সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-০১ ১৪:০৯:৫৪
বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: পৃথিবীতে সবচেয়ে সহজে নির্যাতন করা যায় যে জাতিকে সে জাতি সম্ভবত বাঙ্গালী জাতি। বিভিন্ন সময়ে এ জাতির উত্থানকে খুব সুকৌশলে থামিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন, বাংলাকে ভাগ অথবা বাঙ্গালী কোন নেতার রাজনৈতিক উত্থানকে থমকে দেয়া, বাধাগ্রস্থ করা। প্রত্যেকটি জাতির একটি নিজস্ব সংস্কৃতি থাকে। কিন্তু তার ভৌগলিক অবস্থান অথবা জাতীয়তা বিভিন্ন রকমের থাকতে পারে।
যেমন বাংলাদেশের বাঙ্গালী, ভারতের বাঙ্গালী, ব্রিটিশ বাঙ্গালী, অামেরিকান বাঙ্গালী এরকম অারো বহু উদাহরন দেয়া যাবে। অামি যদি ভারতের দিকে তাকাই,তাহলে দেখতে পাই পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘতম সময়ের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বসতে না দেয়া অথবা প্রনব বাবুকে প্রধানমন্ত্রী না করা। যদি অারও অাগের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হবার পরেও বেশিদিন সে পদে থাকতে পারেননি। এসবের পেছনে কারন খুজতে গেলে অামি বিশ্বাস করি, কেউ দ্বিমত পোষন করবেন না যে, বাঙ্গালী হবার কারনেই তাদের এ ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হত। ইদানিংকালে অাবার,অাসামে বাঙ্গালীদের উপর একটি নীলনকশার মাধ্যমে অত্যাচারের কারনে জাতির অগ্রগতিকে থামিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাশীন বিজেপি।
যদিও তাদের সামনে থেকে অভিযোগ করার মত সুযোগ খুব কম থাকে। ভারতের শাষন ক্ষমতায় যেন বাঙ্গালীর অাধিপত্য না থাকে, তাই ইদানিংকালে ভারতের অাসাম রাজ্যে ন্যাশন্যাল রেজিষ্টার সিটিজেনস (এন অার সি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাঙ্গালী বিতাড়নের এক কুটকৌশল তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
অর্থাৎ, অাসাম থেকে পঞ্চাশ লক্ষাধিক মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অান্দোলনের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস এবং অাইনী বিষয়ে কলকাতা হাই কোর্টের এডভোকেট দেবাষীষ সাহা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিশাল জনগোষ্টিকে তাদের পুর্ব পুরুষের ভিটা ছেড়ে যেমন উৎখাতের চক্রান্ত চলছে। অন্যদিকে সত্যি সত্যি যদি রোহিঙ্গাদের মত হলেও বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেয়া হয় ,তবে পরিস্থিতিটা কী দাড়াবে ভাবুন তো? বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবেই ভাবুন।
অাবার মাঝেমধ্যে এ নীতির বিরুদ্ধে ফুসেঁ উঠা বাঙ্গালীকে বিভক্ত করার জন্য হিন্দু-মুসলিম দুটি 'নাম'ও ব্যাবহার করা হচ্ছে। রবীন্দ্র নজরুল সুকান্ত জসীম এদের যেমন হিন্দু মুসলমান দিয়ে ভাগ করা ঠিক হবে না, তেমনি ভাবে বাংলা ভাষাভাষি মানুষকে হিন্দু মুসলমান নাম দিয়ে অত্যাচারীদের সুযোগ করে দেওয়ার নামান্তর। এটা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি বয়ে অানবে বৈকি অার কিছু নয়।
ধর্ম যার যার রাষ্টতো সবার। অামি চাইনা অামাদের মানবতাবোধের সুযোগে রোহিঙ্গাদের মতো ভারত থেকে বিতাড়িত বাঙ্গালীদের জন্য অারেকটা ক্যাম্প তৈরীর অাবহ সৃষ্টি হোক। হয়ত অনেকের বিরক্তিভাব অাসতে পারে অামার এ লেখা পড়ে। যে ভারতের বিষয় নিয়ে অামার কেন এত মাথাব্যাথা। তাদের কাছে অামি ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলব,অামি বাঙ্গালী অামি বাংলাদেশী। তাই পৃথিবীর যেকোন স্থানের বাঙ্গালীর জন্য অামার সহমর্মিতা এবং প্রতিবাদ থাকবে চিরকাল। অার এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অামার অনুরোধ, তারা যেন অাসাম সরকারের এ অনৈতিক অমানবিক কর্মকান্ড বন্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিশ্ব নেতৃত্বের মাধ্যমে কুটনৈতিক ভাবে জোরালো প্রতিবাদ করে। একই সাথে পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপধ্যায়ের কাছে একজন মানুস হিসেবে,একজন বাঙ্গালী হিসেবে বিশেষ অনুরোধ তিনিও যেন, অাসামে বাঙ্গালী নির্যাতন বন্ধে দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ নেন। কারন ভারতে অাজ যেকজন বাঙ্গালী ভুমিকা রাখতে পারেন, কোন পরিবর্তনে;তার মধ্যে মমতার নামই থাকবে সর্বাগ্রে। না হলে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিজেপী অত্যান্ত সুকৌশলে পশ্চিমবঙ্গেও অাসামের মতো এন অার সি তৈরীর মাধ্যমে এক অস্বস্তিকর ব্যাবস্থা তৈরী করবে। এবং রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে।
বাঙ্গালী বলে, অাবার কখনো হিন্দু বা মুসলিম বলে। তাই শুধু মমতা বা বাংলাদেশ নয়,পৃথিবীতে অবস্থানরত সকল বাঙ্গালীর প্রতি অামার হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা সহ অনুরোধ, শুধু বসে থাকা নয়, বাঙ্গালীর অস্তিত্ব রক্ষার্থে অাসামের অান্দোলনরত বাঙ্গালীদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করা। একই সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদ দরকার।
বাঙ্গালী মাথানত করে না। বাঙ্গালী মচকাবে না। বাঙ্গালী ফাসিঁর মঞ্চে গিয়েও বলবে,অামি বাঙ্গালী। তাই এ পরাক্রমশালী জাতির বিজয় কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।
লেখক- যুক্তরাজ্যে কর্মরত অাইনজীবি, সমাজকর্মী।