আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কাঁদবে রুপালি গিটার কাঁদবে রুপালি প্রজন্ম

খালেদ মাসুদ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১০-১৯ ১২:১৫:৩৪

খালেদ মাসুদ :: বাংলা ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তি আইয়ুব বাচ্চু চলে গেলেন না ফেরার দেশে।শোকের সাগরে ভাসিয়েছেন হাজারো গুণগ্রাহীদের। সাগরপারের এই অমূল্য ঝিনুক ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ  করেন।তাঁর ডাক নাম ছিল রবিন।

বাংলা ব্যান্ডসংগীতকে তিনি দিয়েছিলেন নবমূল্য।গ্রাম-বাংলার মানুষ থেকে শুরু করে ইট-দালানের নগরীর মানুষও পেয়েছিল তাঁর গান ও সুরে নতুন মাধু্র্যের ছোঁয়া।তিনি গানপ্রিয় সবার কাছে সমান সমাদৃত ছিলেন।

মাত্র ছয়শত টাকা পকেটে নিয়ে জীবনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। নানা উত্থান- পতনের মধ্যে দিয়ে হাতের গিটারকে সঙ্গী করে গানসাধনে ব্রতী হন। গানের জগতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন।একের পর এক জনপ্রিয় ও দর্শকপ্রিয় গানে মুগ্ধ করেন তরুণ সঙ্গীত  প্রেমীদের হৃদয়। তিনি বলেছিলেন"বাংলাদেশের মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং সারা বিশ্বের যারা বাংলা  ভাষাভাষী মানুষ আছেন তাদের গানের মাধ্যমে জাগিয়ে রাখতে চাই। "
 
তিনি তা করতেও পেরেছেন তাঁর গানের মাধ্যমে। আজ হাজারো মঞ্চে তাঁর গানে আগুন ঝড়ে। অনেকে বনে যান তারকা থেকে মহাতারকা। তবে তাঁর শুরুটা এতো মসৃণ ছিল না। গানের জগতে পা রাখেন বন্ধুদের সাথে গিটার হাতে। গড়ে তুলেন ছোটো ছোটো কিছু দল। ১৯৭৮ সালে মঞ্চে আসেন 'ফিলিংস' নামে ব্যান্ডের মাধ্যমে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন হোটেলে গাইতেন ইংরেজি গান। ১৯৮০ সালে যোগদেন 'সোলস' নামের জনপ্রিয় ব্যান্ডে।এই দলে গান করেন প্রায় দশ বছর বাংলাদেশের জনপ্রিয়  ব্যান্ড এলআরবি গঠন করেন ১৯৯১ সালে। এই ব্যান্ড থেকে উপহার দেন অসংখ্য জনপ্রিয়  গান। একে একে ১২টি এ্যালবাম পাওয়া যায় উক্ত ব্যান্ডের কাছ থেকে।তিনি ছিলেন লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল। তাঁর নেতৃত্বগুণে ব্যান্ড পৌছায় অনন্য জনপ্রিয়তায়।তাছাড়া ১৬টি একক এ্যালবামে করেন অনেক গান। মিক্সড এ্যালবাম,দ্বৈত এ্যালবাম,টিভি ও রেডিওতেও তাঁর গানের অন্যরকম কদর। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি একক অাধিপত্য বিস্তার করেন বছরের পর বছর। ক্লাসিক্যাল,লোকসঙ্গীত, আধুনিক গান, বাংলা সিনেমার গানেও তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। বেশ কটি রিয়েলিটি শো-তে বিচারক হিসেবে তুলে এনেছেন অনেক নতুন শিল্পীককে। তাঁর সবচেয়ে বড়ো পরিচয় তিনি গিটারিস্ট। এর বাইরে গান রচনা,সুর সংযোজন,ও সঙ্গীত আয়েজন করেছেন অনেক গানে।গড়ে তুলেছিলেন আপন জগৎ ' এবি কিচেন' স্টুডিও। সেখানেই কাটাতেন বেশীভাগ সময়।

তাঁর তুমুল জনপ্রিয়  গানের মধ্যে রয়েছে, সেই তুমি, রুপালি গিটার,হাসতে দেখো,একচালা টিনেরঘর,বারমাস,ভাঙ্গামন,ফেরারীমন,আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি সহ শত শত গান।তাঁর ' আম্মাজান' গানটি এতো জনপ্রিয় হয়েছিল য, বাংলার এমন কোন ঘর নেই যে এই গান বাজে নি।

গিটার ছিল তাঁর অনন্য সঙ্গী।অনেক স্টেজ প্রোগ্রামে ঘন্টার উপর সময় গিটারের তারে সুর তুলে যেতে পারতেন অনায়াসে।
এমনো কথিত আছে যে তাঁর ড্রামাটিস্ট নাকি তাল মিলিয়ে না বাজাতে পারায় পায়ে পরে মার্জনা চাইতো।
তিনি বলেছিলেন রুপালি গিটার ফেলে একদিন চলে যাবেন। হ্যাঁ তিনি সত্যিই চলে গেলেন তবে আমাদের জন্য অন্য একটি গানে বলে গেছেন 'ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব, করে দাও সব বন্ধ,ভাই ছাড়া তোমার জীবন হয়ে  যাবে অন্ধ।'

কথাগুলোর বিশ্লেষণ আমার কাছে তিনি বুঝিয়েছেন বলে মনে করি কারণ সমাজে চলা না না সংঘাত আজ আমাদের চরম বিপর্যয়ের সম্মূখিন করেছে ।

আমরা যদি তাঁর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই তবে এই মর্মকথা গুলো অনুধাবন যেন করি, তবেই আইয়ুব বাচ্চু আমাদের হৃদয়ে লালিত্য  হবেন। বাংলা গানের অমর এই কিংবদন্তিকে বিনম্র শ্রদ্ধা।

ওপারে ভালো থাকো প্রিয় 'এবি'। তোমার জন্য কাঁদবে রুপালি গিটার কাঁদবে রুপালি প্রজন্ম।

লেখক
সংস্কৃতিকর্মী এবং প্রভাষক,বাংলা বিভাগ
দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ,সিলেট।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন