Sylhet View 24 PRINT

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা, আমেরিকায় বাংলাদেশি সালমান গ্রেফতার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-২৭ ১১:৪৩:০২

নিউইয়র্ক প্রতিনিধি :: প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হবার পর ঐ ছাত্রীকে উত্যক্ত করার দায়ে পরপর দুই কলেজ থেকে বহিষ্কারের প্রতিশোধ নিতে ঐ কলেজের ডীনকে বোমা মেরে হত্যাসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ায় ফ্লোরিডার সালমান রশীদ (২৩)কে গ্রেফতারের পর ২৫ নভেম্বর সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হয়।

কিশোরগঞ্জের কামরুল হাসানের পুত্র সালমান রশীদ এই বোমা হামলার জন্যে আইসিস এর সাথে যোগাযোগ করেন। সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের প্রসিকিউটর সোমবার অপরাহ্নে মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত বছরের নভেম্বরে মায়ামী ডেড কলেজের এক বাংলাদেশী ছাত্রীকে প্রেম নিবেদনের পর সাড়া না পেয়ে তাকে হেনস্থার চেষ্টা করেন সালমান। এ অভিযোগে তাকে ঐ কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর সালমান ভর্তি হন নিকটস্থ ব্রাওয়ার্ড কলেজে। সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছেও একই অভিযোগ পেশ করেন ঐ ছাত্রী। এরপর সেই কলেজ থেকেও সালমানকে বহিষ্কার করা হয়।

ফেডারেল প্রসিকিউটর আরো জানান, ইতিমধ্যেই সালমানের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী এফবিআই তদন্ত শুরু করেছিল যে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে সালমানের সম্পর্ক রয়েছে। ফেসবুকে সালমান স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যে, তিনি বিশ্ববাপী মুসলমানদের নিগৃহিত করার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকায় বড়ধরনের একটি হতাযজ্ঞ চালাতে আগ্রহী।

সালমান ঐ ছাত্রীকে লিখেছিলেন, ‘প্রথম দেখার পরই তোমার ব্যাপারে আমার অন্যরকম একটি ধারনা জন্মেছে। এক্ষণে আমি তোমাকে জানাতে চাই যে, তুমি হচ্ছো আমার বাকি জীবনের অর্ধাংশ। তাই, আবার যখন দেখা হবে অবশ্যই তুমি আমার সান্নিধ্যে আসবে। এটি করতে তুমি বাধ্য।’

ছাত্রীটি কলেজ কর্তৃপক্ষ সমীপে অভিযোগ করেন যে, সালমান তাকে অনবরত চিঠি দিচ্ছে, মেসেজ পাঠাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কলেজ থেকে গাড়িতে উঠার সময়েও পিছু নিচ্ছে সালমান। ছাত্রীটি কর্তৃপক্ষকে জানান যে, ফেসবুকে সালমান যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা তাকে সন্ত্রস্ত্র করেছে এবং নিজেকে কখনোই তিনি নিরাপদ ভাবছেন না। সালমানকে কোর্টে সোপর্দ করার পর জামিনহীন আটকাদেশ দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। সামনের মাসে তাকে পুনরায় আদালতে হাজির করা হবে পরবর্তী পরিক্রমা গ্রহণের জন্যে। মামলার বিবরণে প্রকাশ, গত ডিসেম্বরে সালমানকে মায়ামী ড্যাড কলেজ থেকে এবং এ বছরের মে মাসে ব্রাউয়ার্ড কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে এফবিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সালমানের ফেসবুকের স্ট্যাটাস অনুযায়ী ছদ্মবেশী এফবিআই কর্মকর্তারা তার সাথে যোগাযোগ করেন। সে সময়ে সালমান জানায় যে, তিনি আইসিসের এক্সপার্ট ব্রাদার খুঁজছেন মায়ামীতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্যে। এক পর্যায়ে এ মাসেই সালমান তাদেরকে (আইসিস মনোভাবাপন্ন মনে করে এফবিআইয়ের এজেন্টকে) জানান যে, উপরোক্ত দুই কলেজের ডীন হচ্ছেন তার টার্গেট, যারা তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছেন। দুই ডীনের নামও প্রদান করেন সালমান। তাদের অফিসের রুম নম্বরসহ বিস্তারিত ঠিকানাও প্রদান করেন সালমান। ‘এরা উভয়েই ইসলামকে ঘৃণা করে। এরা দু’জন যদি মারা যায় এবং যারা তাদেরকে হত্যা করবে, তারা অবশ্যই আল্লাহ কর্তৃক পুরষ্কৃত হবেন। এ দু\'জনেরই মরতে হবে।’

সালমান উল্লেখ করেছেন, এরা দু’জন শুধু তার দুশমন নন, ইসলাম এবং আল্লার দুশমন।

ছদ্মবেশী এফবিআই এজেন্টকে সালমান ভেবেছেন বোমা প্রস্তুতকারক হিসেবে। তাই সালমান জানিয়েছেন কলেজ প্রাঙ্গনে হামলার ভালো সময়ের কথাও। যখন নিরাপত্তা রক্ষার অবস্থান খুবই দুর্বল হয়, তখোনই হামলার উত্তম সময় বলেও উল্লেখ করেছেন সালমান। ‘তাই এ অপারেশন খুব একটা কঠিন কাজ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন সালমান। এই দু’জনকে হত্যার সময় আরো বেশী মানুষ নিহত হলেও ক্ষতি নেই, কারণ ওরা ইসলামের শত্রু-মনে করেন সালমান।

সালমানের জন্ম কিশোরগঞ্জে। সে মা-বাবার আগ্রহে মায়ামীর একটি মসজিদে যাতায়াত করেছেন ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহনের জন্যে। স্কুল ছুটির দিন অর্থাৎ শনি-রোববার ঐ মাদ্রাসায় যেতেন তিনি। একারণে কমিউনিটির সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেকেও ক্রমান্বয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সালমান জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয় বলে প্রবাসীরা মনে করছেন।

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সালমানের সন্ত্রাসে প্রবৃত্ত হবার এ সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। এরফলে ফ্লোরিডাসহ আমেরিকায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিব্রতকর পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছে। বিশেষ করে কলেজ/ভার্সিটিগামী ছেলে-মেয়েরা প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছেন।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.