Sylhet View 24 PRINT

আমেরিকায় বাঙালি কমিউনিটিতে পরকীয়া বিষ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২৮ ০০:৪৫:৩১

যুক্তরাষ্ট্রে স্বামীপরিত্যক্ত ১৭১ জন নারী এখন নিউইয়র্ক সিটির পাঁচ বরোতে অবস্থিত শেল্টারে আশ্রয় নিয়ে আছেন। তারা কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কেউ সন্তান প্রসবও করেছেন। গত এক বছরে এ ধরনের আশ্রয়প্রার্থীর তালিকায় ৫ শতাধিক বাংলাদেশি ছিলেন।

জানা যায়, অভিভাবকের ইচ্ছায় বাংলাদেশে গিয়ে বিয়ের পর নবপরিণীতা গর্ভবতী হলে নিউইয়র্কে ফেরেন এক স্বামী। এরপর স্বামীর স্পন্সরে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নিউইয়র্কে আসার পরই পরিত্যক্ত হন। ডাউন টাউন ম্যানহাটানে স্বামীর অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকতে পারেননি অসহায় সেই বধূ। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে সিটি শেল্টারে নিয়ে যায়। সেখানেই ১৫ মার্চ কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন সেই নারী।

এ ছাড়া গত ১৮ মার্চ নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে স্কুল সেইফটি এজেন্ট হিসেবে কর্মরত এক যুবককে ধরিয়ে দেয় তারই মেয়েবন্ধু। তারা দুজনই বাংলাদেশি। ২২ বছর বয়সী মেয়েটি কুইন্সে অবস্থিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। মা-বাবার জ্ঞাতসারেই ২৬ বছর বয়সী ওই সেইফটি এজেন্টের সঙ্গে লিভটুগেদার করছিলেন। সবকিছুই ঠিকমতো চলছিল। সম্প্রতি যুবকটি এনওয়াপিডির অফিসার হিসেবে ইন্টারভিউ দিয়ে টিকে গেছেন অর্থাৎ সামনের সপ্তাহেই তার ওই নতুন কর্মস্থলে যোগদানের কথা। এ নিয়ে ভিন্ন এক আমেজে ছিলেন যুবকটি। কিন্তু সবকিছু ধূলিসাৎ করে দেন মেয়েবন্ধুটি। পুলিশে নির্যাতনের অভিযোগ করায় যুবকটিকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরই তাকে বরখাস্ত করা হয় সেইফটি এজেন্ট থেকে। অর্থাৎ যুবকটির ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকার। এ তথ্য ২০ মার্চ জানান কমিউনিটি লিডার মাজেদা এ উদ্দিন।

মাজেদা বলেন, ‘মেয়েটি এরই মধ্যে আরেকটি ছেলের প্রেমে মজেপ্রণ। তাই পুরনো বন্ধুকে ত্যাগ করতে পুলিশ ডাকাডাকির ঘটনা ঘটিয়েছেন। মেয়েটির বাবাকে অনুরোধ করেছি পুলিশে দেওয়া অভিযোগ যেন প্রত্যাহার করা হয়। তাহলেই ছেলেটি নতুন কর্মস্থলে যোগদানে সক্ষম হবেন।’

কুইন্স, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন, ম্যানহাটান ও স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের শেল্টারে অবস্থানকারীদের তথ্য সংগ্রহের সময় জানা গেছে, স্বামী/স্ত্রীর মধ্যকার অবিশ্বাসই গৃহদাহের কারণ। আর এর উদ্ভব হয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরকীয়া থেকে। বিশেষ করে ফেসবুকে আসক্ত নারী-পুরুষ বিবাহিত স্ত্রী-স্বামীর চেয়ে নতুন বন্ধু-বান্ধবী নিয়েই বেশি ব্যস্ত। অনেকের সন্তান রয়েছে। শিশু সন্তানকেও এসব মা-বাবা তেমন পাত্তা দিচ্ছেন না।

