Sylhet View 24 PRINT

শান্তিনিকেতনে পর্যটক আকর্ষণ বাংলাদেশ ভবন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-২৪ ০০:৩১:৫৩

কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে এসেছিলেন যাদবপুরের বাপুজিনগরের বাসিন্দা ভারতী পাল। অন্যদের কাছে নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবনের নাম শুনে তিনি আর ধৈর্য ধরতে পারেননি। প্রবল আগ্রহ নিয়ে গত শনিবার বাংলাদেশ ভবন পরিদর্শন করেন ষাটোর্ধ্ব এ নারী। জাদুঘরে প্রবেশের পরই পুরনো স্মৃতি উসকে দেয় ভারতী দেবীকে। বাংলাদেশে জন্ম হলেও তখন বয়স কম থাকার কারণে সেভাবে বাংলাদেশকে মনে নেই তার। ফলে কিছুটা দুঃখ আছে তার মনে। তাই এদিন দুপুরের দিকে জাদুঘরে ঢুকেই দেয়ালে টাঙানো বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি ছবির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল ভারতী দেবীকে। তিনি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পেপার কাটিং।

সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ঘুরে দাঁড়ান তিনি। বলেন, ‘আমার জন্ম বাংলাদেশে, কিন্তু তখন বোঝার মতো বয়স না থাকার কারণে বাংলাদেশকে সেভাবে মনে নেই। এটাই আমার দুঃখ যে আমি বাংলাদেশকে সেভাবে দেখে আসতে পারিনি। এখন বোঝার বয়স হয়েছে, কিন্তু যাওয়ার কোনো সুযোগ-সময় নেই। আজ সেই বাংলাদেশকে সামনে দেখে মন ছুঁয়ে যাচ্ছে।’ ভারতী দেবীর সঙ্গেই এসেছিলেন তার মা যাদবপুরের সুলেখার বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী নারী অন্নপূর্ণা কুণ্ডু। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ১৯৬২ সালে পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেকেরই শিকড় রয়েছে বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশ ভবনে এসে আগের কথা সব মনে পড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভবন যে দেখতে পারব— এটাই কখনো ভাবিনি।’

কেবল অন্নপূর্ণা বা ভারতী দেবীই নয়, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত এই ভবনটি এখন সব পর্যটকের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতির ক্ষেত্রে অভিনব নিদর্শন হলো এই বাংলাদেশ ভবন। গত ২৫ মে ভারত ও বাংলাদেশ-উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ ভবনটির দ্বারোঘাটন হয়। ভবনের দুটি প্রধান আকর্ষণ বিন্দু হলো গ্রন্থাগার এবং সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। গ্রন্থাগারটি সবার জন্য আগেই খুলে দেওয়া হলেও গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাদুঘরের দরজাও উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শান্তিনিকেতন গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ভবনটিতে বাংলাদেশের শিলাইদহে থাকাকালীন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত কবিতা, গান ও বিভিন্ন মুহূর্তের ছবিসহ বাংলাদেশের ইতিহাস রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ভবনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশটিকে নতুন করে চেনার দরজা খুলে গেছে বলে মনে করেন এখানে ঘুরতে আসা কলকাতার বাসিন্দা ঝিলাম গুপ্ত। বাংলাদেশ ভবন নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন অভিনেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়া ব্যক্তিত্ব চৈতালি দাশগুপ্ত। ভবন পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ‘খুলনায় আমার মামার বাড়ি, টাঙ্গাইলে শ্বশুর ভিটে। বাংলাদেশে আমি বহুবার গিয়েছি। কিন্তু এই ভবন দেখে আমার মনে হচ্ছে এক খণ্ড বাংলাদেশই আমি দেখছি। শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যেভাবে এখানে স্থান পেয়েছে— তা সত্যিই সুন্দর। সবমিলিয়ে তথ্যবহুল একটা জায়গা বলা যেতে পারে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে জানতে বা চিনতে এই ভবনের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, ‘বাংলাদেশকে জানতে হলে বা গবেষণা করতে গেলে বাঙালিকে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে আসতেই হবে।’ তার অভিমত, বাংলাদেশ সম্পর্কিত এরকম গ্রন্থাগার আর কোথাও নেই।

জাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুদর্শনা সেন বলেন, ‘এখানে যারা আসছেন, প্রত্যেকেই একটা শ্রদ্ধা নিয়ে আসছেন। তারা প্রত্যেকে ভালোবেসে আসছেন।’ তার অভিমত, বাংলাদেশ যেভাবে ভাষাকে সম্মান দিয়ে বা শ্রদ্ধার সঙ্গে রেখেছে— কিংবা বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যেভাবে সবার সামনে প্রদর্শন করছে—সেটা একটা গর্বের বিষয়।’

বাংলাদেশ ভবন নিয়ে খুব ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই ভবনের চিফ কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনই (১৮ সেপ্টেম্বর) শিক্ষামূলক ভ্রমণে এসেছিল স্থানীয় চাঁদপাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী ও বাংলাদেশ থেকে প্রথমদিন ২৫০ জনের মতো দর্শক পেয়েছি। তারা প্রত্যেকেই ভবন দেখে আপ্লুত।’ তিনি আরও জানান, এই ভবনের গ্রন্থাগার ও জাদুঘর-দুটিই অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আপাতত সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়েই প্রবেশ করা যাবে এ ভবনে। গ্রন্থাগারে বসে বই পড়ারও সুযোগ থাকছে। গ্রন্থাগারটিতে ৩০৭৪টি বই থাকলেও বাংলাদেশ সরকার আরও অতিরিক্ত তিন হাজার বই দেবে। মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অভিমত, ‘বাংলাদেশ বিষয়ক এতগুলো বই পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতে খুবই দুর্লভ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে কেউ যদি অবহিত হতে চান— তাদের কাছে এই গ্রন্থাগারটি অত্যন্ত বড় জায়গা।’ উল্লেখ্য, বুধ ও বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির দিন এবং সরকারি ছুটির দিন বাদে অন্য দিনগুলোতে খোলা থাকছে এই ভবন।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.