আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং
শাহ বদরুজ্জামান রুহেল, নিউইয়র্ক :: "নিউইয়র্ক সিটির নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই সমানভাবে আইন প্রয়োগ হচ্ছে। এতে কোন শৈতল্যের সুযোগ নেই। সিটির নিরাপত্তায় আইন প্রয়োগে কোন প্রকার বৈষম্য বরদাশত করা হয় না।
নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেমস পি ও’নীল নিউইয়র্কে এক টাউন হল মিটিংয়ে এসব বলেছেন।
তিনি আরো বলেন, "সিটিকে নিরাপদ রাখতে পরিবার থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে সকলের দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।"
পুলিশ কমিশনার জেমস পি ও’নীল বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মেলামেশা করছে, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা জরুরি। সন্তানরা যাতে বিপথে না যায় সে ব্যাপারে অভিভাবকদেরই দায়িত্ব নিতে হবে।
স্থানীয় সময় গত ১২ জুন বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের একটি পার্টি হলে বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশন (বাপা) এ টাউন হল মিটিংয়ের আয়োজন করে। সভায় কমিউনিটির নানা সমস্যা ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আলোকে বিভিন্ন ইস্যুতে করা প্রশ্নের জবাব দেন এনওয়াইপিডি পুলিশ কমিশনার জেমস পি ও’নীল।
‘বাপা’র ট্রাস্ট্রি ডিটেকটিভ মাসুদ রহমানের সঞ্চালনায় মিটিংয়ের প্রশ্নোত্তর পর্বে সহায়তা করেন ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর লিউটেনান্ট কারাম চৌধুরী এবং সেক্রেটারি সার্জেন্ট হুমায়ূন কবির। ‘বাপা’র সভাপতি লিউটেনান্ট সুজাত খান স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনারকে বাপা’র পক্ষ থেকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
সভায় নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি আমেরিকানদের মধ্যে সর্বোচ্চ পদপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন খন্দকার আব্দুল্লাহকে বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে। তিনি এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও রাখেন।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
কন্সাল জেনারেল তার বক্তব্যে প্রবাসীদের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ইতিপূর্বে পুলিশ কমিশনারের সাথে তার বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন। সাদিয়া ফয়জুননেসা নিউইয়র্ক সিটির উন্নয়নে প্রবাসীদের নানা অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, এখানে বাংলাদেশি আমেরিকানদের মাইনোরটি ভাবার কোন কারণ নেই। সকলের জন্য সমান সুযোগ রয়েছে এখানে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ বন্ধুরা আমাদের বাংলাদেশের মুখ অনেক উজ্জ্বল করছেন।
বাপা’র সহ সভাপতি সার্জেন্ট তারেকুর চৌধুরী সভায় সমাপনী বক্তব্য দেন।
সভায় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করেন কমিউনিটি লিডার অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, মোহাম্মদ এন মজুমদার, আবদুস সহিদ, জাকারিয়া মাসুদ জিকো, ফখরুল আলম, ফাহাদ সোলায়মান, মাজেদা এ উদ্দিন, সালেহ উদ্দিন, হাসান আলী, সাহেদ আলম, সাহাব উদ্দিন সাগর, ডব্লিউ চৌধুরী, সাদিয়া চৌধুরী, মোস্তাক আহমেদ প্রমুখ।
দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ সভার সমন্বয় করেন বাপা’র কর্মকর্তারা। অন্যদের মধ্যে ছিলেন সভাপতি লিউটেনান্ট সুজাত খান, সিনিয়র সহ সভাপতি সার্জেন্ট তারিক চৌধুরী, সহ সভাপতি ট্রাফিক এজেন্ট আবদুল জলিল, সাধারণ সম্পাদক সার্জেন্ট হুমায়ুন কবির, কোষাধ্যক্ষ সার্জেন্ট এম ডি রহমান, সহকারী কোষাধ্যক্ষ পুলিশ অফিসার শওকত হাফিজ, ইভেন্ট কো-অর্ডিনেটর লিউটেনান্ট কারাম চৌধুরী, সার্জেন্ট এট আর্মস্ পুলিশ অফিসার ফুয়াদ হোসেন, মিডিয়া সমন্বয়কারী ডিটেকটিভ জামিল সরোয়ার, কমিউনিটি সমন্বয়কারী পুলিশ অফিসার শেখ আহম্মদ, সহ সাধারণ সম্পাদক মো: রহমান, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সার্জেন্ট সুমন সাঈদ, প্রাক্তন সভাপতি লিউটেনান্ট শামসুল হক, জয়েন্ট টেররিজম টাস্কফোর্সের কর্মকর্তা রাজুব ভৌমিক প্রমুখ।
প্রশ্নকারীরা এনওয়াইপিডিকে বিশ্বের সেরা পুলিশ বাহিনী হিসেবে অভিহিত করে কমিশনার জেমস ও’নিলের নেতৃত্বে নিউইয়র্ক সিটির নিরাপত্তায় বাংলাদেশি অফিসাররা সহ পুলিশ বাহিনী অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনছেন বলে মন্তব্য করেন।
টাউন হল মিটিংয়ে বাংলাদেশিদের আইন মেনে চলার প্রশংসা করে কমিউনিটির নিরাপত্তায় সর্বাত্মক সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নীল। তিনি জানান, প্রত্যেক মাসে পুলিশ প্রিসিঙ্কটে কমিউনিটিভিত্তিক সভা হয়। সে সভায় অংশ নিলে পুলিশ প্রশাসনের সাথে কমিউনিটির ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সভায় ‘ধর্ম, বর্ণ এবং জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা সম্পর্কিত প্রশ্নের বিষয়ে পুলিশ কমিশনার জানান, হেইট ক্রাইম টাস্কফোর্সে প্রয়োজন হলে একজন বাংলাদেশি আমেরিকান অফিসারও নেয়া হবে।
টাইমস স্কোয়ারে হামলা চালিয়ে আমেরিকানদের হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগে সম্প্রতি আটক বাংলাদেশী আশিকুল আলম সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, জনগণের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বদ্ধপরিকর। অকুণ্ঠচিত্তে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা। জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও ধরনের আপসের অবকাশ নেই।
নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি এ অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে। তবে কারো কারো অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন বিরক্তিরও উদ্রেক করে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ বিভাগের প্রায় সাড়ে তিনশ অফিসারসহ ট্রাফিক এজেন্ট, কারেকশন অফিসার এবং স্টেট পুলিশ ও স্টেট কারেকশন বিভাগের দেড় হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি-আমেরিকান নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদেরই সংগঠন এই বাপা।
তথ্যসূত্রঃ ইউএসএ অনলাইন
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ জুন ২০১৯/এসবিআর/এসডি