আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ইং

হঠাৎ কোথায় না বলে হারিয়ে গেলো ‌'মা'

:: সৈয়দ হক ::

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-২৩ ২১:৩১:২৭

মা কে নিয়ে আমি কখনো লিখিনি। গত তিনদিন আগে দীর্ঘ রোগভোগের পর হঠাৎ করেই আমার মা মারা যান ।

এইতো সেদিন দেশ থেকে ফিরলাম । মায়ের হাতে পায়ে শক্তি নেই, চলাফেরা করতে পারেন না । তবুও মা অপেক্ষা করছেন । বিছানায় শুয়ে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ মা শুনতে পারেন । সেদিনও দুপুরের খাবারের সময় ছেলের জন্য অপেক্ষা করেছেন, খাওয়া হলো না ।

আমার মা ছেলেবেলায় তার মা হারিয়েছেন । ছোট ভাইদের কোলে পিঠে নিয়ে তার এক জগত । মা দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন। তার বাড়ির লোকেরা বলেন যৌবনে বয়সে মা রাজকণ্যার মতন ছিলেন । আমার বাবা সম্পর্কে তার আপন ফুপাতো ভাই । গ্রামে যখন তিনি আমাদের বাড়িতে বৌ হয়ে আসেন, তখন বাবার বিশাল সংসার । যৌথ পরিবারের বড় বউ । সবকিছু সামলে নিয়েছেন । আমার চাচাদের বিয়ে, ফুফুদের বিয়ে সব কিছু তিনি একা সামলেছেন । পরিবারের বড় বউ, বড় বোন এটা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ধারন করেছেন । তিনি ছিলেন সবার প্রিয় বুয়াই, খালাম্মা ।

শহরে আমাদের বিশাল বাসাটা ছিলো গ্রামের মানুষের আশ্রয়স্থল । মায়ের মুখে সবসময় হাসি, তাঁকে কখনো কাঁদতে দেখিনি। শত প্রতিকূলতার মাঝে মা আমাদের একা মানুষ করেছেন । বাবা সকালে কাজে বের হতেন আর রাতে ফিরতেন।

এখনো আমি মায়ের হাতের স্পর্শ অনুভব করি । এখনো মুখে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ লেগে আছে । রমজান মাসে মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের স্বাদের জন্য অপেক্ষা করি পুরো এক বছর । আহা মায়ের হাতের রান্না !

আমি ছাত্র রাজনীতি করতাম । রাতে দশটার মধ্যে বাড়ি ফেরার অনুশাসন ছিল বাবার। মা একটা চাদর গায়ে দিয়ে কলাপসেবল দরজা খুলে দিতেন । বলতেন পড়ার রুমে খাবার আছে, আস্তে করে দরজা খুলে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো । এগুলো এখন রূপকথা ।

আস্তে আস্তে মা-বাবার বয়স বাড়তে থাকে । মায়ের শরীরে রোগ বালাই লেগে থাকে । বাবা মায়ের প্রেসক্রিপশনের একটা ফাইল নিয়ে ঘুরেন। আমরা দেখি, কিছুই করতে পারিনা । আমাদের সব ভাই বোনরা দেশ ছাড়ি । আগে আমি ফোন করে মায়ের সাথে কথা বলতাম। কখনো দু-তিনদিন দেরি হলে মা নিজেই ফোন করতেন । ক্রমশ গলার স্বর ক্ষীণ হতে থাকে তাঁর । মা আর ফোন ধরতে পারেন না ।

হিন্দি মুভি ভূতনাথ ছবির কথা মনে আছে । কেলাস নাথ চরিত্রের অমিতাভ অামেরিকায় ব্যস্ত চাকরিয়ান ছেলের কাছে ফোন করেন । বলছেন তোঁর মা ফোন নিয়ে বসে আছে সেই সকাল থেকে । ছেলে বলছে, বাবা আমি এখন মিটিং এ । তোমার চেক পাঠানো হয়েছে পেয়ে যাবে। ছেলে আর ফোন করে না । অমিতাভ বলেন, নির্মলা তোমার ছেলে মনে হয় কাজের চাপে ভুলে গেছে । মা অপেক্ষা করেন ।

আমার মায়ের শেষ সময়টা সুখের ছিলো না । এই জীবনে তিনি বেঈমানির শিকার হয়েছেন অনেকের কাছে । শেষ জামানায় ছায়ার সাথে । গত মাসে আমি তাঁর এক ভিডিও ইন্টার্ভিউ নেই । ফেসবুকের বাটন টিপি । পরবর্তীতে আর নিউজ হতে চাইনি । মায়ের মৃত্যুতে প্রথমে আমি কাঁদিনি  কিন্তু এখন আমি অনুভব করি আমার মা নেই । মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে কাঁদি । ভোরবেলা আকাশে খুঁজি সেই প্রিয় মুখ । ভোরের তারা, রাতের তারাকে বলি, মাকে বলিস, অনেক কেঁদেছি আর কাঁদতে চাই না ।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন