আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হুজুগে ফেসবুক গুজবে ফেসবুক

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-২৩ ০০:৫৫:১৭

ইকবাল খন্দকার :: বাজারে একটা ‘জব’ এর বাজারই এখন রমরমা, সেটা হচ্ছে ‘গুজব’। আর এর পেছনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে ফেসবুক। ফেসবুক না থাকলে মানুষ এত নিখুঁতভাবে গুজবটা কোথায় ছড়াত বল!

আমার এক বন্ধু বলল, জীবনে কত আজব জিনিস দেখলাম। দেখতে দেখতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাই এখন আর অবাক হই না। তবে ফেসবুকে আজকাল যা দেখছি, তাতে এতই অবাক হচ্ছি যে, মাঝেমধ্যে মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হতে চায় না। মনে হয় আমি চিরতরে বোবা হয়ে গেলাম বুঝি। আমি বললাম, ফেসবুকে এমন কী দেখছিস, যার কারণে তোর এ অবস্থা? বন্ধু বলল, তুই জানিস, আমিও জানি, দুনিয়ার সবাই জানে, মানুষ মরণশীল। আর এটাও জানে, মৃত মানুষ কথা বলতে পারে না, লিখতেও পারে না। কিন্তু ফেসবুক এমনই এক আজব জিনিস যে, এ জিনিস অলরেডি প্রমাণ করে ছেড়েছে মৃত মানুষ কথা বলতে পারুক বা না পারুক, স্ট্যাটাস দিতে পারে। মানে লিখতে পারে। কদিন আগে আমার এক ছোটভাইয়ের ব্যাপারে ফেসবুকে গুজব উঠেছিল তো, সে নাকি মারা গেছে। এর একটু পরে সে নিজেই স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছে, সে নাকি পিকনিকে যাচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে। এই যে মৃত মানুষের স্ট্যাটাস দেওয়া, পিকনিকে যাওয়া— এগুলো কিন্তু সাংঘাতিক বিস্ময়ের ব্যাপার। ঠিক কিনা? আমি হ্যাঁ-না কিছুই বললাম না। কারণ, আমার মাথায় তখন ঘুরছে ফেসবুক গুজব-সংক্রান্ত আরও কিছু ঘটনা। একটা ঘটনা আমার এলাকার এক ছোটভাইয়ের। ছোটভাই কনে দেখতে গেছে। তো মেয়ে পছন্দ হলো। এরপর যখন বিয়ের তারিখ পাকা হলো তখনই জানা গেল সে নাকি আগে আরেকটা বিয়ে করেছিল এবং দুটো বাচ্চা আছে। মুরব্বিরা প্রথম বিষয়টা বিশ্বাস না করলেও যখন তারা ছবি হাতে পেল, তখন বিশ্বাস না করে পারল না। শুধু মুরব্বিরা না, এলাকার সবাই দেখল ছবিতে আমার ছোটভাই দাঁড়িয়ে আছে খাম্বার মতো সোজা হয়ে। পাশে তার বউ এবং ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে। বিয়ে তো ভাঙলই, পাশাপাশি গণধোলাইয়ের মুখোমুখি হতে হলো ছোটভাইকে। কিন্তু এর মাসখানেক পরেই বের হলো আসল ঘটনা। ঘটনাটা মূলত গুজব। ফেসবুক গুজব। আর গুজবটা ছড়িয়েছে ছোটভাইয়ের হবু বউয়ের সাবেক প্রেমিক। গুজবটাকে পাকাপোক্ত করতে সে আশ্রয় নিয়েছে ফটোশপের। অর্থাৎ বউ বাচ্চাওয়ালা ছবিটা ছিল এডিটিং করা। আমার এক বড়ভাই বললেন, লাইফটা নিয়ে বড়ই হতাশ হয়ে পড়েছিরে ছোটভাই। কত চাকরি ধরলাম, কিন্তু একটাও স্থায়ী হয় না। কারণ, চাকরির বাজার এখন খুবই খারাপ। এ খারাপ চাকরি তথা ‘জব’ এর বাজারে একটা ‘জব’ এর বাজারই এখন রমরমা, সেটা হচ্ছে ‘গুজব’। আর এর পেছনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে ফেসবুক। ফেসবুক না থাকলে মানুষ এত নিখুঁতভাবে গুজবটা কোথায় ছড়াত বল! কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধু বলল, অনেকদিন ধরে খুব খরায় ভুগছিরে দোস্ত। কোনো স্ট্যাটাস দিতে পারছি না। লিখতে বসলে লেখা আসছে না। এভাবে চলতে থাকলে তো ফেসবুকে আমার ফলোয়ার কমে যাবে। মানুষ ধরে নেবে আমি বুঝি ফুরিয়ে গেছি। আমার মেধার স্টক বুঝি শেষ। কী করা যায়? কী করলে আবার আমার স্ট্যাটাসে হাজার হাজার লাইক পড়বে? এবার পাশ থেকে আমার আরেক বন্ধু বলে উঠল, তুই যদি কষ্ট করে বিশেষ করে ঝুঁকি নিয়ে একটা কাজ করতে পারিস, তাহলে তোর পোস্টে হাজার হাজার লাইক তো পড়বেই, হাজার হাজার শেয়ারও হয়ে যেতে পারে। বন্ধু বলল, কাজটা কী? পাশের সেই বন্ধু কানের কাছে মুখ এনে বলল, ফেসবুকে এ গুজব ছড়িয়ে দে, অমুক তারকা তমুক তারকার হাত ধরে পালিয়ে গেছে। অতদিন ধরে নিখোঁজ। ব্যস, তোর খতম। - বাংলাদেশ প্রতিদিন।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন