সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১২-১৪ ১০:৩১:৩৭
কামাল হোসাইন নাজিম :: ১৪ ডিসেম্বর পৃথিবীর ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদতে একশ্রেণির দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের নিশ্চিহ্ন করার এই নীলনকশা প্রণয়ন করে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। পাকবাহিনীর অস্ত্র সহায়তা নিয়ে তাদেরই ছত্রছায়ায় আধাসামরিক বাহিনী আলবদরের ক্যাডাররা এই বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড বলতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টুকুতেই পাকিস্তানী হানাদারবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করাকে বুঝায়। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দূর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত। বন্দী অবস্থায় বুদ্ধিজীবীদের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাদের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে পাওয়া যায়। অনেকের লাশ শনাক্তও করা যায়নি, পাওয়াও যায়নি বহু লাশ। ১৯৭১ এর ১৪ ডিসেম্বরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালিত হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বুদ্ধিজীবী হত্যার স্মরণে বাংলাদেশের ঢাকায় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ স্থাপন করা হয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীর একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল এদেরকে হত্যা করলে বাংলাদেশ স্বাধীন হবেনা কারণ যুদ্ধ পরিচালনা করতে হলে অবশ্য মেধা দিয়ে কাজ করতে হয় এর জন্য বাঙ্গালী জাতিকে মেধা শূন্য করার প্রয়োজন মনে করে ১৪ তারিখে এই নরহত্যা গঠিয়ে সকল বুদ্ধিজীবিকে হত্যা করেছিল।
১৯৭১ বুদ্ধিজীবিদের হত্যার মাধ্যমে এই দেশ আজ পর্যন্ত বুদ্ধিজীবির যে ঘাঠতি তা পূরণ করতে পারিনি। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার ৪৮ বছর হল কিন্তু সেই বুদ্ধিজীবিদের দেখা আজও মানুষ পায়নি তবে হে পেয়েছে অনেক বুদ্ধিজীবির দেখা কুবুদ্ধিজীবি সুবুদ্ধিজীবির না যারা শুধু কিনা বাংলাদেশকে একটি সংকটের দেশে পরিনত করছে এবং সংকট গুলাকে শুধু ধীর্ঘ মেয়াদী করতে জানে শেষ করতে না।
দুঃখ জনক হলেও সত্য আমরা এত হতভাগ্য জাতি যে আজ ৪৮তম বুদ্ধিজীবি দিবস পালন করলাম কিন্তু ১৯৭১ সালে এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী আমাদের বুদ্ধিজীবি কত জন কে হত্যা করেছে তার প্রকৃত সংখ্যা ও সঠিক ইতিহাস আজও আমরা উদ্ধার করতে পারিনি। তবে বিভিন্ন তথ্যমতে এবং ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় যে বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে শহীদ হয়েছিলেন শিক্ষাবিদ ৯৯১ জন,সংবাদিক ১৩ জন,চিকিৎসক ৪৯ জন, আইনজীবি ৪২জন, এবং শিল্পী,সাহিত্যিক ও প্রকৌশলী ১৬ জন এছাড়া অসংখ্য অগনিত বুদ্ধিজীবি। যাদের কে হত্যা করা হয়েছিল মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ ভট্টাচার্য, শহীদুল্লাহ কায়সার, আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, মনিরুজ্জামান, আনোয়ার পাশা, নিজাম উদ্দিন আহমেদ, রশিদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, ডা. আলীম উদ্দিন, ডা. ফজলে রাব্বি, নাজমুল হক, খন্দকার আবু তালেব, ডা. আমির উদ্দিন, সাইদুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন অধ্যাপক মীর আবদুল কাইয়ুম, হবিবর রহমান, সুখরঞ্জন সমাদ্দার, ড. আবুল কালাম আজাদ। সাংবাদিক ছিলেন সিরাজুদ্দীন হোসেন, খোন্দকার আবু তালেব, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, শহীদ সাবের, শেখ আবদুল মান্নান (লাডু), সৈয়দ নজমুল হক, এম আখতার, আবুল বাসার, চিশতী হেলালুর রহমান, শিবসদন চক্রবর্তী, সেলিনা পারভীন। এছাড়া শিল্পী আলতাফ মাহমুদ, সাহিত্যিক পূর্ণেন্দু দস্তিদার, মেহেরুন্নেসা, দানবীর রণদাপ্রসাদ সাহাসহ আরো অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এছাড়া আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে তুলে নিয়ে যায় হানাদাররা। চালানো হয় পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ।
আজ বাংলাদেশের করুন অবস্থা দেখে মনে হয় যদি ঐ বুদ্ধিজীবিরা বেচে থাকতেন তা হলে বাংলাদেশ আরও অনেক এগিয়ে যেত। বাংলাদেশের এই করুন অবস্থায় সময় ও বুদ্ধিজীবি দিবসে শ্রদ্ধার সাথে স্বরন করছি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ হওয়া বাংলাদেশের সূর্যসন্তান যাদের আত্বদানের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি বিশ্বের একটি মানচিত্র ও স্বাধীন দেশ।
লেখক : কামাল হোসাইন নাজিম
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ ডিসেম্বর ২০১৯/মিআচৌ