আরও জানা গেছে, বেশকিছু পুলিশ ডাকাডাকির নেপথ্যে অভিবাসনের মর্যাদা সুরক্ষার মতলব কাজ করেছে। সামান্যসংখ্যক পরিবারে এমন ভাঙনের অবতারণা হয়েছে ট্যাক্স রিটার্নের অর্থলোভে। স্বামী ও স্ত্রী পৃথক হয়ে পড়লে অনেক বেশি রিটার্ন আসে বলে নারী-পুরুষের ধারণা। বেশকিছু ঘটনায় শ্বশুর-শাশুড়ির বদমেজাজ প্রভাব ফেলেছে এ ক্ষেত্রে। পুত্রবধূ কর্মস্থলে সহকর্মীর সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করতেই পারেন কিন্তু তা সহ্য হয়নি ওইসব শ্বশুর-শাশুড়ির। তারা ছেলেকে দিয়ে পুত্রবধূর প্রতি অবিশ্বাসের জাল বুনেছিলেন। তাদের ছেলেও যে কর্মস্থলে নারী সহকর্মীর সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করেন তা কোনো অন্যায় নয় বলে মন্তব্য মাজেদার।

ব্রুকলিন ও কুইন্সের সীমানা এলাকা তথা ওজোন পার্কে বহু বছর যাবৎ সামাজিক কাজকর্মে খ্যাতি অর্জনকারী মিসবা আবদিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাংলাদেশি পরিবারে বিবাদ-বিভক্তি উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এর অবসানে কাউন্সেলিং দরকার। মামুলি ব্যাপারেও ঝগড়া থেকে মারধরের উপক্রম হচ্ছে।’

মাজেদা এ উদ্দিন বলেন, ‘অল্পশিক্ষিত কিছু মানুষ প্রবাসে নানাভাবে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন মানবিক মূল্যবোধহীন কর্মে। সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে মিশতে গিয়ে অনেক সময়ই কেউ কেউ নিজেকে সামাল দিতে পারছেন না। অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে সংসার ভাঙছে। মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে অর্জিত অর্থই শুধু খোয়াচ্ছেন না, একই সঙ্গে সামাজিকভাবেও হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন।’

জানা গেছে, স্বামী-স্ত্রীর বিরোধের পরিণতি হিসেবে অনেকে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশেও ফিরে গেছেন। আবার কেউ কেউ সাময়িক লোভ-লালসায় পরপুরুষের হাত ধরে ঘর ছাড়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বোধোদয় ঘটেছে। তবে ভাঙা সংসার আর জোড়া লাগেনি।

এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি মো. আবদুল আজিজ বলেন, পারিবারিক মূল্যবোধ সম্পর্কে সজাগ লোকজনের পক্ষে কখনই এমন চরম অবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয়। তবে যারা নতুন বসতি স্থাপন করে খুব দ্রুত আমেরিকান সাজতে চায়, তারাই কথায় কথায় পুলিশ ডাকে। একবার পুলিশের কবলে গেলে ছোটখাটো বিরোধকেও অনেক সময় মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে অনেক পুরুষকেও গৃহহারা হতে হচ্ছে। তারা হোটেল-মোটেল অথবা ঘনিষ্ঠদের বাসায় অবস্থানে বাধ্য হচ্ছেন। তবে যেসব নারীর আত্মীয়স্বজন নেই, তাদেরই আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে।’

অ্যাটর্নি আজিজ বলেন, ‘কমিউনিটিতে অনেক সংগঠন রয়েছে। মসজিদ-মন্দির-চার্চও রয়েছে। তারা কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্বটি পালন করতে পারে। তাহলেও হয়তো এমন নাজুক পরিস্থিতি কমানো যাবে। শত শত মানুষ যদি পুলিশ ডাকাডাকি করে এবং নারীদের যদি সিটি শেল্টারে অবস্থান করতে হয়, তাহলে তা কোনোভাবেই কমিউনিটির জন্য সুখকর হতে পারে না। এ বদনামের ভাগিদার কমিউনিটির সবাই।’
-বাংলাদেশ প্রতিদিন

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.