আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ইং

বিশ্ব আবার স্কুলে যাচ্ছে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-১২-০১ ২০:২২:৩২

হিল্লোল পুরকায়স্থ :: বিশ্ব বিশ্বাস(১৪)। পিতা অমর চাঁন বিশ্বাস। সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরশহরস্থ মজলিশপুর গ্রামে ভাড়াটিয়া বাসায় থাকে বিশ্ব বিশ্বাসের পরিবার। তারা দুই বোন এক ভাই, ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট বিশ্ব বিশ্বাস।

বছর খানেক  আগে সিএনজি অটোরিক্সাতে বড় বোনের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার সময় চরনারচর নামক স্থানে  লেগুনা গাড়ীর সাথে ধাক্কা লেগে ডোবায়  পরে যায় বিশ্ব। সেই দূর্ঘটনায় তার পা হয়ে যায় ক্ষতবিক্ষত। বোনের বাড়িতে আর যাওয়া হয়না। দিরাই সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে রেফার করে সিলেটে।

বিশ্বের দরিদ্র পিতা তাকে ভর্তি করান ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসা চলাকালীন সময় বিশ্ব বিশ্বাসের পায়ে পচন ধরে যায়, পায়ের ভাঙা অংশ থেকে মাংস খসে পড়ার উপক্রম। এদিকে দিনমজুর পিতা অমর চান বিশ্বাস এক মাত্র ছেলের চিকিৎসার টাকা যোগাড় করতে পারছিলেন না। বিশ্বের সার্জারির প্রয়োজন ছিল, পাশাপাশি দামি
ওষধ যা বিশ্বের পিতার সামর্থের বাহিরে।

দরিদ্র দিনমজুর  পিতা সন্তানের চিকিৎসার জন্য ছবি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে কিন্তু তাতে যা উঠে তা দিয়ে খাবার কিনবেন না, পুত্রের চিকিৎসা করাবেন।

সেই সময় আমার সাথে সাক্ষাতে তিনি সব খুলে বলেন। উনার চোখ মুখে দেখতে পাই সন্তানের জন্য দরিদ্র পিতার হাহাকার। গৌতম দাস কে সাথে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেই বিশ্বের জন্য কিছু একটা করার। পরিচিতদেরকে বিশ্বের সাহায্যে  এগিয়ে আসতে বলি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্বের চিকিৎসায় সাহায্য চেয়ে স্ট্যাটাস লিখি। তারপর থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে সাড়া আসতে থাকে বিশ্বের চিকিৎসায় এগিয়ে আসেন শাহজাহান সিরাজ, প্রবাসী শাহ কামাল, মাইদুল মিয়া ।

স্ট্যাটাসটি নজরে পড়ে শম্ভু নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের। তার সূত্র ধরে অনলাইন ভিত্তিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন বুস্টার্স বিশ্ব'র চিকিৎসার দায়িত্ব গ্রহন করে।

এরপর থেকে বিশ্বকে রক্ষার প্রাণপণ লড়াই শুরু হয়। বিভিন্ন সময় রক্ত দেওয়া থেকে শুরু করে এক বছরে পর পর ৯টি অপারেশন করা হয়। বছর ব্যাপি চিকিৎসায়  বিশ্বের পা অনেকটা ভালো হয়। লক্ষাধিক টাকা খরচ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দিয়ে যায় বুস্টার্স সংগঠনের সদস্যরা।

বিশ্ব এখন অনেকটা সুস্হ হয়ে উঠেছে, লাঠি দিয়ে হাঁটতেও পারছে। বিশ্ব'র পিতার সাথে কথা বলে জেনেছি বিশ্ব এখন ৭ম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছে। স্বপ্ন পূরনের প্রত্যাশায় সামনের দিকে এগিয়ে যাক বিশ্ব এমনটাই কামনা আমাদের।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন