Sylhet View 24 PRINT

মিনিকেট চালের নামে কী খাচ্ছি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-০৯ ২৩:৫৭:২০

বাজারে এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রথম পছন্দের চালের মধ্যে অন্যতম মিনিকেট। চিকন ঝকঝকে এই চালের দামও অন্যান্য সাধারণ চালের চেয়ে বেশ বেশি। অথচ এই নামে কোনো চালের জাত নেই, চাষও হয় না বাংলাদেশে। বাংলাদেশ কিংবা ভারত- কোনো দেশেই মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাতের অস্তিত্ব মেলেনি এখনো। তাহলে মিনিকেট চালের নামে আমরা কী খাচ্ছি?

আসলে উত্তরের শস্যভান্ডার দিনাজপুরে মিনিকেট চালের নামে চলছে প্রতারণা। মূলত, একশ্রেণির চালকল মালিক ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মোটা চাল সরু করে তা মিনিকেট নামে চালিয়ে যাচ্ছে। কাটিং, পলিশ ও কালার ঠিক রাখার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে চালের পুষ্টিগুণ যেমন কমে যায়, তেমনি তা মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানা রোগবালাইয়ের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়।

অথচ মানুষ না জেনে ঝকঝকে ‘মিনিকেট’ উৎকৃষ্ট চাল ভেবে বেশি দামে কিনে খাচ্ছে।

যে চালের জাত নেই, কিংবা যে চাল চাষ হয় না বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা, সেই মিনিকেটের নামকরণ কীভাবে হলো? এ ব্যাপারে জানা গেছে কয়েকটি তথ্য, যেগুলো প্রতিবেশী দেশ ভারতভিত্তিক।

‘১৯৯৫ সালের দিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের কৃষকদের মাঝে সে দেশের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাতের চিকন ‘শতাব্দী’ ধানবীজ বিতরণ করে। মাঠপর্যায়ে চাষের জন্য কৃষকদের এ ধানবীজের সঙ্গে আরো কিছু কৃষি উপকরণসহ একটি মিনি প্যাকেট দেয়া হয়। ওই প্যাকেটটাকে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলত ‘মিনি কিটস’ বলে। সেখান থেকেই ‘শতাব্দী’ ধানের নাম হয়ে যায় ‘মিনিকেট’।

আবার অনেকে বলেন, ‘মিনি প্যাকেটে করে দেয়ায় ভারতীয় কৃষকদের কাছে এ ধান শেষমেশ মিনিকিট বলে পরিচিতি লাভ করে। কৃষকরা মিনি প্যাকেট শব্দটির মধ্য থেকে ‘প্যা’ মাত্রাবদ্ধ অক্ষরটি বাদ দিয়ে সেটি মিনিকেট বলে পরিচয় দিতে শুরু করে।’

তবে নামের পেছনে ঘটনা যা-ই থাক, মিনিকেট নামে কোনো চালের জাত নেই এটাই বাস্তবতা। মোটা চালকে পলিশ করে মিনিকেট চাল বলে বিক্রি করা হচ্ছে দেশের বাজারে। 

খোঁজ নিয়ে মিনিকেট চাল বানানোর একটা যান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে। চলুন দেখে নিই প্রক্রিয়াটি।

অটোরাইস মিলে রয়েছে একটি অতি বেগুনি রশ্মির ডিজিটাল সেন্সর প্ল্যান্ট। এর মধ্য দিয়ে যেকোনো ধান বা চাল পার হলে সেটি থেকে প্রথমে কালো, ময়লা ও পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর মোটা চাল চলে যায় অটোমিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে পর্যায়ক্রমে ৫টি ধাপ পার হওয়ার পর লাল কিংবা মোটা চাল সাদা রং ধারণ করে। এরপর আসে পলিশিং মেশিংয়ে। অতি সূক্ষ্ম এই মেশিনে মোটা চালের চারপাশ কেটে সেটিকে চিকন আকার দেয়া হয়। এরপর সেটি আবার পলিশ ও স্টিম দিয়ে চকচকে শক্ত আকার দেয়া হয়। সবশেষে সেটি হয়ে যায় আকর্ষণীয় ও কথিত মিনিকেট চাল। আর চকচকে করার জন্য ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ক্যামিকেল যা মানবদেহে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ‘মিনিকেট’ নামে বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত কোনো জাতের ধান নেই। বিআর ২৮, কল্যাণী, স্বর্ণা, গুটিস্বর্ণা, লাল স্বর্ণা, আইঅর-৫০, জাম্বু ও কাজল লতা জাতের ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বস্তায় ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এ চালের ব্যাপক চাহিদার জন্য ‘মিনিকেট’ নামে  প্রতারণার ব্যবসা চলছে জমজমাট।

তবে দিনাজপুর চালকল মালিক গ্রুপের সভাপতি মোছাদ্দেক হুসেন কারখানায় মিনিকেট তৈরির অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, বাস্তবেই মিনিকেট চাল রয়েছে। এ ধান কুষ্টিয়া অঞ্চলে চাষ হয়। মোটা চাল ছেঁটে সরু করে তা মিনিকেট নামে চালানোর অভিযোগ অভিযোগ সত্য নয়। সাধারণ মোটা চাল মেশিনে চিকন করা হয় না। কাটিং, পলিশ ও কালার মেশানার অভিযোগও সত্য নয় বলে দাবি তার।

এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও মজুদ বন্ধ করতে আমদানিকারক, আড়তদার, পাইকার ও খুচরা বিক্রেতাদের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে লাইসেন্স করতে নির্দেশ দিয়েছিল খাদ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও দিনাজপুরের বেশির ভাগ আমদানিকারক লাইসেন্স নেননি। জেলায় এ যাবত গুটি কয়েক চাল ব্যবসায়ীর লাইসেন্স হলেও বেশির ভাগ আমদানিকারক ধরাছোঁয়ার বাইরে। এর মধ্যে খুচরা ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং আমদানিকারক রয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক।

গত ২ অক্টোবর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম চালের আমদানিকারক, মজুতদার, আড়তদারসহ সব ব্যবসায়ীকে নতুন করে লাইসেন্স নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া ১৫ দিন পরপর গুদাম ও স্টকের চাল, গমের হিসাব স্থানীয় খাদ্য অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য বলা হয়। গত ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত লাইসেন্স করার সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

নিয়মানুযায়ী ধান, চাল, সয়াবিন, পামওয়েল, ডাল ও চিনি এই সাতটি পণ্যের সব ধরনের ব্যসায়ীকে ফুড লাইসেন্স করার নির্দেশনা রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.