Sylhet View 24 PRINT

মীরজাফরের বংশধর ইস্কান্দার মির্জা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০৬ ০১:১৩:১৫

অপূর্ব আজাদ :: পাকিস্তানের শাসন ক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর অবৈধ ভূমিকার কুশীলব হিসেবে ভাবা হয় মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজদের পা-চাটা সামরিক অফিসার ছিলেন তিনি। বেসামরিক আমলা হিসেবেও অভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

সবারই জানা, পলাশীর প্রান্তরে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন তার প্রধান সেনাপতি মীরজাফরের কারসাজিতে। নবাব বাহিনীর বড় অংশ যুদ্ধে নির্বিকার ভূমিকা পালন করে ইংরেজের বিরুদ্ধে। ফলে শক্তির বিচারে   ইংরেজের  তুলনায় এগিয়ে থাকলেও নবাব বাহিনীর পরাজয় অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। এ পরাজয়ে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা তার স্বাধীনতা হারায়। বিশাল এ ভূখ-ে ইংরেজ শাসন কায়েম হয়। বিশ্বাসঘাতকতার এনাম হিসেবে মীরজাফর বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তবে তিনি ছিলেন ক্ষমতাহীন। দেশের সম্পদ লুণ্ঠনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সহায়তা করা ছিল তার একমাত্র দায়িত্ব। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই পলাশী যুদ্ধের পর কালক্রমে ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বত্র ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ইস্কান্দার মির্জা ছিলেন মীরজাফরের চতুর্থ অধস্তন বংশধর। মীরজাফর ইস্কান্দার মির্জার দাদার বাবা।
ইস্কান্দার মির্জার জন্ম ১৮৯৯ সালের ১৩ মে। তবে তার শৈশব কেটেছে ভারতের মুম্বাই নগরীতে। মুম্বাইয়ের এলফিনস্টোন কলেজে তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতঃপর ১৯১৮ সালে স্যান্ডহার্স্টে রয়্যাল মিলিটারি একাডেমিতে পড়াশোনা করেন। ১৯২০ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। একই বছর তিনি ক্যামেরোনিয়ান দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নে সংযুক্ত হন। তিনি ১৯২১ সালে কোদাদ-খেল ও ১৯২৪ সালে ওয়াজিরিস্তানে সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা ১৯২৬ সালে সেনাবাহিনী ত্যাগ করে ভারতীয় পলিটিক্যাল সার্ভিসে যোগ দেন। তিনি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে অ্যাবোটাবাদ (১৯২৬-২৮), বান্নু (১৯২৮-৩০), নওশেরা (১৯৩০-৩৩) ও টল্কে (১৯৩৩) এবং ডেপুটি কমিশনার পদে হাজারা (১৯৩৩-৩৬) ও মর্দানে (১৯৩৬-৩৮) দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি খাইবারে (১৯৩৮-৪০) পলিটিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ, পেশোয়ারে ডেপুটি কমিশনার (১৯৪০-৪৫) এবং উড়িষ্যায় পলিটিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ পদে (১৯৪৫-৪৬) কাজ করেন। ইস্কান্দার মির্জা ১৯৪৬ সালে ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে যুগ্মসচিব এবং দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকারের প্রতিরক্ষা সচিব নিযুক্ত হন। পূর্ববাংলা প্রদেশে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল ও গভর্নর জেনারেলের শাসন জারির পর তিনি ’৫৪ সালের ৩০ মে গভর্নর নিযুক্ত হন।

গভর্নর নিযুক্ত হওয়ার পরপরই ইস্কান্দার মির্জা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের অজুহাতে নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি এক মাসের মধ্যে ৩৩ জন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন অধ্যাপকসহ ১ হাজার ৫১ জনকে গ্রেফতার করেন। সভা ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, সংবাদপত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। গভর্নর হাউসকে সুসজ্জিত করেন এবং নাচ-গানসহ সেখানে প্রায় নিয়মিত জাঁকজমকপূর্ণ নৈশভোজের আয়োজন করতেন। ’৫৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন এবং তাকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অভ্যন্তরীণ ও সীমান্ত এলাকাবিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়।

’৫৫ সালের ৫ আগস্ট অসুস্থতার জন্য পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ছুটিতে গেলে তিনি প্রথমে পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল এবং পরে গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন।

পাকিস্তানের ’৫৬ সালের প্রথম সংবিধান অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল পদকে প্রেসিডেন্ট পদে রূপান্তর করা হয় এবং ইস্কান্দার মির্জা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অভিযোগে তিনি ’৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক আইন জারি করেন এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আইয়ুব খানকে সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। এর মাত্র ২০ দিন পর আইয়ুব খান এক রক্তপাতহীন সামরিক ক্যুর মাধ্যমে নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। তিনি ইস্কান্দার মির্জাকে লন্ডনে নির্বাসনে পাঠান। ’৬৯ সালের ১২ নভেম্বর ইস্কান্দার মির্জা লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার তার লাশ পাকিস্তানে সমাহিত করতে অনুমতি দেয়নি। সে কারণে তার মৃতদেহ তেহরানে নিয়ে যাওয়া হয়। ইরানের শাহ একজন রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদায় তার মৃতদেহ রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.