আজ মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আমার তারকা আমার বিশ্বকাপ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৭ ১৬:২৪:৫৬

খালেদ মাসুদ :: ১৯৮৬ সালে যখন ম্যারাডোনা ইশ্বরের হাত দিয়ে গোল করে আর্জন্টিনাকে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন  করায় তার কয়ক মাস পরই আমার জন্ম।আমার জন্ম সাল হতে ম্যারাডোনা নামটা বেশ জড়িয়ে। আমি ঐ সময় কি হচ্ছে না হচ্ছে তা সামান্যও জানি না।

১৯৯০ সালে আমার ঐ একই অবস্থা কারণ চার বছরের বাচ্চা কি আর ফুটবল বোঝে তবে ম্যারাডোনা ম্যারাডোনা নাকি করতাম।ঐ বছর পশ্চিম জার্মানী, আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন  হয়।
১৯৯৪ আমি তখন ক্লাস টু তে পরি বয়স সাত কি আট বিশ্বাকাপের উত্তাপ যখন সারা বিশ্বময় আমি তার উন্মাদনায় সামিল কারণ তখন হয়ত খেলা দেখার মত বয়স হয়েছিল।খেলা দেখা কি তা অনুভূত হতে থাকে ঐ সময় হতেই বাড়িতে টিভি ছিল না গ্রামে টিভি বলতে ২-৩ টি  তবে মামার বাড়ি একই গ্রামে হওয়ায় এবং বড় মামার সাদাকালো ন্যাশনাল টিভি থাকায় প্রিয় বিটিভির মাধ্যমে বিশ্বকাপ উপভোগ করতেন গ্রামের অনেকে। আমাদের গ্রামে তখনো বিদ্যুৎ তখন ছিল না।আমি কী আর বাদ পরি? আমার ক্লাস রোল যেহেতু ১ তাই বাড়তি যত্ন ছিল আমার পড়ার প্রতি। কিন্তু ঐ বছর যখন বুজলাম বিশ্বকাপ কি তাই খেলা দেখতে হবে যে করে হোক। ছোট খালার কাছে আমি পড়তে যেতাম বিকেল বেলা কিন্তু সমস্যা হল খেলা তো হয় রাতে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগতিক হওয়ায় ওখানে দিন তো আমাদের রাত। কোন দেশ খেলে সেটা না বুজলেও ম্যারাডোনা খেলে এটা বুজতাম।তাই খেলা দেখা বলতে ম্যারাডোনা দেখা। মায়ের কাছে বায়না ধরতাম রাতে খালার কাছে পড়তে যাব মা কোন দিন রাজি হতেন তো হতেন না। খালাও ম্যারাডোনা ভক্ত তাই জেনে নিতাম ম্যারাডোনার খেলা কোনদিন। খেলা শুরু হতে বরাবরই দেরি হতো তাই কোনদিন ঘুমিয়ে পড়তাম সকালে উঠে খালার কাছে কান্নার করতাম কেন ডাকলেন না।

যেদিন  খেলা থাকতো ঐ দিন টিভি উঠোনে বের করতে হতো ম্যারাডোনার খেলা হলে পরো উঠোনময় তাঁর ভক্তে ছড়াছড়ি। আমি বড়মামার চোখ ফাঁকি দেবার চিন্তাই করতাম বেশি।আমার  নানা  ধার্মীক মানুষ, বড় মামাকে যদিও কিছুই বলতেন না তবে আমি সহ বাকি বাচ্চাদের গল্লা দিয়ে তাড়িয়ে দিতেন আর বলতেন 'শয়তানের বাক্স'(টিভির নাম তাঁর ভাষায়)  দেখো।

সকালে স্কুলে গিয়ে বেঞ্চে ঘুমাতাম হেড স্যারর বেতেরবাড়িতে আমার ঘুম ভাঙতো। ঢোপ টেস্টে ধরা পরে  বিশ্বকাপ থেকে ম্যাররাডোনা বাদ পরে তখন থেকে আমার ১৯৯৪ বিশ্বকাপ দেখাও শেষ। পরে জেনেছিলাম ঔই বছর ব্রাজিল নাকি জিতেছিল।
১৯৯৮ ক্লাস সিক্সে পড়ি। সে বছরে আমাদের এলাকায় বন্যা স্কুল বন্ধ থাকে দীর্ঘদিন সে সময়েও বিশ্বকাপ। ফ্রান্সে হয়েছিল সে খেলা। ফ্রান্স বলতে ঐ এক নাম জিদান। সবাই বলতো জিদান মুসলিম।  কেমন যেন তার প্রতি দুর্বলতা কাজ করতো। ঐ বছর বিশ্বকাপও জিতেছিল ফ্রান্স তখন আমার চোখে নায়ক মানে ঐ জিদান।

২০০২ সালে বিশ্বকাপ বেশ ভাল বুজি। ক্লাস টেনের ছাত্র। বাজারে গিয়ে পত্রিকা পড়তাম বছরের প্রথম থেকেই। পত্রিকায় তখন জিদানের খবরই ছিল প্রধান বিষয়।তখন অবশ্য ক্লাব ফুটবল কি তার পরিচয় জানি এই পত্রিকা পড়ে। জিদান তখন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।জিদানের সাথে যে নামটা বারবার পড়তে হতো তা হল লুইস ফিগো। তাঁর দেশ পর্তুগাল। সে নাকি অসাধারণ খেলে।তবে তাঁর খেলা দেখা কখনো হয় নাই। কারণ এলাকায় স্যাটেলাইট ছিলনা তাই ক্লাব ফুটবল দেখারও সুযোগ ছিলনা। আমি ভাবছিলাম কখন বিশ্বকাপ শুরু হবে আর কখন দেখবো কাঙ্ক্ষিত ফিগোকে।যথারীতি বিশ্বকাপ শুরু হলে জিদানকে নিয়েই ব্যস্থতাই বেশি।চোখ ছিল পর্তুগালের খেলার প্রতিও। প্রথম রাউন্ড থেকেই ফ্রান্স বাদ পড়ে সেনেগালের কাছে পরাজিত হয়ে। যেহেতু ফ্রান্স নেই বিকপ্ল তো আছেই। মানে সেই ফিগো। যেহতু দুজন ক্লাব সতীর্থ। ফিগো সত্যিই দারুণ খেলে।

ওমা দ্বিতীয় রাউন্ড হতে তাঁর ও তাঁর দলের বিদায়। আমার সমর্থন তাদের প্রতিই থাকলো বাকি সময়জুড়ে
।জিদান ও ফিগোর খোঁজ রাখা নিয়মিতই হয়ে পড়ে।
২০০৬ সাল আমার বিশ্বকাপ বলতে পর্তুগালেই আমার পূর্বের সমর্থন অব্যাহতই রাখলাম সবাই হাসি-ঠাট্রা করে আমায়। এবার ফিগো নেই তবুও পর্তুগালই আমার ধ্যান-জ্ঞান।সেই সময় বিশ্বফুটবলে নতুন আবিষ্কার  ক্রিষ্ট্রিয়ানো রোনালদো। ভালই হলো ফিগো নেই তাই এই রোনালদো ই আমার প্রিয় তারকা বনে গেল তাঁর খেলার ক্যারিশমায়। যদিও পর্তুুগাল একা রোনালদোর দল নয় তাই সম্মিলিত দল না হয়ে ওঠায় সে বারও তাদের বিদেয় হয়।কিন্তু রোনালদো আমার ফুটবল আইডল হয়েই থাকলো। তখন ক্লাব ফুটবলে সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি তে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেয় রোনালদো। বাহ্ ভালই জিদান ও ফিগোর দল একই ছিল।

২০১০ বিশ্বকাপ আবার আমার দল পর্তুুগাল এবার কিছু একটা হবে কারণ রোনালদো  তো আছেই। একের পর এক ভাল খেলায় পুরো বিশ্বকে বোধ করছে রোনালদো সে পর্যন্ত সেমি ফাইনালে  গিয়ে আর পারল  না রোনালদো। সে তারকা থেকে মহা তারকায় পরিণত হল। সারা বিশ্বে তাঁর সমর্থক বাড়তে থাকে গাণিতিক হারে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত  হলো কয়েক বার। আমি যেন মহানন্দে থাকি কারণ আমার বিশ্বাসের ঘাড়তি পড়েনি এই ভেবে যে আমি ভুল করিনি।আর

২০১৪ সালে সমর্থন একই দলের প্রতি। দল প্রত্যাশা পূরণ করুক বা না করুক আমার রোনালদো আছে। সে যে আমার আশা ভরসার প্রতিক। সে বছরও  প্রত্যাশা পূরণ হলো না। আমার দল পর্তুগাল আমার চোখে একই অবস্থানেই বিরাজিত।রোনালদো-এর পাশাপাশি এ দলে  এখন তারকা অনেকে যেমন। পেপে, নানি, মটিনহো,ডেকো তবুও কেন পারলো না তার হিসেব কষি না কারণ এ দলে রোনালদো আছে।

২০১৮ আমার আশা পূরণের বিশ্বকাপ হবে আশা করি। আমার দল পর্তুগাল সেই দিনটা আমায় দেবে যা নিন্দুকের মুখে কুলপ মারতে পারি।আমার মহাতারকা রোনালদো সর্বকালের সেরা ফুবলারের উপাধী গ্রহণ করবে তাঁর শৈপ্লিক ফুটবল জাদুতে।প্রথম ম্যাচ তারই ইঙ্গিত।

সব চেয়ে ভাল কিছুর প্রত্যাশা প্রিয় রোনালদো আর পর্তুগাল দলের জন্য।


লেখক: প্রভাষক, বাংলা বিভাগ, দক্ষিণ সুরমা কলেজ, সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন