আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ইং

মাহিদ এখন শুধুই স্মৃতি!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-০৬ ১১:২১:৫০

শামীমা কালাম/ এটি এম এ হাসান জেবুল :: এই সুন্দর মুহুর্তের ছবিগুর সব চেয়ে কনিষ্ট মানুষ মাহিদ।সবার পূর্বে সেই চলে গেল এই সাজানো নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে। ২৫ মার্চ রাতেই ছিনতাইকারীর হাতে খুন হলো আমাদের মাহিদ!

মাহিদ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে। চাকুরির ইন্টারভিউয়ের জন্য সিলেট থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে খুন হয়।

এই ছবিসহ আরও অনেক ছবি মাহিদের মোবাইলের। ছবিগুলি মাহিদের হাতে তোলা। এই ছবিগুলি মাহিদের সেল্ফি। এই ছবিগুলি মাহিদের ক্লিক ক্লিক। ছবিগুলি মাহিদের বাসায় তোলা। ম্যাসেঞ্জারে মাহিদ নিজেই আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

সেদিন মাহিদের বাসায় খাওয়া দাওয়ার আয়োজন ছিল। মাহিদ,আমি,আমার স্বামী মানে মাহিদের ছোট চাচা এটি এম এ হাসান জেবুল এবং ঢাকা থেকে আগত ব্যাংকার দুলাভাই মানে মাহিদের ফুফা মওদুদ নেওয়াজ চোধুরী, মাহিদের মা অ্যাডভোকেট আমিনা সালাম। সবাই মিলে এক সাথে খাওয়া-দাওয়া গল্প করেছিলাম। পারিবারিক নানা আলাপ আলোচনা শেষে ছবি তুলেছিলাম।মাহিদ নিজেই বলেছিল, চাচী আসুন সবাই মিলে এই মুহুর্তের একটা স্মৃতি রাখি। আমার মোবাইল দিতে চাইলে সে বললো, না চাচী, আমারটাতেই তুলি। আমার কাছে আপনাদের স্মৃতিটুকু থাক। মাহিদ কি জানতো আমাদের স্মৃতি নয়, সে নিজেই এখন আমাদের কাছে স্মৃতি?

সেদিন মাহিদের বাসা থেকে বিদায়ের সময় আমি আর মাহিদ কথা বলছিলাম। আমার স্বামী বার বার আমাকে তাড়া দিচ্ছিলেন। মাহিদ আরো কিছু কথা বলতে চেয়েছিল। এখন মাহিদের বাসায় গেলে আলাদা ভাবে কেউ ডেকে বলবেনা, চাচী এদিকে আসুন কিছু কথা আছে। মাহিদ চাচার সামনে বলতে পারেনি যা, তা ছিল তার ব্যক্তিগত কথা। আমার সামনে যতবার মাহিদ পড়তো, ততবার তার চোখে কিছু অজানা চাহনি দেখতাম। মাহিদ ভাবতো চাচী যদি চাচার সাথে আলাপ করে? মাহিদের এই ভয় আমি দূর করেছিলাম।

তাই তো মাহিদ আমাকে বিশ্বাস করিতো, ভালোবাসতো। আমি ও মাহিদের সহজ সরল কোমল ব্যবহারে মুগ্ধ ছিলাম।

গতরাতে আমি মাহিদকে স্বপ্নে দেখেছি। স্বপ্নে আমি আর মাহিদ অনেক দীর্ঘ আলাপ করেছি।
মাহিদ কি আরো কিছু কথা বলতে চেয়েছিল?

মাহিদ তুমি ফিরে এসো! তোমার চাচা আর তাড়া দিবেনা, আমাদের ড্রয়িংরুমে বসে থাকলে তোমার চাচা আর বলবেনা বাসায় যাও অনেক রাত হয়েছে। মাহিদ তোমাকে কেন আমরা আরো সময় দেইনি। কেন দেইনি?

মাহিদ তোমার চাচা, (সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক,আব্দুল গফুর স্কুল এন্ড কলেজের সভাপতি )। এখন তোমার জন্য খুব আক্ষেপ করেন। 'কত ছেলেদের বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেছি। আমার নিজের ভাতিজাটাকে বাঁচাতে পারলাম না'
বলে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন।

মাহিদ তোমার চাচা তোমার কাছে লজ্জিত, তুমি কেন বললেনা চাচা আমাকে বাস স্টেশনে উঠিয়ে দাও! আমাকেও তো বলতে পারতে, আমি না হয় পাঠিয়ে দিতাম। তখন তো তোমার চাচা গাড়ি নিয়ে মাত্র বাসায় এসেছেন। রাত মাত্র এগারোটা কিংবা সাড়ে এগারো হবে।

তোমার চাচার গাড়িতে রাত বিরাত কত রোগী হাসপাতালে যায়, আর তুমি রক্তমাখা শরীরে রাস্তায় পড়েছিলে, কারো অপেক্ষায় থেকেছিল, একটু সাহায্যের? একটা গাড়ির জন্য প্রার্থনা করেছিলে বুঝি? তুমি ফোন দাওনি, তোমার খবর পুলিশ তোমার চাচাকে রাত প্রায় দুটোয় দিয়েছিল। আমার সাথেই ফোনালাপে ছিলেন, তোমার খবর শুনে কতটা তাড়াহুড়ায় ছুটেছিলেন হাসপাতাল, এত শক্ত মানুষটি সেদিন পাগলের মতো ছুটাছুটি করেছেন তোমাকে বাচাঁতে। তুমি অভিমানে আগেই চলে গেলে?

মাহিদ, তোমার চাচা তোমার ন্যায় বিচারের জন্য নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তোমাকে ন্যায় বিচার দিয়ে তোমার আত্মার শান্তি এনে দিবেন ইনশাআল্লাহ!

মাহিদ তোমার মোবাইল ছিনতাইকারীরা কেড়ে নেওয়ার পর, তুমি তোমার চাচাকে ফোন করতে চেয়েছিলে? রিকসার ড্রাইভারের কাছে কি তুমি এক মিনিটের জন্য মোবাইল ভিক্ষা চেয়েছিলে? না কি মোবাইল নাম্বার মুখস্থ ছিলনা? মাহিদ তুমি আর অসুস্থ মা ছাড়া কেউ তোমার বর্তমান পরিবারে নেই। মাহিদ তুমি হয়তো অসুস্থ মাকে জানাতে চাওনি?

মাহিদ তুমি জানো না, তোমার জন্য পরিবার আত্মীয় স্বজন ছাড়াও তোমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বন্ধু বান্ধব,কত শুভাকাঙ্ক্ষীরা কষ্ট পাচ্ছেন।

তোমার জন্য বন্ধুরা মোমবাতি হাতে সেই ভয়ংকর স্থানে সবাই দাঁড়িয়েছে। হাজার হাজার শুভাকাঙ্ক্ষীরা মানব বন্ধন, প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

মাহিদ তোমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসে। সবাই তোমার জন্য ন্যায় বিচার চায়। মাহিদ তোমার বিচার হবে ইনশাআল্লাহ!

মাহিদের জন্য যারা এগিয়ে এসেছেন সকলের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।

মাহিদ একবার ছবির মতো আমাদের কাছে ফিরে এসো!


লেখকদ্বয়: মাহিদের চাচা-চাচী
৫ এপ্রিল ২০১৮

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৬এপ্রিল২০১৮/ফেবু/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন