আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-২৭ ২১:৫৬:৪৩

দক্ষিণ এশিয়ায় বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি- বাংলাদেশ। সৃষ্টিকর্তা এই ভূখণ্ডটিতে দান করেছেন দু’ হাত ভরে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এই দেশটির পর্যটন শিল্প। শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয় এই দেশে রয়েছে ঐতিহাসিক অনেক নিদর্শন। প্রায় পাঁচশ ছোট বড় প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে এই দেশে। অপার নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য, প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনসমৃদ্ধ বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিশ্বের ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।

চতুর্দশ শতাব্দীতে মরক্কোর জগদ্বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা নৌকাযোগে সোনারগাঁও থেকে সিলেট যাবার পথে নদীর দু’কূলের অপার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়েছিলেন। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টি নন্দন জীবনাচার বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হিসেবে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটন খাতে যে বিচিত্রতা রয়েছে, তাতে সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

পর্যটন শিল্প এমন একটি শিল্প যেই শিল্পতে প্রাকৃতিক উপকরণ বা ভৌগোলিক, স্থানীয় উপকরণ যত্নের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা যায়। সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যারা সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসবে বা আসতে ইচ্ছুক তাদের সুযোগ সুবিধা। বর্তমান বিশ্বে এ রকম অনেক দেশ আছে যারা পর্যটন শিল্পকে পুঁজি করে পৌঁছেছে উন্নতির অনন্য শিখরে। সেসব দেশের আয়ের সব থেকে বড় উৎস আসে এই পর্যটন খাত থেকে। পৃথিবীর সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি ১১ জনের মধ্যে গড়ে ১ জন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৯৯ দশমিক ১৬ কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে এই পর্যটন শিল্প থেকে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিওটিটিসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ অর্থবছরে দেশের জাতীয় আয়ে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের প্রত্যক্ষ অবদান ছিল ৪২ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ২ শতাংশ।

সৌন্দর্যের দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশকে রূপের রাণী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এদেশে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম নিরবিচ্ছিন্ন প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পৃথিবীর একক বৃহত্তম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন, একই সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকনের স্থান সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা, দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজ রঙের নয়নাভিরাম চারণভূমি সিলেট, পার্বত্যাঞ্চলের বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-আচার সমৃদ্ধ উচ্চ সবুজ বনভূমি ঘেরা চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল, সমৃদ্ধ অতীতের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ইত্যাদি। ফলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে উন্নয়নের সমূহ সম্ভাবনা বিদ্যমান।

দেশের পর্যটন শিল্পকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই খাতে সংযুক্ত করা হবে তথ্য প্রযুক্তি। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। তথ্য প্রযুক্তির ফলে এই খাত আরো বেশি ত্বরান্বিত হবে। এটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই প্রসঙ্গিক। প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে পর্যটকগণ সহজেই গন্তব্য নির্বাচন করতে পারবে। বিমান ও রেলের টিকিট বুকিং, হোটেল বুকিং, মিউজিয়ামের টিকিট কেনাসহ ভ্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা পর্যটকগণ এখন অতিদ্রুত ও সহজেই পাবেন। এটি সম্ভব হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কল্যাণে। এছাড়া এবারের পর্যটন শিল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি’।

বর্তমান সরকার পর্যটন শিল্পের অগ্রগ্রতির জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। এর ফলে দেশে পর্যটন শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বিপুল কর্মসংস্থান। বর্তমানে বিদেশের মতো দেশেও ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়াশুনা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে। ফলে দিন দিন এই খাতে দক্ষ লোকবলের পরিমাণও বাড়ছে। দেশের পোশাক শিল্পের সাথে পর্যটন শিল্পও দেশকে নিয়ে যাবে অনন্য উচ্চতায়।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন