আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

মেডিক্যাল কলেজ এবং মান সম্পন্ন ডাক্তার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-০৭ ০১:৪২:৩৮

দিপু কোরেশী :: শাক দিয়ে কই মাছ ঢাকার প্রবনতা অর্থহীন। ঘোষক আর পাঠক নিয়ে জাতি হিসেবে আমরা তো এমনিতেই বিভক্ত, যদিও তা অনভিপ্রেত! কারন ইতিহাসের মাঝেই তো এর সমাধান রয়েছে।

মৌলভীবাজারে একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, এটা সকল মৌলভীবাজার বাসির মতো নিসন্দেহে, দ্বিধাহীন ভাবে আমারও প্রানের চাওয়া। এটা বাস্তবায়ন হলে আমার শহরের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক ভালো প্রভাব ফেলবে। যারা যারা এই দাবিকে তাড়াতাড়ি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন ভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের জানাই সাধুবাদ। তবে এটা কার দাবি ছিল এই নিয়ে কাড়াকাড়ি যেভাবে অসুন্দর ঠিক তেমনি অন্য কারো মহৎ উদ্যোগ, ভালো চিন্তা ভাবনাকে নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে ইতিহাসের পাতাতে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার যে অপচেষ্টা সেটাও নিন্দনীয়! এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৪/০৫ সালে মৌউপইউকে এর ব্যানারে মঈজ ভাই, জুয়েল মতিন ভাইদের উদ্যোগে আমরা তখন লন্ডনের কেমডেনের সুরমা সেন্টার , ভারত রেস্টুরেন্ট সহ অন্যান্য জায়গায় সভা করেছিলাম। অনেক সাপ্তাহিক পত্রিকায় সে খবরও ছাপা হয়েছিল। যদিও তখন এখনকার মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। সে সময়ে আমাদের জেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিল। ২৫০ শয্যার হাসপাতাল, সরকারি মেডিক্যাল কলেজের দাবি ছিল আলোচনার অন্তর্ভূক্ত। গত ডিসেম্বরের পাঁচ তারিখ  ওয়েলস্- এ মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে আমার ভাই নিপু কোরেশী সবার পক্ষ থেকে এই দাবি উত্থাপন করেছিলেন। এর কয়েক সপ্তাহ পরে একটি ওয়াটস্আপ গ্রুপ তৈরি করে এই দাবির প্রচারনা আরো জোরালো হতে থাকে।

সুরমা সেন্টারের উনিশ মার্চের সমাবেশের দাওয়াত পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। সেই সমাবেশে প্রচুর মানুষের সমাগম ঘটেছিল। মতের মিল অমিল হতে পারে, বিভক্তি হতে পারে যদিও এটা কাম্য নয়। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হয় তখন, যখন বিভক্তি হয় শুধু মাত্র নিজস্ব স্বার্থকে ঘিরে। কেউ সৃষ্টি করে আর কেউ দখল করে। কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টিকারী আর দখলকারী হিসেবেই সাক্ষী দিবে। আসছে দশ এপ্রিলের গোল টেবিল বৈঠকও স্বার্থক এবং সফল হবে এই কামনা করি। এই গোল টেবিল বৈঠকে আমাদের সবার দাবি তাড়াতাড়ি বাস্তবায়ন করতে সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কিভাবে কাটিয়ে উঠা যায় এবং পরবর্তীতে কিভাবে সবার মধ্যে ঐক্য তৈরি করা যায় এবং একই প্লাটফর্মে সবাইকে কিভাবে নিয়ে আসা যায় আশাকরি এইসব ব্যাপারে দৃষ্টিপাত করা হবে।

এখন একটু অন্য বিষয়ে একটু লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে যদিও অপ্রাসংগিক নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা সদরে একটি করে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ আর প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। এবং এর কাজকর্ম  ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ এখন আর দাবি নয় শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা মাত্র।

বাংলাদেশে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ আছে মোট চৌত্রিশটি। নতুন ঘোষিত ছয়টি সহ। সরকারি, বেসরকারি আর সেনাবাহিনী পরিচালিত মোট মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা একশ'র মতো। নব্বই সাল পর্যন্ত সব মেডিক্যাল কলেজ সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং এগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল সরকার নিজেই। তারপর থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা হতে থাকে। স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সিলেট, রংপুর, বরিশাল, স্যার সলিমুল্লাহ এই মোট আটটি মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে আমাদের দেশের প্রতি বর্গমাইলে একজন করে ডাক্তার রয়েছেন। আর বছরে সরকারি, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রায় চার সহস্রাধিক ডাক্তার পাস করে বের হচ্ছেন। তারপরও চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশের রোগিদের অন্য দেশে যেতে হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে মেডিক্যাল কলেজ হলো সরকারি বারোটি আর বেসরকারী মাত্র একটি। এদিকে ভারতের উত্তর প্রদেশ আয়তন আর জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ থেকে অনেক উপরে। কিন্তু তাদের মেডিক্যাল কলেজ মোট চৌদ্দটি। সরকারি নয়টি, বেসরকারি পাঁচটি। ভারতের এই দুই রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার মান আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। তাইতো আমাদের রোগিদের অনেক ক্ষেত্রে তাদের ডাক্তারের পরামর্শ এবং সেবা নিতে হয়। আমাদের আগের ডাক্তারেরা ডাক্তারিকে পেশার চেয়ে সেবা হিসেবেই বেশি প্রাধান্য দিতেন। অভিযোগ আছে এখন বেশিরভাগ ডাক্তার টাকা রোজগার নিয়ে বেশি মনোযোগী থাকেন। যেমন অতিরিক্ত ঔষধের নাম লিখে দেয়া, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা দেয়া, বাচ্চা জন্মের সময় অযথা সিজারিয়ান করানো ইত্যাদি। মৌলভীবাজারে ডাক্তার মরহুম হক সাহেব, মরহুম ওয়াহিদ সাহেব, শ্রী সত্য বাবু, শ্রী গোপেশ বাবু সহ আরো অনেক ভালো ভালো নামকরা  ডাক্তার আমরা পেয়েছি। তাদের মতো ডাক্তারের আজ বড়ই অভাব। এরপরও ভালো এবং সৎ ডাক্তার যে নেই তা নয়।

প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে যে উন্নত সেবা দেয়ার মন মানসিকতা নিয়ে মান সম্পন্ন ডাক্তার সৃষ্টি হচ্ছে কিনা। আর বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের চিকিৎসকদের চাহিদা বাড়াতে হলে মান সম্পন্ন ডাক্তার তৈরির কোন বিকল্প নেই। আমরা সেই স্বপ্ন দেখি যে, আমাদের দেশ থেকে অন্য দেশে চিকিৎসার জন্য যেতে হচ্ছে না বরং আমাদের দেশে মানুষ আসছে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে।

তাই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, দক্ষ ও সৎ জনবল, উন্নত মানের আধুনিক শিক্ষা উপকরণ দিয়ে প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হোক যেখান থেকে ডাক্তার বেরিয়ে আসবেন আতঙ্ক নয়। আর আমাদের ডাক্তারেরা তাদের উপর সাধারণ মানুষের যে বিরূপ মনোভাব তা দূর করবেন। সাধারণ মানুষ আমাদের দেশের ডাক্তারদের উপর করবেন বিশ্বাস, রাখবেন আস্থা।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন