। একসময় শহরের বিভিন্নস্থানে থাকা এসব মানুষেরা রেস্তোরাঁ অথবা খাবারের দোকানের উচ্ছিষ্ট নিয়েই খেয়ে দিন কাটান। এই মানুষগুলোকে ‘পাগল’ বলে অনেকেই এড়িয়ে যান। এদের কেউ কেউ আবার অসুস্থ। এরা কারো কাছে কোনো কিছু চায় না। অন্য মানুষের কাছেও যায় না। করোনাপরিস্থিতির শুরু থেকে শহরের সব রেস্তোরাঁ, খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই মানুষগুলো পড়েন চরম বিপাকে। এদের মধ্যে বয়স্ক পুরুষ, নারী ও শিশু রয়েছেন। এদের কোনো ঘরবাড়ি নেই। তাই এ ছিন্নমুল মানুষদের একবেলা খাবারের সংস্থান করে দিতে পারায় খুশি মানবিক এই তরুণরা।
খাবার বিতরণের এই মানবিক কাজে যুক্তদের একজন শহরের মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা জগন্নাথ বণিক জানান, শহরের কিছু তরুণদের মাধ্যমে এই মানবিক কাজটি অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। ২৫ মার্চ থেকে সব রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে শহরে মানুষজনের চলাচলও কম। এ অবস্থায় শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই অসহায় মানুষগুলো পড়েন খাবার সংকটে। এরপর ২৬ মার্চ থেকে শহরের ২৫ থেকে ৩০জনকে প্রতিদিন দুপুরের খাবার দিয়ে যাচ্ছি আমরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই কাজ দেখে এখন অনেকেই অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছেন বলে জানান তিনি।শুক্রবার খাবার বিতরণে অংশগ্রহণ করেন ব্যবসায়ি রুহেল মিয়া, ডা. দেবব্রত বনিক, সমাজকর্মী হাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ি চন্দন বনিক, জনি বনিক, নারায়ন বনিক, এ্যাডভোকেট সুজিত বনিক, ঝোটন বনিক, রাসু বনিক, রোমন বনিক, ইউপি সদস্য ফুলেন সূত্রধর প্রমুখ।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৪ জুলাই ২০২০/এসএন/মিআচৌ