Sylhet View 24 PRINT

মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণ সভা: পীর হবিব ছিলেন রাজনীতির গর্ব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-০১ ০১:০২:১৮

বাংলাদেশের বাম প্রগতিশীল রাজনীতির পূরোধা প্রয়াত জননেতা পীর হবিবুর রহমান ছিলেন রাজনীতির গর্ব, বাংলাদেশের রাজনীতির অহঙ্কার প্রজন্মের প্রতিনিধি। রাজনীতিতে সততার প্রতীক এই নেতা মেহনতি মানুষের মুক্তি আন্দোলনে তাঁর সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন। ৩০ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার প্রয়াত নেতার ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনায় উপরোক্ত মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

পীর হবিব ফাউন্ডেশন ইউকে’র উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের গ্রেটোরেক্স ষ্ট্রীটস্থ বিজনেস ডেভোলাপমেন্ট সেন্টারে আয়োজিত এই স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আজিজ চৌধুরী। সাধারণ সম্পাদক মুহিব উদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীন সংগঠক সুলতান শরীফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন পীর হবিবুর রহমানের আদর্শিক অনুসারী, প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক আবু মুসা হাসান, চ্যানেল এস চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, পীর হবিবুর রহমানের আদর্শিক অনুসারী, যুক্তরাজ সিপিবি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রকিব আহমেদ, যুক্তরাজ্য উদীচী সভাপতি হারুনুর রশীদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী ও সত্যবাণী সম্পাদক, সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা।

পীর হবিবুর রহমানকে স্মরণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রবীন সংগঠক সুলতান শরীফ বলেন, বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনে আমাদের আলোকিত রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন প্রয়াত জননেতা পীর হবিবুর রহমান। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখে যখন পীর হবিবের মত রাজনীতিককে মন্ত্রী সভায় নিয়ে আসার আকাঙ্খা শুনতাম, তখনই বুঝতাম তিনি কত বড় মাপের নেতা। প্রবীন এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আওয়ামী মুসলিম লীগ হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পাশাপাশি হেঁটেছেন বঙ্গবন্ধু ও পীর হবিব। পরবর্তীতে ৫৭ সালে বামপন্থিরা ন্যাপ গঠন করে আওয়ামীলীগ থেকে বেড়িয়ে গেলেও পীর হবিবের সাথে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিলো আমৃত্যু। চীনা নেতা মাও সেতুংয়ের ‘ডোন্ট ডিস্টার্ব আইয়ুব’ পরামর্শ নিয়ে চীন সফর শেষে মাওলানা ভাসানী দেশে ফেরার পরই অধ্যাপক মোজাফফর ও পীর হবিবদের সাথে তাঁর দুরত্ব তৈরী হয়, এমন মন্তব্য করে সুলতান শরীফ বলেন, ১৯৬৮ সালে আইয়ুব বিরোধী মোর্চা ডেমোক্রেটিক একশন গ্রুপ(ডাক) গঠনে পীর হবিবুর রহমানের ছিলো অগ্রণী ভূমিকা।একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সংগঠনে জননেতা পীর হবিবুর রহমান ছিলেন অন্যতম শীর্ষ সংগঠক। শোষণ, বঞ্চনা, ধর্মের নামে ভন্ডামী ও সাম্প্রদায়িকতাকে মনে প্রাণে ঘৃনা করতেন তিনি।

বিশেষ অতিথি আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি ১৯৭২ সালে ছাত্রাবস্থায় দেশ ছেড়ে চলে আসায় পীর হবিব সম্পর্কে তাঁর ভালো চর্চা নেই স্বীকার করে বলেন, তবে ২০০১ সালে ফেঞ্চুগন্জে আমাদের বাড়ীতে উনার সাথে সময় কাঠামোর সুযোগ হয়েছে আমার। নির্বাচনে আমার ভাইয়ের সমর্থনে ঐসময় ভূমিকা রেখেছেন তিনি। আমাদের সিলেট অঞ্চল এমন একজন নেতার জন্ম দিতে পেরেছে, যিনি রাজনীতিতে সততার প্রতীক হিসেবে সমাদৃত ছিলেন, এটি আমাদের গর্ব। প্রয়াত এই নেতার স্মৃতি রক্ষায় তিনি ও তাঁর পরিবার সম্ভব সব ধরনের সহযোগিতায় থাকবে বলে স্মরণ সভায় ঘোষণা দেন চ্যানেল এস চেয়ারম্যান।

