আজ বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মুনজের অাহমদ চৌধুরী :: খেলা অাসলেই এক অদ্ভুত মাদক। গরীব রাষ্ট্রগুলোর নিপীড়িত জনগনের কষ্ট, বঞ্চনা, বেদনা ভুলিয়ে রাখবার মাদক।
বিশ্বায়নের বাজারে হাজার হাজার কোটি টাকা লগ্নি খেলার মাঠে। ফুটবলের বিশ্বকাপে নিজেদের দেশ নেই। তবু কী বিচিত্র লীলায় সে মাদকে, ক্রীড়ার শৈলীতে মাতোয়ারা দেশ !
অথচ দেশে কোটা নিয়ে ন্যায্য অান্দোলন করছে বাংলাদেশের প্রজন্ম। প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট প্রতিশ্রুতির পরও প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে চলছে লুকোচুরি খেলা। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন নামধারী পেটোয়া বাহিনীর হাতে মার খাচ্ছে ছাত্ররা। পুলিশ প্রহরায় সরকারদলীয় বাহিনীর হাতে এ নির্যাতিত ছাত্রদের বলা হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী- রাজাকার। অান্দোলনকারীদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে সরকারদলের গুন্ডারা। অথচ, এ কোটা অাসলে রাজতন্ত্রের অনুসঙ্গ, গনতন্ত্রের নয়।
বর্তমানে দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর চাকরীতে ৫৫ শতাংশই যায় বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার কোটায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ ছিল বৈষম্যহীনতা ও সাম্য। যেখানে, ৫৫ শতাংশ সরকারী চাকরী একটি বিশেষ শ্রেনীর জন্য সংরক্ষিত, সেখানে কোথায় সাম্য অার বৈষম্যহীনতা ?
তদবির,মামা অার টাকায় বিক্রি হওয়া চাকরীর দেশে, ৫৫ ভাগ কোটা দেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকারদের জন্য অভিশাপ। এতটা অনায্য কোটা দেশের তরুনদের প্রতি, মেধা ও যোগ্যতা প্রতি রাষ্ট্রের ন্যায়হীনতা,অ-ন্যায্যতা । অাজ সে ন্যায্য অান্দোলনে অাজ ছাত্রীদের উপরও হামলে পড়ছে ছাত্রলীগ।
অবশ্য দেশে সরকারের যে কোন অন্যায়ের যৌক্তিক বিরোধীতা করলেও বর্তমান অামলের সবচেয়ে কার্যকর ক্ষমতাশীন প্রতিষ্ঠিত গালি হল ' রাজাকার'।
দেশে-সমাজে বহু সংকট। বহু জনদাবী উপেক্ষিত। সেসব জাতীয়,সামাজিক সংকট অামাদের এক-কাতারে অানতে পারে না। কিন্তু, খুব অদ্ভুতভাবে ফুটবল পারে, ক্রিকেট পারে। কী বিচিত্র। বিনোদনের উপকরন অদ্ভুত ঐক্য গড়তে পারলেও সংকটগুলি পারে না। হয়ত, অামরা সচেতনভাবে সংকট সমাধানের চ্যালেঞ্জগুলোকে এড়িয়ে চলে নাগরিক জীবনের প্রয়োজনীয় ভীরুতায়,ঝামেলা এড়াবার প্রবনতায়।
দুই.
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন, বেগম খালেদা জিয়া অাজ কারাবন্দি গত অাট ফেব্রুয়ারী থেকে কারাবন্দি। কেন তিনি কারাবন্দি এবং কোন কারনে জামিন বঞ্চিত সেটা দেশবাসী জানেন।
যা হোক, গত চার মাসেরও বেশি সময় বাংলাদেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের মূল দূই নেতার একজন কারাগারে। তাঁর দল বিএনপি অাইনী প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশি দেশে-বিদেশে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার দাবীতে নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে অান্দোলন করছে। বেগম জিয়ার অবর্তমানে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হয়েছেন তাঁরই বড় ছেলে তারেক রহমান। তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনবাসী। লন্ডনে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবীতে প্রায় দিনই ওয়েষ্টমিনিষ্টার সহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দল বিএনপি। কিন্তু,গত চার মাসে এসব বিক্ষোভে কখনো রাজপথে দেখা যায় নি তারেক রহমানকে। অথচ, অন্তত লন্ডনের রাজপথে নামলে তো গ্রেফতার হবার, কারাগারে যাবার ভয় নেই তারেক রহমানের।
অনেকে হয়ত বলবেন, লন্ডনে তারেক রহমান তার মা,তাঁর দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবীতে অান্দোলনে নামলেই কি কারামুক্ত হবেন বেগম জিয়া ?
তাহলে অামার প্রশ্ন, লন্ডনের অান্দোলনে যদি বেগম জিয়ার কারামুক্তি অান্দোলন বেগবান না হয়, তাহলে কেন দলটি এখানে লাগাতার কর্মসূচী পালন করছে।
বরং, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতে তারেক রহমান অন্তত লন্ডনের রাজপথে নামলেও দেশের নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হতেন। অন্তত দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে তার কাছে কি অতটুকু্ও প্রত্যাশা করতে পারেন না নেতাকর্মীরা।
তিন
দেশ এখন খেলা নিয়ে মাতোয়ারা। নাগরিক জীবনের নানা সংকট অামাদের ঐক্যবদ্ধ করে না। অথবা ঐক্যবদ্ধ হতে দেয় না অামাদের শাষকেরা। অামরা তাই খেলা দেখার অানন্দ ও ভিনদেশী পতাকার উড্ডয়ন ও সমর্থনের মাতামাতির মহান দায়িত্ববোধ নিয়ে ব্যস্ত থাকি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩ জুলাই ২০১৮/এমএসি/এক