Sylhet View 24 PRINT

'আইসে মহারানী, মুড়ির টিনে উঠসেন ক্যান?'

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৩-৩১ ০০:৫১:৫৭

রিমি রুম্মান, যুক্তরাষ্ট্র :: যখন মিরপুর থেকে আজিমপুর ইডেনে ক্লাস করতে যেতাম, সকাল সকাল টেকনিক্যালে এসে দাঁড়িয়ে থাকতাম বাসের অপেক্ষায়। গাবতলী থেকে মানুষ বোঝাই বাস এসে থামতো। কিছু সময় থেমেই আবার ছেড়ে যেতো। এরই মাঝে কিছু মানুষ হুড়োহুড়ি করে উঠে যেতো। একে একে বেশ ক'টি বাস চোখের সামনে দিয়ে চলে যেতো। আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকাতাম। অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থেকে শেষে সকালের তীব্র ভিড় ঠেলে দ্বিধাগ্রস্ত, ভীতসন্ত্রস্ত আমি যখন বাসে উঠতাম, অনেকেই পায়ে পা মাড়িয়ে যেতো। প্রচণ্ড গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ নিয়ে বাদুড়ঝোলা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবার সময়ে কেউ ইচ্ছাকৃত গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ালে অস্বস্তি আর সংকোচে বলতাম, "ভাই, একটু সরে দাঁড়াবেন, প্লিজ"। ওমনি মুখ ঝামটা মেরে পুরুষ সহযাত্রীটি বলে উঠতেন, "ইইসস্‌ আইসে মহারানী, এত্তো সমস্যা থাকলে মুড়ির টিনে উঠসেন ক্যান, প্রাইভেট কারে যাইতে পারেন না?" আশেপাশের কেউ কেউ ভেংচি কেটে হোহো করে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তাকাতো, যেন ভিনগ্রহের এক বাসিন্দা আমি।

মফঃস্বল শহর থেকে পড়তে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। প্রাইভেট কার, সেতো বহুদূরের স্বপ্ন! একদিন ক্লাস শেষে ফিরছিলাম। টেম্পুতে কিছুদূর যাবো, তারপর বাস ধরবো, বাস থেকে নেমে আবার রিক্সা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলাগুলি হলো। সেদিন কোন বাস পাইনি। শেষে অন্য অনেকের মতো সবজি বহন করার ভ্যানে পা ঝুলিয়ে বসে পড়লাম। কিছুদূর যেতেই আচমকা দুনিয়া আঁধার করে অঝোর বৃষ্টি শুরু। আমার বই, খাতা সব ভিজে গেলো। ভিজে চুপচুপে আমিও। সেই তুমুল বৃষ্টির সময়ে আরো অনেকের সাথে জবুথবু আমি সিগন্যালে বসে। চুল থেকে গড়িয়ে চোখ বেয়ে নামছিলো বৃষ্টির পানি। ভেজা চোখ। তবুও স্বপ্ন দেখা থেমে নেই। একদিন এমনই তুমুল বৃষ্টির দিনে নগরীর পিচঢালা পথ দিয়ে ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে গাড়িতে বাড়ি ফিরবো গান শুনতে শুনতে। সেই গানটি... বায়ু বহে পূর্বসমুদ্র হতে... উচ্ছল ছলো- ছলো তটিনী তরঙ্গে... মন মোর মেঘের সঙ্গী ...। ভাবনায় ছেদ পড়লো যখন, শুনি পাশের গাড়ি থেকেই গানটি বাজছে। বাঁয়ের সেই প্রাইভেট কারে তখন আমারই সহপাঠী। ওঁরা ঢাকায় স্থায়ী। বাবার বাড়ি। গাড়িতে চড়ে অভ্যস্ত। ফিরে তাকাই। সেও কপাল কুঁচকে তাকায়। সত্যিই আমায় চিনলো কিনা, তা নিয়ে আমার পরিস্কার কোন ধারনা নেই। তবে আমি শরমে মরে যেতে যেতে ভাবছিলাম সিগন্যালের লাল বাতি এতো দীর্ঘ সময় যাবত জ্বলছে কেন?

আজ এই শহরে সূর্য উঠেনি। মেঘলা আকাশ। সকালে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেই ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েছি। গাড়ি নেইনি সাথে। গানও শুনিনি। হালকা বৃষ্টির ছটায় হাঁটতে মন্দ লাগেনি। তবে বাস্তবের পৃথিবীতে পরাবাস্তবতার মতোই কানে বেজেছে সেই গানটি,

মন মোর মেঘের সঙ্গী
উড়ে চলে দিগদিগন্তের পানে
নিঃসীম শূন্যে শ্রাবন-বর্ষণ-সঙ্গীতে
রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম...

সবাইকে শুক্রবারের শুভেচ্ছা।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.