সাংবাদিক আবু মুসা হাসান পীর হবিবুর রহমানের সাথে তাঁর রাজনৈতিক সময়ের স্মৃতিচারণ করেন বক্তৃতায়। বলেন, সবকিছুর উর্ধ্বে মানুষই ছিলো পীর হবিবুর রহমানের কাছে নমস্য। তিনি বলেন, মাতৃভূমি ও দেশের মানুষের কল্যাণ ও মঙ্গল সাধনাই ছিলো তাঁর জীবনের ব্রত। পাকিস্তানী অন্ধকার যুগে প্রগতিশীল রাজনীতির ইতিহাসে তিনি ছিলেন এক কিংবদন্তী পুরুষ। পাকিস্তান পরবর্তী সময়ে এতদঞ্চলে অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল রাজনীতির গোড়াপত্তনে এবং মুসলিম লীগ শাসক গোষ্ঠির ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিপরীতে হাতে গোনা যেকজন যুবক অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ঝান্ডা উর্ধ্বে তুলে ধরেন পীর হবিবুর রহমান ছিলেন তাদের অন্যতম।

সৈয়দ ফারুক পীর হবিবুর রহমানকে মানব প্রেমিক এক মহান নেতাস ম্বোধন করে বলেন, ভিন্ন দলের হলেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাথে এই নেতার ছিলো ঘনিষ্ট সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক উন্নয়ন ক্ষুধামুক্ত–দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন পীর হবিবুর রহমান, এমন মন্তব্য করে সৈয়দ ফারুক বলেন, আসুন প্রয়াত এইনেতার স্বপ্ন অসাম্প্রদায়িক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার শেখ হাসিনার চলমান আন্দোলনে আমরা সহযোগিতা করি।

সৈয়দ রকিব বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপদ বসবাসযোগ্য একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন পীর হবিবুর রহমান। ১৯৫০ সালে কলকাতা, বরিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা শেষে সিলেটেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধার উপক্রম হলে দাঙ্গা প্রতিরোধে পীর হবিবুর রহমান যে উদ্যোগ নেন ভারত–পাকিস্তান দুদেশের রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ে তা তখন ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

সমাপনি বক্তব্যে পীর হবিব ফাউন্ডেশন, ইউকের সভাপতি আজিজ চৌধুরী স্মরণ সভায় উপস্থিত হওয়ায় সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, আমাদের প্রয়াত নেতা সম্পর্কে আপনাদের আজকের স্মৃতিচারণ ফাউন্ডেশনের জন্য অনন্য এক পাওয়া। আমরা এটি রেকর্ড করে রাখছি। নেতার স্মৃতি সংরক্ষনে আমরা এগুলো কাজে লাগাবো।

পবীত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া স্মরণ সভায় পীর হবিবুর রহমানে ছেলে মন্জুর রহমান সুলু, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা আনসার আহমেদ উল্লা, যুক্তরাজ্য কমিটির সেক্রেটারী জামাল খান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হুসনা মতিন ও দর্পণ সম্পাদক রহমত আলীসহ লন্ডনের বিভিন্ন কমিউনিটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দও বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, ধর্মীয় পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠা মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র হয়েও পীরহবিব ছিলেন ধর্মীয় গোড়ামীর উর্ধ্বে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিশুদ্ধ এইজননেতা সততা, নৈতিকতা, তীব্র পরিমিতিজ্ঞান এবং রুচি ও শালীনতাচর্চার দিক থেকে ছিলেন একজন আপাদমস্তক শুদ্ধ রাজনীতিবিদ।

বক্তারা বলেন, অহংবোধ, আত্মপ্রচার, লোভ ও স্বার্থসিদ্ধি, সাধারণ মানুষের প্রতি মমতাহীনতা–এসব থেকে মুক্ত থাকার সাধণা আমৃত্যু করে গেছেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই জননেতা। তারা বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বিগত যুগের এই রাজনৈতিক আলেখ্য শিক্ষনীয় ও প্রেরণার উৎস হলে জাতী হিসেবে আমরা লাভবান হবো, সার্থক হবে পীর হবিবের আজীবনের শ্রম সাধণাও। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাঁর মত রাজনীতিক যত বেশি তৈরী হবে, রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনও হবে তত দ্রুত।এমনটি হলে ‘পীর’ বংশে জন্ম নিয়েও ধর্মান্ধতা ও কুপমন্ডুকতা বিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠা এই নেতা হয়তো–বা অলক্ষ্যে থেকেই তখন আনন্দিত হবেন, হবেন উদ্দীপ্ত।

উল্লেখ্য, আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারী পীর হবিবুর রহমানের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে বসবাসকালীন ২০০৪ সালের এই দিনে সিলেটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.