আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

রোযা কোনো উৎসব নয়, আত্মশুদ্ধির মাস

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-১৯ ১৮:২০:৫১

আল-আমিন :: পবিত্র কোরআন শরীফ রোযার মাসের রাতে অবতীর্ণ শুরু হয়। এ জন্যই এ মাসের এত মর্যাদা। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা তাঁর অগণিত রহমত, বরকত ও মাগফিরাত দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।

এই রোযার আগমনকে নিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। এই প্রিয় মাস থেকে কীভাবে ফায়দা হাসিল করা যায় এবং কীভাবে ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর অতি প্রিয় বান্দায় পরিণত হওয়া যায়। মুসলিম সমাজ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে রমজানকে স্বাগত জানায়। আত্মশুদ্ধি ও নৈতিকতা পরিশুদ্ধির মাস রোযা। রোযা মানুষের কু-প্রভৃত্তিকে পুড়িয়ে দেয়, উদয় করে শুভ বুদ্ধির। রোযা মানুষকে পাপাচার ও অনাচার থেকে বিরত রাখে। রোযা সকল অপকর্ম থেকে রক্ষা করে এবং সকল সৎ কর্মের উৎস আত্মাকে শক্তিশালী করে। উন্নত চরিত্রের পূর্ণতা রোযার মধ্যে নিহিত। মানুষের নৈতিকসত্তা এবং জৈবিক সত্তা রোযার মাধ্যমেই মানুষের অন্তরে সৃষ্টি হয়।

জৈবিক সত্তার উপর নৈতিক সত্তা বিজয়ী হলে মানুষ হয় চরিত্রবান,ফলে পাপাচার তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।প্রকৃত মানুষ সৃষ্টির জন্য যে সততা ও নৈতিকতা প্রয়োজন রোযা তা শিক্ষা দেয়। মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে সৎচরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্যই রোযা আমাদের মাঝে বছর ঘুরে আসে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআন শরীফে বলেছেন “হে ঈমানদার লোকেরা, তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি করে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, আশা করা যায়- তোমরা সতর্কতা অবলম্বনকারী হবে”।

আত্মশুদ্ধির প্রচেষ্ঠায় মানুষের মধ্যে নৈতিক সত্তা প্রভাবশালী হয়। নৈতিক গুনাবলী বিকাশ লাভ করে। সৎ ও মানবিক আচরণ মানুষের স্বভাবগত বিষয়ে পরিণত হয়।

রমযনের রাত্রে তারাবীহ এর নামায ও সেহেরী খাওয়ার মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহণ হয় নিয়ন্ত্রিত। এভাবে দেহের চাহিদাকে নিয়ন্ত্রিত রাখার মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবে নৈতিক সত্তা শক্তিশালী হবার সুযোগ পায়। নৈতিক চরিত্র গঠন সহজ হয়ে যায়। রোযা আত্মরক্ষার হাতিয়ার হয়ে উত্তম চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার একটি ঢাল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন- “রোযা ঢাল স্বরূপ”।রোযার সঠিক শিক্ষা খুলে দেয় মানুষের উত্তম বৈশিষ্ট্য অর্জনের পথ।

নৈতিক চরিত্র গঠনে আমাদের সমাজে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করা হচ্ছে না। রোযার মাস আসার আগেই দেখা যায়

আধুনিক সমাজের আরেকটা অবস্থা। রমাযান মাসকে উপলক্ষ করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী মহল, সিন্ডিকেট পন্য দ্রবাদী মজুদ রেখে রমযানে তা জনসাধারনের মাঝে চড়া মূল্যে বিক্রি করে, ফলশ্রুতিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিও শ্রেনীর ভোক্তারা চরম ভোগান্তীর শিকার হয়।যা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে কোনভাবেই যায়েয নেই। এবং আর্থ- সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকেও এ বিষয়গুলোর কদর্যতা পরিস্ফুট। অথচ,ত্যাগ -সংযম ও সাধনার মহিমায় এ মাস মহিমান্বিত।সব দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, চোরাকারবারী, মজুতদার ও ফটকাবাজ ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ঊর্ধ্বগতিতে বেড়ে চলে সব পন্যের মূল্য। আল্লাহর প্রদত্ত দেওয়া শাক সব্জির দাম হয়ে যায় অন্য সময় থেকে দ্বিগুন।লাল নীল এবং হরেক রকমের বাতি জ্বালিয়ে রোযাদারদেরকে আকর্ষন করার জন্য রাস্তার পাশে বসে ইফতারের দোকানের প্রসরা। রোজা তো বলে মানুষের প্রতি ইহসান করার জন্য। এসব বিষয় ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে গভীরভাবে ভাবতে হবে এবং সমাজের অন্যায়, অসত্য, জুলুমবাজি ইত্যাদির মূলে কঠোর আঘাত হানতে হবে।

আত্ম-পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চারিত্রিক গুণাবলী সৃষ্টিও মহান স্রষ্টার কাঙ্ক্ষিত জীবনধারা অনুসরণ করাই রোযার মূল লক্ষ্য। পার্থিব জীবনের লাখো চাহিদা, বিভিন্ন লোভ-লালসা, ভয়ভীতি সব কিছুর মধ্য থেকে এ কাজে মনোযোগী হওয়া সহজ কাজ নয়। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষার জন্য। আর পরীক্ষা মাত্রই কিছু কষ্টসাধ্য ও কঠিন কাজ। আল্লাহতায়ালা তাঁর সেরা সৃষ্টিকেও পরীক্ষার মাধ্যমে যার যা প্রাপ্য, সেভাবে রোজ হাশরের দিনে পুরস্কৃত করবেন।

এ পুরো জীবনের যত দিক আছে, সব কিছুর সমন্বয়ে গঠিত ইহজীবনকে সুন্দর ও আল্লাহর কাঙ্ক্ষিত মানদণ্ডে উন্নীত করতে হলে মাহে রমজানের সিয়াম সাধনার একটা মাধ্যম।মানুষের প্রতি ফরজকৃত এ রোজার উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া ও সংযমী জীবনের অধিকারী হওয়া।

রোযার মাসে সিয়াম ও ইবাদতে যা যা পালনীয় সেগুলো পালনে পূর্ণ মনোযোগী হ ওয়া। কোনো রোজাদার হয়তো আগে অবৈধ রোজগার করত, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতারণা করত, পণ্যে ভেজাল দিত, মদ খেত, ঘুষ গ্রহণ করত, অন্যায়ভাবে অন্যের হক নষ্ট করত, অন্যের সম্পদ জবর-দখল করে নিত, অন্যের কুৎসা রটনা ছিল তার নিত্যদিনের অভ্যাস তা থেকে সংযম হতে মূলত রোযার আগমন হয়েছে।রোযার মাস নিজেদেরকে বদলানো ও আত্মশুদ্ধির সুযোগের মাস। মানুষের নৈতিক উন্নয়ন ও দৈহিক শৃঙ্খলা বিধান, পারস্পরিক সম্প্রীতি-সহানুভূতি এবং সামাজিক সাম্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রেও রোজার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চারিত্রিক উন্নতির ক্ষেত্রে যে সমস্ত খারাপ অভ্যেস চাইলেও ছাড়তে পারেনা এবং পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে যেগুলো অনুচিত অসামাজিক, সে সমস্ত অপছন্দনীয় ও নিন্দিত কাজ সমূহ ও ধারাবাহিক মেহনত রমযান মাসের আমলে ডুবে থাকা ও আল্লাহর রহমতে সহজেই বর্জন করা যায়।

লেখক: কথা সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন