Sylhet View 24 PRINT

ভার্চুয়াল জগতে বেজে উঠলো ‘প্রতিবাদী কণ্ঠে বাউলগান’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৫-২৮ ২১:৫৭:১৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: বাউলসম্রাট শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন লেগে যাওয়া তার ৪০ বছরের সংগ্রহ করা গানে খাতা, নথিপত্র, নিজের লিখা গানের খাতা , বাদ্যযন্ত্রসহ শিষ্যদের দোতারা, বেহালা, হারমোনিয়াম, খঞ্জনিসহ সব পুড়িয়ে ছাই হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে বাউল রণেশ ঠাকুর নিজেও কারো ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত বলে আখ্যা দেন।  সেই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে বুধবার (২৭ মে) বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় কানাডাভিত্তিক ফেইসবুক পেইজ গুরু’স মিউজিক্যাল স্টুডিও আয়োজন করে ‘প্রতিবাদী কণ্ঠে বাউলগান’।

সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কিছু সংস্কৃতিকর্মী যারা সিলেট তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক আন্দোলনে সম্মুখ সৈনিক হিসেবে ছিলেন এবং মনের ভিতর ও কণ্ঠে ধারণ করেন বাউলগান তথা বাউল শাহ আব্দুল করিমের বাউল দর্শন ও ভাবধারাকে।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লোকসংগীতশিল্পী গুরুপ্রসাদ দেবাশীষ এবং  প্রতিবাদে, গানে, কথায় সংযুক্ত হন ইংল্যান্ড থেকে সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক অসীম চক্রবর্তী, বাংলাদেশ থেকে লোকসঙ্গীত ও গণসঙ্গীতশিল্পী কিশোর আচার্য্য ও গীতিনাট্যশিল্পী শৈলেন চন্দ্র দাস।

শুরুতেই ঘটনার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে, বাউল শাহ আব্দুল করিমের ‘মন মজাইলে ওরে বাউলা গান’ গানটি গেয়ে সূচনা করেন লোকসংগীতশিল্পী গুরুপ্রসাদ দেবাশীষ এবং বাউলগানের মাধ্যমে ঈশ্বরের ভাবনা ও গণমানুষের ভাবনার সংমিশ্রণের বিষয়টিও আলোকপাত করেন। তার সাথে পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে বাউল রণেশ ঠাকুর ও বাউল রুহি ঠাকুরের কণ্ঠে গীত বহুল পরিচিত ‘আমার নাও যে গাঙে ডুবে না’ ‘গুরু বলে ভক্তি ভরে ডাকরে আমার মন রসন’ ‘খাঁজা তোমার পাক দরবারে আমি কাঙ্গাল যেতে চাই’ বাউলগানের অংশ বিশেষ পরিবেশন করে শোনান গুরুপ্রসাদ দেবাশীষ ।

বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানে সহজভাবনা ও সহজকথার বিশেষত্ব তুলে ধরে লোকসঙ্গীতশিল্পী কিশোর আচার্য্য পরিবেশন করেন লালন সাঁইজি, কবিয়াল বিজয় সরকার, ও বাউল আব্দুল করিমের গান  ‘আউল বাউল কর তোমরা বাংলার বাউল কি আর আছে রে’ ‘সোনার মান গেলরে ভাই’ ‘আমি কি করিবো ওরে ও প্রাণ নাথ’ ‘হীরামতি’ ‘দেশে বর্ষা আইলো রে’ ‘আমি গানের মালা গাঁথিয়া রাখিব হরষে’ ।

বাউল গানের ভাবধারা ও দর্শন তথা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দিন দিন লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য ও মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোকপাত করেন সাংস্কৃতিককর্মী ও সংগঠক অসীম চক্রবর্তী। উনি উল্লেখ্য করেন, বেশ কিছু বছর আগেও গ্রামে গ্রামে মালজোড়া গান, বাউলগান, কবিগান আসর বসতো বিভিন্ন মেলায় বা কোন উৎসবকে ঘিরে, যা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, কিছু সুবিধাবাদী জনগোষ্টি যারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে, জনমনে ধর্মের নামে সাধারণ মানুষদের বাউলগান বা বাংলা লোকসংস্কৃতির থেকে বিচ্যুত করা প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে। বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের ঘরে আগুন ও বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেয়ার বিষয়টি পুর্বপরিকল্পিত এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতির উপর অনেক বড় আঘাত, এই বিভ্রান্তকারীদের নির্মূল করতে রাষ্ঠীয়ভাবে এর পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে জোর দাবি জানান অসীম চক্রবর্তী।

বাউল রণেশ ঠাকুর ও বাউল রূহি ঠাকুর হিন্দু পরিবারে সন্তান হয়েও আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর পূর্বে সামাজিক বাঁধা অতিক্রম করে নিজের সম্প্রদায়ের মানুষদের তোয়াক্কা না করে বাউল শাহ আব্দুল করিমের সঙ্গ করেন ও এমনকি বিভিন্ন ওরসে জলসায় নিয়মিত গান গেয়েছেন। এই যে এক অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চেতনা নিয়ে বেড়ে উঠেছেন একই পরিবারের দুইটি ভাই সেইসব কথা উল্লেখ্য করেন, যাদের ছোটবেলা থেকে দেখে শুনে বড় হয়েছে সুনামগঞ্জের সন্তান গীতিনাট্যশিল্পী  শৈলেন চন্দ্র দাস শুভ। সেই সাথে  শৈলেন চন্দ্র দাস কিছু বাউলগা’ ‘সত্যবল সুপথে চল ওরে আমার মন’ ‘ভব সাগরের নাইয়া মিছা গৌরব কররে পরার ধন লইয়া’ ‘এদেশে স্বার্থপরদের চলেছে রঙ্গের খেলা’।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে দর্শক সারি থেকে অনুষ্ঠানের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন, কানাডার টরন্টোতে বসবাসরত প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক সুব্রত কুমার দাস, তিনি বাউল রণেশ ঠাকুরের উপর নিপীড়ণের প্রতিবাদ জানান ও উল্লেখ্য করেন যে ‘বাউলগানের গভীর বক্তব্য ধারণ করতে পারলে আমাদের চেতনা শাণিত হয়।’

জাপানের টোকিও থেকে অনুষ্টানে সংযুক্ত হয়ে দাস নিরুপম বলেন ‘শিক্ষিত মানুষের একটা প্রিয় কথা হলো ‘আবহমান বাংলা সংস্কৃতি’। এই কথা দিয়ে আসলে কি বুঝায়- সেই প্রশ্ন আজকে ওঠা দরকার। আবহমান বাঙলা সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য বলতে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’, ‘সকলে মিলিয়া সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে থাকিল’ মার্কা কথাই বোঝানো হয়। কিন্তু ব্যাপার কি তাই? বাউল- ফকিরদের নির্যাতন করে, বাউল গানের বাজার মূল্য তৈরি করে করপোরেট পুঁজির মাঝদিয়ে আত্মসাৎ হচ্ছে।\'\'

বাউলগান ও লোকসংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্যে সকলের শুভদৃষ্টির আহবান জানিয়ে ও বাউল রণেশ ঠাকুরের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ মে ২০২০/ডেস্ক/পিডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.