বৃটেনে শাহারপাড়া যুব সংঘের 'সিটিজেন এ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠিত

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন :: ব্রিটেনের আজকের সমৃদ্ধ বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রবীনদের দীর্ঘ সংগ্রামেরই ফসল। নিজেদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে তাঁরা কমিউনিটি ভিত্তি গড়েছিলেন বলেই বাংলাদেশী কমিউনিটি আজ ব্রিটিশ সোসাইটির অন্যতম সমৃদ্ধ অংশ।

৭ই এপ্রিল (রবিবার) বিকেলে পূর্ব লন্ডনের পপলার কলোডেন বাংলাদেশী প্যারেন্টস এসোসিয়েশন সেন্টারে গ্রেটার শাহারপাড়া যুব সংঘের প্রথম সিনিয়র 'সিটিজেন এ্যাওয়ার্ড' প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়ন তথা আর্তমানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জিএসপিজেএস’র পক্ষ থেকে ব্রিটেনে বসবাসরত শাহারপাড়া এলাকার ৫জন প্রবীন ব্যাক্তিকে এ্যাওয়ার্ড প্রদানের মাধ্যমে ‘শাহারপাড়া যুব সংঘ সিনিয়র সিটিজেন এ্যাওয়ার্ড (এসপিজেএস) এবারই প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয়।

এখন থেকে প্রতি বছর এই এওয়ার্ড প্রদান করা হবে বলে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় অনুষ্ঠানে।

যুক্তরাজ্যস্থ গ্রেটার  শাহারপাড়া যুবসংঘের সভাপতি আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক, সৈয়দপুর আদর্শ কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সাংবাদিক মুহাম্মদ শাহেদ রাহমানের  সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পীকার কাউন্সিলর আয়াছ মিয়া।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- লুটন বারা কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলার তাহির খান, কাউন্সিলর মোহাম্মদ আহবাব হোসেইন, কমনওয়েল্থ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নাহাস পাশা, ওয়ার ক্রাইম স্টেইজের প্রেসিডন্ট  সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী  লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি মোহাম্মদ জুবায়ের, সত্যবাণীর এডিটর-ইন-চীফ সৈয়দ আনাশ পাশা, শিক্ষাবিদ ডক্টর রোয়াব উদ্দিন, সত্যবাণী ও জগন্নাথপুর টাইমস এর কন্ট্রিবিউটিং এডিটর সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ, ইউকে বাংলা রিপোর্টার্স ইউনিটির জেনারেল সেক্রেটারি এটিএম মনিরুজ্জামান, কবি আবু সুফিয়ান চৌধুরী ও অধ্যাপক প্রণব কান্তি দেব।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- শাহারপাড়া যুবসংঘের সাবেক সভাপতি কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব  শেখ এম এ খালিক। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন – কমউনিটি ব্যক্তিত্ব যুবসংঘের সহ সভাপতি শেখ ফারুক আহমদ, আখতার কামালী ও আব্দুল আওয়াল কামালী সেজু।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- মনোহর মিয়া কামালী, হাবিবুল হক কামালী, অধ্যাপক সাজিদুর রহমান, লুৎফুর রহমান কামালী, রহিম উদ্দিন, রেদওয়ান খান, কবি সিতু মিয়া কামালী, আব্দুস সালাম কামালী, ছানাক কামালী, সাদিক কামালী,  জিতু মিয়া কামালী, মামুন রশীদ কামালী, সোহেল আহমদ, আব্দুস সোবহান ও সালেহ আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন আব্দুস সোবহান কামালী।

জিএসপিজেএস সিনিয়র সিটিজেন এ্যাওয়ার্ড ২০১৮ প্রাপ্ত প্রবীন ব্যক্তিরা হলেন– গ্রেটার শাহারপাড়া যুবসংঘের গিয়াস উদ্দিন কামালী, আসাবুর রহমান, হারুন রশীদ কামালী, মটুক মিয়া ও সাহাবউদ্দিন আপ্তাব মিয়া।

অনুষ্ঠানে এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের মাঝে ক্রেস্ট, সম্মাননা পত্র ও উপহার তুলে দেন প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

প্রবীনদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা তুলে দেয়ার পর অতিথিরা নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, একটি ব্যাতিক্রমী অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা লগ্নে এর গর্বিত অংশিদার হয়ে আমরা আজ আপ্লুত। যে প্রবীনদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বর্তমান প্রজন্ম আজ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে ভূমিকা রাখছে, সেই প্রবীনদের সম্মান জানানোর এই শুভ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য ও ব্যাতিক্রমী। বক্তারা এমন একটি উদ্যোগ নেয়ায় কৃতজ্ঞতা জানান উদ্যাক্তাদের।

বক্তারা বলেন, উন্নত জীবন যাপনের আশায় আমাদের পূর্ব পুরুষরা একদিন সাত সাগর পাড়ি দিয়ে যে ব্রিটেনে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন, সেই ব্রিটেন এখন আমাদেরও দেশ। পূর্ব প্রজন্মের দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে মন্তব্য করে বক্তারা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন তাদের।

তারা বলেন, আমাদের পূর্ব প্রজন্মের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস আজ মাল্টিকালচারাল ব্রিটিশ সোসাইটির ইতিহাসের অংশ। ব্রিটেনের মূলধারার রাজনৈতিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের প্রজন্মের অবস্থান পূর্ব প্রজন্মের দীর্ঘ ত্যাগ তীতিক্ষারই ফসল। এই সংগ্রামী পূর্ব প্রজন্মকে অবশ্যই আমাদের স্মরণ করতে হবে। শাহারপাড়া যুব সংঘ সিনিয়র সিটিজেন এওয়ার্ড প্রবর্তন করে সেটিই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিলো।

বক্তারা ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবীনদের ‘শিকড় সংযোগ’ আখ্যায়িত করে বলেন, ব্রিটেনে জন্ম ও বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মের সাথে শিকড় মাটির সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করছেন আমাদের প্রবীনরা। তাদের অবিরত সংগ্রামের ফলেই বাংলা ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত হচ্ছে এদেশে বেড়ে ওঠা আমাদের প্রজন্ম।

তারা বলেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে এই ব্রিটেনে নিজ বসতির দৃঢ় ভিত্তি যেমন দাড় করিয়েছেন আমাদের প্রবীনরা, ঠিক পাশাপাশি দেশে বসবাসরত স্বজনের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যেও  পরিশ্রম করেছেন তারা অবিরত। তাদের প্রতি আমাদের স্যালুট অবিরত।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৮ এপ্রিল ২০১৯/এমসি/এসডি

আপনার মতামত দিন