সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০১-২৬ ১৭:৩৬:২৪
তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার :: বর্ষায় একটুখানি বৃষ্টিতেই কাঁদাজল লেগে থাকে মেঝেতে। ভাঙাচোরা বেড়ার ফাঁক দিয়ে কনকনে শীতের ঠান্ডা বাতাস। ঘরটিও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। যেকোনো সময় ধসে পড়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ওই ভাঙ্গা ঘরটিতে স্ত্রী সন্তানসহ ৫ সদস্য বসবাস করে আসছে।
স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে হাঁস-মুরগি গবাদিপশুসহ গাদাগাদি করে থাকছেন সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের পেকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসহায় ইদ্রিছ আলীর পরিবারের সদস্যরা।
ইদ্রিছ আলীর নিজস্ব কোনো ভিটেমাটি নেই। পারিবারিক সমস্যায় মামলা করে সব খুইয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছর ধরে স্ত্রী-সন্তানাদি নিয়ে থাকছেন শশুর বাড়ির উঠানের এক চালার এক ভাঙ্গা ঘরে। নতুন ঘর তৈরি করাতো দূরের কথা, আর্থিক অনুটনে মাথাগোঁজার ঠাঁই হওয়া ওই ঘরখানাও মেরামত করতে পারছেন না তিনি। নিরুপায় হয়েই ভাঙ্গা ঘরে রোদ বৃষ্টি ঠান্ডায় কষ্টে দিন কাটছে ওই পরিবারটির। দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভোগায় কাজকর্ম করতে অক্ষম ইদ্রিছ আলী।
অর্থাভাবে নিজের চিকিৎসাও করাতো বড় কথা, তিনটি সন্তানের পড়াশোনাসহ সাংসারিক খরচ চালানোর দুশ্চিন্তায় ভূগছেন তিনি।
ইদ্রিছ আলী বলেন, ‘নিজের চিকিৎসা ও ভাঙাচোরা ঘর মেরামত করা তো দূরুহ ব্যাপার, স্ত্রী সন্তান নিয়ে রোজ একবেলা এক মুঠো অন্নই যোগাতে পারছি না। আল্লাহ ছাড়া আমার আর কেউ নেই, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।’
তার স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, ‘সারাদিন পরের বাড়িতে খেটে যা পাই তা দিয়ে কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে আছি। নিয়মিত সন্তানদের মুখে খাবার দিতে পারি না। ভাঙ্গা ঘর মেরামতের সামর্থটুকুও নেই। অন্তত মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু পেলে খেয়ে না খেয়ে অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে বাকিদিনগুলো কাটাতে পারতাম।’ ইদ্রিছ আলীর শশুর বয়োবৃদ্ধ দুলাল মিয়া জানান, ‘মেয়েকে ফেলে দিতে পারিনা। আমার বাড়িতেই ১৫ বছর ধরে আছে। আমার অনুযায়ী তাদের দেখাশোনা করে আসছিলাম। বর্তমানে নিজের আর্থিক অবস্থা খারাপ, পানের ব্যবসা করে যা পাই তাতে নিজেই চলতে পারি না। চোখের সামনে মেয়েটার পরিবারের দুরাবস্থা দেখে কষ্ট পাই।’
প্রতিবেশি আলমগীর হোসেন জানান, ‘ইদ্রিছ আলী ও তার পরিবারে একদম অসহায়ভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ইদ্রিছ আলীর পরিবারকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে অসহায় পরিবারটি অন্তত মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু পেতো। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদেরকে ওই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাই।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য খোরশেদ আলাম জানান, ‘পরিবারটি অসহায় ও হতদরিদ্র। আমি তাদেরকে দুইবছর মেয়াদী একটা ভিজিডি কার্ড ও একটা ফেয়ার প্রাইজের কার্ড দিয়েছি। সরকারিভাবে ওই অসহায় পরিবারটিকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার দাবি জানাই।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/টিআই/এসডি-৭