Sylhet View 24 PRINT

দোয়ারাবাজারে তৌহিদ হত্যার ২ বছর : দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির দাবি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১১-২২ ১২:৫৮:২৫

তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার : \'অল্প বয়সে স্বামী হারিয়ে বিধবা হয়েছি। তবুও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গে পড়িনি। তাদের ওপর ভরসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলাম। গত দুই বছরে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়ে দুটোর পড়াশোনা বন্ধ। ছোট্ট ছেলেটা পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করে। আরেক ছেলে সারাদিন দোকান চালিয়ে যা পায় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে। নিজে পরের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করি।

গত দুইটা বছর কোন অবস্থায় আছি, কেউই খোঁজখবর নেয়নি।\' আক্ষেপের সাথে কথাগুলো বলেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ব্যবসায়ী তৌহিদুল ইসলামের মা। খুন হওয়া সন্তানেের বিচারের দাবিতে এসময় আহাজারি করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।

উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কলাউরা গ্রামের মৃত আব্দুল আহাদের ৬ সন্তানের মধ্যে তৌহিদ সবার বড়। স্থানীয় কলাউড়া বাজারের মসজিদ মার্কেটে বিকাশ ও মোবাইল রিচার্জের ব্যবসা ছিল তার। গত ৯ নভেম্বর বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী তৌহিদ হত্যার দুই বছর পূর্ণ হয়। ন্যায় বিচারের আশায় এখনো দিন গুনছে তার পরিবার। বড় ছেলে হারিয়ে এই দুই বছরে আর্থিক টানাপোড়ন আর মামলার ঘানি টানতে গিয়ে তার পুরো পরিবার ভেঙ্গে পড়েছে। পুলিশের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়া এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের ব্যবসায়ী শামীম মিয়া মাস তিনেক আগে জামিনে বের হয়ে এখন কুমিল্লায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

প্রধান আসামীর জামিন হলেও, আইনি জটিলতায় বিচারের নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। মামলাটি এখন পিবিআই\'র তদন্তাধীন রয়েছে।মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া সৃষ্টি ছাড়াও মিথ্যা চুরির মামলায় তৌহিদের পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রতিদিনের মতো ওইদিন সকালে কলাউড়া মসজিদ মার্কেটস্থ নিজস্ব দোকানে আসে তৌহিদ। ওইদিন আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। পরদিন ৯ নভেম্বর সকালে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে জোনাকি জুয়েলারি দোকানের সামনের গলিতে পড়ে থাকা তৌহিদের রক্তাক্ত গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ রোমহর্ষক ঘটনায় ১০ নভেম্বর তৌহিদের পরিবার বাদী হয়ে একই ইউনিয়র  বাঁশতলা গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে শামীম মিয়া (২৫) ও পেকপাড়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার ছেলে মনসুর আলী (২৫) কে আসামি করে দোয়ারাবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়। দুই আসামিকেই পুলিশ আটক করে। কিন্তু পরবর্তীতে মামলার দুই নম্বর আসামি মনসুর আলীকে ছেড়ে দেয়া হয়।মামলার নথিপত্র ও তৌহিদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়ার দিন ৮ নভেম্বর দুপুরে ছাতকের একাধিক ব্যাংক থেকে কয়েক লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করে বিকাশ ব্যবসায়ী তৌহিদ।

ওইদিন দুপুরে তার সাথেই ছিলেন শামীম ও মনসুর আলী। তারা একসাথে মোটরসাইকেলে করে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে সন্ধ্যায় শামীম মিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পূর্ব বাংলাবাজারের বিসমিল্লাহ মার্কেটে ফিরে আসেন। আর ওইদিন রাতেই খুন হন তৌহিদ। তার পরিবারের দাবি, তৌহিদের সাথে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কারো শত্রুতা ছিলনা। মূলত টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। ওই টাকার কোনো হদিস মেলেনি আজো! এই ঘটনার পর পুরো ইউনিয়ন জুড়ে তৌহিদ হত্যার বিচারের দাবিতে বিশাল সভা সমাবেশও হয়। তৌহিদ হত্যার রক্তের দাগ লেগে থাকা বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসও বন্ধ করে দেয়া হয়। মাত্র দু\'বছরের ব্যবধানে চাপা পড়ে গেছে তৌহিদ হত্যার বিচারের ইস্যু! কিছুদিন বন্ধ থাকার পর বিসমিল্লাহ গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এযাবত দেদারসে চলছে বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের ব্যবসা। কিন্তু তৌহিদের পরিবারের খোঁজখবরই রাখেনি কেউ!

তৌহিদের মা জানান, ছেলে হত্যার বিচারের নিষ্পত্তি হয়নি। প্রতিবাদ করায় উল্টো আসামি পক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে চুরির মামলা দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করছে। এখনো ওই মিথ্যা মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে। আমি এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও সন্তান হত্যার ন্যায় বিচারের দাবি জানাই।

তৌহিদ হত্যা মামলার বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী এডভোকেট হুমায়ুন মঞ্জুর প্রতিবেদককে জানান, চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছে তৌহিদের পরিবার। নারাজির প্রেক্ষিতে আদালত এটা অধিকতর তদন্তে পাঠিয়েছে। এটা এখন তদন্তাধীন রয়েছে।


সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ২২ নভেম্বর ২০২০/তাজুল/পিটি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.