আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আমার বাবা, আমার অহংকার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-০৭ ০০:১৪:৩৮

রোখশানা সিদ্দিকা পান্না :: আমার বাবা, আমার অহংকার। এই যে বুক টানটান করে বেঁচে আছি- এইটা আমার বাবার জন্য। এই যে সবুজ মানচিত্র, পতপত করে উড়ছে লাল সবুজের পতাকা- সেটাও আমার বাবার জন্য। আজ হাজার হাজার বাবার সন্তানরা বুকভরে শ্বাস নিয়ে কথা বলতে পারেন-আমার বাবা দেশের জন্য জীবন বাজি ধরেছিলেন বলে। জীবনের সোনালি সময়টুকু দেশকে দিয়েছেন, দেশের মানুষকে দিয়েছেন। দেশকে মুক্ত করার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। আমরা খুব গর্ব করে বলি আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। কেউ যখন বলে, মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক সাহেবের কন্যা তখন মনের মধ্যে খুব ভালোলাগা কাজ করে।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাড়ি ছাড়েন বাবা। ভারতের বালাটে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে আসেন। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশ নেন।  চোখের সামনে সহযোদ্ধারা যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেও বাবা বিচলিত হননি। যুদ্ধজয়ের নেশায় পেয়ে বসে তাকে। শপথ নেন-দেশকে শত্রæমুক্ত করেই মায়ের কোলে ফিরবেন। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি সংগঠিত করেন। তিনি সুনামগঞ্জ জেলার প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।

আমার বাবা পৃিথবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। বাবা আমার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছেন। সারাজীবন সৎ জীবনযাপন করেছেন।  কোনোদিন অন্যায়ের কাছে মাথানত করতে দেখিনি। তিনি আমাদেরকেও সৎভাবে জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করতেন।

এদেশের মাটি, মানুষ প্রকৃতি ভালোবাসতেন বাবা। কখনো লোভ র্স্পশ করতে পারেনি। আমাদের ভাইবোনদের নিয়ে গর্ব করতেন তিনি। বাবার বিশ্বাস ছিল আমরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দিব না। আমাদের দ্বারা কারো অপকার হবে না। মৃত্যুভয় ছিল না আমার বাবার। অসুস্থ অবস্থায়ও প্রচন্ড বিশ্বাস ছিল। মৃত্যুর আগে আমরা যখন কাঁদছিলাম তখন বাবা বলতেন- মা বুকে সাহস নিয়ে চলবা, তোমাদের তো সব শিখিয়ে দিয়ে গেছি।
   
সত্যিই আমাকে শিখিয়েছেন, সৎভাবে জীবন-যাপন করতে, সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যে থাকতে। শিখিয়েছেন ন্যায়-অন্যায়। বাবা নেই সাত বছর হয়ে গেছে। ২০১১ সালের ৭ জুলাই বাবা আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। কিন্তু বারবার যেন, বাবা সামনে আসছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। বাবা ছাড়া যে আমার স্বপ্নগুলো ঝরা পাতার মতো। সংস্কৃতির প্রতি বাবার আলাদা টান ছিল। বাবা গান করতেন, গান শুনতে ভালোবাসতেন। বইপড়া, ঘুরে বেড়ানো, জগৎকে অন্যরকমভাবে দেখার, জানার যে আকাঙ্খা এসবই বাবার কাছ থেকে পেয়েছি।                     

কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আজও যখন দেখি-স্বাধীনতাবিরোধী চক্র দেশের র্সূয সন্তানদের অবজ্ঞা করে কথা বলে তখন আমাদের রক্তক্ষরণ হয়। চাকরিতে কোটা বাতিলের জন্য যখন তারা রাস্তায় শ্লোগান দেয় তখন আমাদের ভয় হয়- একাত্তরের পাকিস্তানের প্রেতাতœারা আবার জেেগ উঠলো কি না। তবে, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসনিা যখন রাষ্ট ক্ষমতায় তখন, নির্ভয়ে চলি, নিঃসংকোচে হাটি পথ।

আমাদের বাবারা কোটার জন্য যুদ্ধে যান নি। দেশকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করে পরর্বতী প্রজন্মকে একটা স্বাধীন র্সাবভৌম দশে উপহার দেয়ার জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। ১৯৭১ এ কেউ ভবিষ্যৎ সুবিধার জন্য জীবন বাজি রাখেনি। তারাতো সম্মান চাননি। কেউ তো বলেনি আমাদের সন্তানদের কোটা দাও, তবে আজ কেন তাদের এত অপমান সইতে হবে! আমার বাবা ছিলেন আমার আদর্শ। তাই আমি শিক্ষকতা পেশায় কর্মরত। তিনি বলতেন শিক্ষা কোনো দিন শেষ হয় না বরং বাড়ে। আপনার পথ থেকে বিচ্যুত হবো না বাবা। যেখানেই থাকো ভালো থাকো।

লেখক- শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হকের কন্যা

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন