সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-২১ ০০:৪৫:২৮
বিপ্লব কুমার পোদ্দার :: চারিদিকে অস্থিরতা। অবিশ্বাসের মাঝে বাংলাদেশ যেন তার চিরায়ত নিজস্বতা হারিয়ে বিবেকহীন, সন্মানহীন, পারস্পারিক শ্রদ্ধাহীন এক নতুন চেতনার উদ্ভব ঘটাতে বা ঘটতে যাচ্ছে।
সম্ভবত, ১৯৯৯ সালের দিকে অামার এক ঢাকা কলেজের অনুজ অামার কাছে অাসতো। অামরা কয়েকজন মিলে বেশ ভালো সময় কাটতাম। যেখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং সর্বপোরি, সুন্দর অাগামীর বিষয়গুলো অালোচনায় স্থান পেতো। হঠাৎ করে শুনলাম, সে বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়ে মৌখিক পরীক্ষায় অবতীর্ন হল।
এর কিছুদিন পরে শুনলাম সে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে পারেনি। কারন, সে তার বাবার পরিচয়, অথবা কোন রকমের সুপারিশের মতো কোন ক্রাইটেরিয়াতে সে নিজেকে জড়াতে চায়নি।
এখানে বলে রাখা দরকার, তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন এবং তৎকালীন সময়ে একটি জেলার ডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ধন্যবাদ তোমায় অামার প্রিয় অনুজ, অার তোমার শ্রদ্বেয় মুক্তিযোদ্ধা পিতাকে।
সাম্প্রতিককালে কোটা সংস্কার অান্দোলনের বিষয়টিকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেবার জন্য মুক্তিযুদ্ধ নামের মহৎ অধ্যায়টিকে মাঝখানে নিয়ে এসে জাতিকে দুভাগ করে দুটি মহল যে যার অস্তিত্বকে প্রমান ও শক্তিশালী করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
অামি, ভীষণভাবে অাতংকিত এবং শংকিত নিকট ভবিষ্যতে না হলেও, অদুর ভবিষ্যতে এর পরিনাম ভয়াবহ হতে বাধ্য। তখন কিন্তু জাতিকে বিভেদ সৃষ্টিকারী দুটি মহলই দূর থেকে মুচকি হেসে বলবে, নিজের অধিকার নিজে অাদায় করতে না জানলে, গর্ভধারীনি মা যেমন তার শিশু সন্তানকে না কাদঁলে দুধ না নেবার ঘটনার মত সমান।
এবার প্রথমে ক্ষমা নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দুএকটি মতামত রাখতে চাই। যদি অামার এ মতামত জাতির এ বিশেষ প্রয়োজনে কিঞ্চিত ভূমিকা রাখতে পারে, তবে অামি নিজেকে বাংলা মায়ের সুযোগ্য সন্তান হবার চেষ্টা সঠিক পথে অাছে বলে মনে করব।
মুক্তিযুদ্ধ ছিল কিন্তু, বাঙালী জাতির উপর উর্দুভাষী জাতির এক নির্মম অত্যাচার যা নাকি,সর্বশেষ স্থর ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, অামার প্রিয় স্বাধীনতা। এখন দেখা যাক, পাকিস্তানীদের অত্যাচার মূলত কোন জায়গাগুলিতে ছিল। বিশেষ করে সরকারী চাকুরী,অার্মি পুলিশের মতো প্রতিরক্ষা বাহিনীতে বাঙালীদের দুরবীন দিয়ে খুজেঁ দেখবার মতো নামমাত্র সংখ্যার চাকরী অার বাকী পুরোটাই উর্দুভাষী দিয়ে ভরিয়ে দিত। এখন যদি এখানে লক্ষ্য করি, তাহলে খুব সঙ্গত কারনে তখনকার সময়ে উর্দুভাষী কোটা ছিল প্রায় পৌনে ষোল অানা। অার এরকম বৈষম্য অার অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাম্য এবং বৈষম্যহীন সমাজের অাশায় মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে অামরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ।
এখন যদি অামরা, তাদের জন্য বিশেষ কোটা রেখে কোন এক ব্যাবস্থা বহাল রাখতে থাকি প্রজন্মের পর প্রজন্ম, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের অাত্বত্যাগ, বিশ্বাস ও সপ্নের সাথে কি তা বিশ্বাস ঘাতকতা নয়? কারন অামাদের গৌরবের মুক্তিযোদ্ধারা কোটা পাবেন বলে তো মুক্তিযুদ্ধ করেন নি। অার যদি কোন মহল, প্রমান করতে চেষ্টা করেন, যে এটা তাদের অধিকার তাহলে কিন্তু চর দখলের মতো অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখলের মতো অবস্থানকারীকে বিতাড়িত করে নতুন পক্ষের অবস্থান নেয়া। কিন্তু, বিষয়টির কোন প্রকৃত পরিবর্তন হয়নি। হয়েছে শুধু গোষ্ঠির পরিবর্তন। তাই এ বিচারের ভার অাপনাদের হাতেই তুলে দিলাম।
দুই
এবার একটু ঘুরে যাই অাসামের অসহায় মানুষগুলোর দিকে। যে রাষ্টে, জাতে বাঙালী হওয়াটা অধিকার বঞ্চিত শ্রেনীর অারেক নাম। কয়েকদিন অাগের এক সেমিনারে শুনলাম, অাসামের এক বৃদ্ধ অাসামের সাম্প্রতিক এনঅারসি প্রক্রিয়ায় দিশেহারা হয়ে সমাধানের সুত্র খুজে পেয়েছেন নিজের অাত্মহত্যার মধ্য দিয়ে। মনের অজান্তে সাম্প্রতিক বাংলাদেশের অবস্থা এবং অামার বাঙ্গালী জাতির উপর ভারতীয় রক্তচক্ষু সম্পন্ন গোষ্ঠির অত্যাচার অামাকে অস্থির করে তোলে। যেখানে মনের অজান্তে চোখের কোনে কিছু উপলব্ধি হয়। যদিও সাথে সাথে নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করি।
যুক্তরাজ্যে থাকার সুবাদে কিছুটা দেখার এবং জানার সুযোগ হয়েছে, খৃষ্টানদের মধ্যেও মতপার্থক্য রয়েছে। তারা অনেকটা নিজেদের মতো করে তাদের ধর্ম পালন করে। তারপরেও কিন্তু তারা নিজেদের কে ইংলিশ জাতি হিসেবেই যেকোন ইস্যুতে একাত্ম হয় জাতির স্বার্থে। শুধুমাত্র অামরা বাঙ্গালী জাতি ই পারি না।
অাসুন সবাই মিলে বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে নতুন যুগের সুচনা করি। যেখানে, ভারতের অাসামের অসহায় বাঙ্গালীর জন্য বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা, অথবা বিশ্বের যে কোন প্রান্তের বাঙ্গালীরা এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে প্রমান করবে, বাঙ্গালী শ্রেষ্ট জাতি। সময়ের প্রয়োজনে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভূলে এক হতে পারে। এবং বাংলাদেশ তার নিজের সমস্যার সমাধানের জন্য অবাঙ্গালী বা বিদেশী কোন উপদেষ্টার দরকার নাই। তাই শুরু হোক কোন এক শুভ সকালে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব রাগ ক্ষোভ অভিমান প্রতিশোধ ভুলে গিয়ে সাবেক প্রধারমন্ত্রীকে মুক্তি দিয়ে প্রমান করবেন, শুধু ভারতের পাপ্পু তথা রাহুল গান্ধী নরেন্দ্র মোদির উপর অাপ্পু দিয়ে গনতন্ত্রের নতুন ইতিহাস তৈরী করেছেন। শুধু ভারতীয়রা নয়, অামরাও পারি।
সবশেষে বাঙ্গালী হোক পৃথিবীর হোক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি।
লেখকঃ যুক্তরাজ্য প্রবাসী অাইনজীবি, সমাজকর্মী