আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মুনজের অাহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য:: স্বপ্নের দেশ ব্রিটেনে সপ্নভঙ্গের দহন নিয়ে এখন কঠিন সময় পার করছেন বাংলাদেশ থেকে অাসা শিক্ষার্থীরা। ব্রিটেনের ষ্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে একসময় বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল 'অাইলোরে লন্ডনের গাড়ি,পাসপোর্ট করো তাড়াতাড়ি'। কিন্তু এখানকার বাস্তবতা এখন সম্পুর্ন ভিন্ন। ষ্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে অাসা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই এখন দেশটিতে বসবাসের বৈধতা হারিয়েছেন। কাজের অনুমতি না থাকায় পাচ্ছেন না চাকুরী। জীবন কাটছে অনিশ্চয়তায়। লেখাপড়ার জন্য এদেশে এলেও মাঝপথে ভিসা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। অার একদিকে যেমন কাজ করবার অনুমতি নেই, অন্যদিকে অাদালতে মামলা চালাতে গিয়ে অনেকে হয়েছেন সর্বস্বান্ত।
ব্রিটেনের হোম অফিস ইংলিশ টেষ্টে জালিয়াতির ভূল অভিযোগ তুলে সাত হাজারের বেশি বিদেশী শিক্ষার্থীকে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শিক্ষার্থীও রয়েছেন। হোম অফিসের এমন সিদ্বান্তের কারনে ভিসা হারিয়ে চাকুরীচ্যুত অবস্থায় মানবেতর ও অনিশ্চিত দিন কাটাচ্ছেন এসব বিদেশী শিক্ষার্থীরা।
চলতি সপ্তাহে ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র দফতরের আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইংরেজীতে অদক্ষ হাজারো বিদেশী শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সাত হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীকে তাৎক্ষণিকভাবে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্ত ছাত্রছাত্রীদের আপীলের সুযোগই দেয়া হয় নি।
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী শেখ অামিন (৩৩) জানান, তারা ব্রিটেনের অভিবাসন ট্রাইব্যুনালের নেয়া সিদ্ধান্তটিকে সম্পূর্ণ অন্যায্য হিসাবে দেখছেন ।
অামিন জানান, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা গত বছর তাকে গ্রেফতার করেন। এরপর তাকে তিন তিন গেটউইক এয়ারপোর্টের কাছে ব্রুকহাউস রিমুভাল সেন্টারে রাখা হয়। পরে অামিন জামিনে মুক্তি পান। তখন থেকে অামি অামার উপর অানা অভিযোগের বিরুদ্ধে অাইনগতভাবে লড়ে যাচ্ছি। এদেশে অামার এখন কাজ বা ব্যাবসার অনুমতি নেই। ঘর ভাড়াও পাচ্ছি না এদেশে বসবাসের বৈধতা না থাকার কারনে। পরিচয়পত্র হিসেবে ব্যাবহৃত ড্রাইভিং লাইসেন্সও কেড়ে নেয়া হয়েছে।
অারেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী নাফিস করিম ও তার স্ত্রী ইরফানা করিম জানান, হোম অফিস নাফিসের ভিসা বাতিল করার পর তিনি ভিসা না থাকার কারনে চাকুরী হারিয়েছেন। ইরফানা চাকুরী হারিয়েছেন তার একবছর অাগে। এ দম্পতি এখন তাদের দুই শিশুপুত্র ইফরাজ ও ইহফামকে নিয়ে দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছেন। নাফিস জানান, ২০১৫ সালে ভিসা কেড়ে নেয়া হয়। অাগামী মাসে ( জুনে) তার বসবাসের ফ্লাটটি থেকেও তাকে উচ্ছেদের নোটিশ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারী ঐ ঘোষনায় বলা হয়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী তাদের পরিবর্তে অন্যদের পরীক্ষায় পাঠান। জালিয়াতির মাধ্যমে এক্ষেত্রে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে।
যদিও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারনে অনেক নির্দোষ শিক্ষার্থীরাও প্রতারণার শিকার হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্পাত্র জানান সরকারীভাবে পুরো ব্যাপারটি খতিয়ে দেখা হবে। এইদিকে স্বরাষ্ট্র দফতর থেকেও এক রিপোর্টে জানানো হয়, পরীক্ষার্থীদেরকে আবারো পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের মাধ্যমে মূল বিষয়টির সত্যতা যাচাই করা হবে।
সিলেট থেকে অাসা শিক্ষার্থী ওয়াহিদুর রহমান জানান, সরকারের উল্লিখিত নিয়মের কারনে তার মত হাজারো অভিবাসীদের দেশে ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। এখানে অবস্থানরত অভিবাসী শিক্ষার্থীরা খন্ডকালীন চাকরি থেকে শুরু করে সবকিছুতে সমস্যায় পতিত হচ্ছেন। ওয়াহিদ অারো জানান, ভিসা বাতিল হবার পর এদেশে বেচেঁ থাকবার জন্য এখন তাকে এখানে থাকা অাত্বীয় স্বজনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তার পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গেছে।
অভিবাসন আইনজীবী মি.লুইস এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, সরকারের নেয়া সমগ্র ব্যাপারটি তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছে যা অভিবাসিদের জীবনযাত্রায় দারুন অনিশ্চয়তা তৈরী করেছে।
লন্ডনের ইষ্ট হাম থেকে নির্বাচিত এমপি ষ্টিফেন টিমস বলেছেন, অনেক শিক্ষার্থীই এখানে সম্পুর্ন নির্দোষ। কিন্তু তাদের সাথে লজ্জাস্কর ও দুঃখজনক অাচরন করা হচ্ছে।
এ ইস্যুতে অাদালতে যাওয়া বাংলাদেশী একজন শিক্ষার্থীর মামলার রায়ে ইমিগ্রেশন ট্রাইবুনালের একজন বিচারক বলেন, বিদেশী শিক্ষার্থীদের প্রতি হোম অফিসের অাচরন ক্ষমতার অপব্যাবহার এবং প্রক্রিয়াগতভাবে অসচ্ছ।
হ্যামলেটস সলিসিটরস এর অন্যতম কর্নধার,সলিসিটর বিপ্লব কুমার পোদ্দার বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হোম অফিসের এমন ন্যায়হীন অাচরনের শিকার শিক্ষার্থীরা এখানে অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেককে অাটক করে রিমুভ্যাল সেন্টারের মাধ্যমে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অনেকে জামিনে রয়েছেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ মে ২০১৮/এমএ/এক